এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির এ প্রেসিডেন্ট টেলিভিশনে দেওয়া এক দীর্ঘ ভাষণে এ অঙ্গীকার জানান।
Published : 12 Dec 2024, 02:05 PM
পার্লামেন্টে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসনের মুখোমুখি হতে যাওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল ‘শেষ পর্যন্ত লড়াই’ করার অঙ্গীকার করেছেন।
বৃহস্পতিবার এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির এ নেতা টেলিভিশনে দেওয়া এক দীর্ঘ ভাষণে এ অঙ্গীকার জানান।
ইউনের স্বল্পস্থায়ী সামরিক আইন জারিকে কেন্দ্র বিরোধী দল তাকে অভিশংসনের মুখোমুখি করার আরেকটি উদ্যোগ নিয়েছে। শনিবার পার্লামেন্টে এই প্রস্তাব তোলার সম্ভাবনা আছে। ইউনের নিজ দলের কিছু আইনপ্রণেতাও অভিশংসন প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানাবেন বলে জানিয়েছেন।
টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে ইউন অভিযোগ করে বলেছেন, উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়ার নির্বাচন কমিশনকে হ্যাক করেছে। এপ্রিলে হওয়া নির্বাচনে তার দলের বিপর্যয়কর ফলাফল নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
ইউন আশা করছেন, তার রাজনৈতিক মিত্ররা তার পক্ষে সমর্থন জানাবে। কিন্তু তার এ জ্বালাময়ী ভাষণের পর সেই সম্ভাবনা কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ তার ক্ষমতাসীন দল পিপলস পাওয়ার পার্টি (পিপিপি) নেতা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, ইউনের পদত্যাগ করার বা পার্লামেন্টের মাধ্যমে তাকে অভিশংসন করার সময় এসে গেছে।
ইউন বলেছেন, বিরোধীদল গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টায় ‘পাগলের মতো তলোয়ার নাচ নাচছে’।
সামরিক বাহিনীকে ব্যাপক ক্ষমতা তুলে দেওয়ার আকস্মিক উদ্যোগ নেওয়ার নয় দিন পর তিনি বলেন, “তারা আমাকে অভিশংসিত করুক অথবা আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করুক, আমি শেষ পর্যন্ত লড়াই করবো, আমি সরাসরি এর মোকাবেলা করবো।”
শনিবার তিনি ক্ষমা চাওয়ার এবং তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিজ দলের রাজনৈতিক মিত্রদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর থেকে প্রথম মন্তব্যে এসব কথাই বলেছেন তিনি।
গত শনিবার ইউন বিরোধীদল নিয়ন্ত্রিত পার্লামেন্টের অভিশংসন উদ্যোগ থেকে রক্ষা পান। তার ক্ষমতাসীন দল পিপিপি আইনপ্রণেতারা পার্লামেন্টের ওই অধিবেশন বয়কট করাতে বেঁচে যান। কিন্তু আগামী শনিবারের অভিশংসন উদ্যোগ থেকে ইউন রক্ষা নাও পেতে পারেন।
পিপিপি নেতা হান ডং-হুন বৃহস্পতিবার দলের সদস্যদের এক বৈঠকে বলেছেন, প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করতে বিরোধীদের সঙ্গে তাদের যোগ দেওয়া উচিত।
টেলিভিশনে ইউনের ভাষণ দেখার পর তিনি বলেন, “অভিশংসনের জন্য ভোট দেওয়াকে পার্টির নীতি হিসেবে নেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিচ্ছি আমি। তার ভাষণ ছিল বিদ্রোহের কথা স্বীকার করার মতো।”
বৃহস্পতিবার পিপিপির আরেকজন আইনপ্রণেতা প্রকাশ্যে অভিশংসনের পক্ষে তার সমর্থন ঘোষণা করেছেন। তাকে নিয়ে ক্ষমতাসীন দল থেকে অভিশংসনের পক্ষে সমর্থন জানানো আইনপ্রণেতার সংখ্যা সাতজনে দাঁড়িয়েছে বলে ওয়াইটিএন টেলিভিশন জানিয়েছে, খবর রয়টার্সের।
ইউনকে অভিশংসিত করতে পার্লামেন্টের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন দরকার হবে। এক্ষেত্রে বিরোধীদলের আইনপ্রণেতার পাশাপাশি পিপিপির অন্তত আটজন সদস্যের সমর্থন দরকার হবে।
তবে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে এসব বিভক্তি সত্ত্বেও ইউন পিপিপির বহু আইনপ্রণেতার সমর্থন পাবেন।
এই বিভক্তিকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার রাজনৈতিভাবে প্রেসিডেন্ট ইউনের ঘনিষ্ঠ এক প্রবীণ আইনপ্রণেতাকে পার্লামেন্টে দলীয় প্রধান হিসেবে বেছে নিয়েছে পিপিপি। দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতার ভোটে নেতা নির্বাচিত হয়েছেন কেওয়েন সেওং-ডং। তিনি জানিয়েছেন, দলের আনুষ্ঠানিক নীতি হবে অভিশংসনের বিরোধিতা করা।
অভিশংসনের ভোট ইউনের প্রেসিডেন্সির বৈধতা নির্ধারণ করতে এই মামলাকে সাংবিধানিক আদালতে পাঠাতে পারে আর এই প্রক্রিয়া দক্ষিণ কোরিয়াকে প্রায় ছয় মাসের জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ঠেলে দিতে পারে।
৩ ডিসেম্বর সামরিক আইন জারির জন্য প্রেসিডেন্ট ইউনের বিরুদ্ধে ওঠা বিদ্রোহের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্তও চালানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট দপ্তরে পুলিশ, আত্মহত্যার চেষ্টা সাবেক