ট্রাম্প ও হ্যারিসের এই বিতর্ককে ভোটাররা কেমন দেখতে চায় সে বিষয়ে তারা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। বলেছে- তারা রাজনৈতিক ঝগড়া কম আর নীতিমালা সম্পর্কিত কথা বেশি শুনতে চায়।
Published : 10 Sep 2024, 02:55 PM
যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে সর্বশেষ টেলিভিশন বিতর্কে দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী একে অপরকে বাক্যবাণে ঘায়েল করেছিলেন, ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছিলেন। সেই বিতর্ক পাল্টে দিয়েছে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনি দৌড়ের দৃশ্যপট।
বিতর্কে ট্রাম্পের বিপক্ষে শোচনীয় পরাজয় মাথায় নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। তার জায়গায় এসেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রথম সরাসরি টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নিতে চলেছেন কমলা হ্যারিস। এ বিতর্ক দুই দলের জন্যই ভোটারদের সামনে তাদের করণীয় বিভিন্ন বিষয়, অর্থাৎ নিজ নিজ নীতি তুলে ধরার একটি সুযোগ।
ট্রাম্প ও হ্যারিসের এই বিতর্ককে ভোটাররা কেমন দেখতে চায় তা জানতে চেয়ে বিবিসি গোটা রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে। তাতে ভোটাররা স্পষ্ট বার্তা দিয়ে বলেছে, তারা রাজনৈতিক ঝগড়া কম দেখতে চায়; আর নীতিমালা বিষয়ক বক্তব্য বেশি শুনতে চায়।
ট্রাম্প-হ্যারিস বিতর্ককে ঘিরে এইসব ভোটারদের সাতজন কী আশা করছেন তা তুলে ধরেছে বিবিসি:
রবার্ট অলিভার (রিপাবলিকান পার্টি)
উটাহ রাজ্যের বাসিন্দা ২৭ বছরের তরুণ রবার্ট অলিভার একজন রিপাবলিকান। কিন্তু ২০২০ সালে তিনি জো বাইডেনকে ভোট দিয়েছিলেন। এ বছর নভেম্বরে ফের ট্রাম্পের পক্ষে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি। অলিভার বলেন, তারা কী করতে চলেছেন আমি সেটি দেখতে আগ্রহী।
কমলা হ্যারিস সম্প্রতি খুব বেশি সাক্ষাৎকার দেননি এবং ট্রাম্পের বিপরীতে তার অবস্থান অনেকটা দেবে আছে উল্লেখ করে অলিভার বলেন, এবার ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তবে বিতর্কে হ্যারিস কেমন করেন, তাও দেখতে চান।
“আমি দেখতে চাই, তিনি (হ্যারিস) প্রস্তুতি ছাড়া এবং প্রম্পটারের কাছ থেকে পড়তে পারা ছাড়া বিতর্কে কেমন করেন, ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে তিনি কত দ্রুত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন,” বলেন অলিভার।
ড্যানিয়েল ক্রামরিন (ডেমোক্র্যাটিক পার্টি):
কলোরাডোর বাসিন্দা ২৮ বছরের ড্যানিয়েল ক্রামরিন গতবার জো বাইডেনকে ভোট দিয়েছিলেন। তিনি অধীর আগ্রহ নিয়ে ট্রাম্প-হ্যারিস বিতর্ক দেখার অপেক্ষায় আছেন।
এই যুবক বলেন, “আমার মনে হচ্ছে, কী হতে চলেছে আমি তা জানি। আমি জানি, কমলা হ্যারিস দক্ষ বিতার্কিক। আমি এখনও চার বছর আগে তার এবং মাইক পেন্সের বিতর্কের কথা মনে করতে পারি।
“আমি ট্রাম্পের সঙ্গে তার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখার অপেক্ষায় আছি। মঞ্চে কেউ একজন সত্যিকারের বিরোধী শক্তি হয়ে তাকে (ট্রাম্প) সরাসরি পাল্টা জবাব দিতে পারে, এমন কাউকে পেয়ে আমি খুশি।”
বিতর্কে ট্রাম্পের দ্রুত কথা বলা এবং একসঙ্গে অনেক কথা অনেক দ্রুত বলে ফেলার বিষয়টিকে হ্যারিসের জন্য সবচেয়ে বড় ফাঁদ বলে মনে করেন ক্রামরিন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের বলা কথার মধ্যে কথার মধ্যে জড়িয়ে পড়া সহজ। আশা করি, কমলা এর মধ্যে ডুবে যাবেন না। ট্রাম্পের মুখোমুখি হয়েও তিনি নিজের আশাবাদী ও ইতিবাচক বার্তা ধরে রাখতে পারবেন।”
জেসি মাজ্জোনি (স্বতন্ত্র)
দোদুল্যমান রাজ্য পেনসিলভেইনিয়ার বাসিন্দা স্বতন্ত্র ভোটার জেসি মাজ্জোনি। ২০২০ সালে জো বাইডেনকে সমর্থন দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার তৃতীয় পক্ষকে ভোট দেওয়ার কথা ভাবছেন।
৩১ বছর বয়সী এই নারী বলেন, “সত্যি বলতে, এ বিতর্ক দেখার কোনও পরিকল্পনা আমার নেই। অন্তত সরাসরি তো নয়ই। দুই প্রার্থীর কাউকে নিয়েই আমার আগ্রহ নেই।
“গত কয়েকটি নির্বাচনে আমি যেসব বিতর্ক দেখেছি- সেগুলো ছিল কেবল কারও চিৎকার করে কথা বলতে পারা আর কোনও একটা কৌতুক করে সংবাদ শিরোনাম হওয়ার মঞ্চ। বস্তুনিষ্ঠ কোনও কথা আমি শুনিনি।”
মিস্টি ড্যানিস (রিপাবলিকান পার্টি)
ক্যালিফোর্নিয়ার রিপাবলিকান ভোটার মিস্টি ড্যানিস ২০১৬ ও ২০২০ সালে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন। ফের তাকেই ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তবে তিনি দুই প্রার্থীর কাছ থেকে তাদের নীতিমালার বিষয়ে আরও বক্তব্য শুনতে চান।
৪৫ বছরের এই নারী বলেন, “আমি চাই, এ বিতর্ক একটি চাকরির সাক্ষাৎকারের মতো হোক, যেন আমি একজনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিচ্ছি।
“প্রতিদিন আমি দারিদ্র্যসীমায় থাকা লোকজনের সঙ্গে কথা বলি। মনে হয় বিষয়টি আরও খারাপ হচ্ছে। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ট্রাম্পের আমলে অর্থনীতি বেশি ভাল ছিল। এ বিষয়ে হ্যারিস কী করতে চলেছেন তা শুনতে চাই।
“আমি বেশির ভাগ সময় তার আবেগী কথাই শুনেছি। আপনি যুক্তরাষ্ট্রকে কেবল আবেগ দিয়ে পরিচালনা করতে পারবেন না।” এই নারী চান বিতর্কে দুই দলই তাদের রাজনৈতিক নীতি ভোটারদের সামনে তুলে ধরুক।
কনোর লোগান (রিপাবলিকান পার্টি):
ওয়াশিংটনের বাসিন্দা রিপাবলিকান ভোটার কনোর লোগান ২০২০ সালে ট্রাম্পকে ভোট দেন। সেটি ছিল তার প্রথম ভোট। তিনি মনে করেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে দেশের অর্থনীতি ভাল ছিল।
কনোর বলেন, “আমি জানতে চাই, আমাদের অর্থনীতি কবে আবার সঠিক পথে ফিরবে। অবৈধ অভিবাসী কমাতে দুই প্রার্থীর কী পরিকল্পনা, সেটিও জানতে চাই।
এই সমস্ত পরিকল্পনা নেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্প বেশি ভাল করছেন, আর কমলা হ্যারিস তার দৃষ্টিকোণ গোপন করছেন অথবা তা থেকে সরে গেছেন বলে মনে করেন কোনার।
ফেলিসিটি ফিলগেট (স্বতন্ত্র)
ফেলিসিটি ফিলগেট ২০২০ সালে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি স্বতন্ত্র এই নারী ভোটার।
নিউহ্যাম্পশায়ারের এই বাসিন্দা বলেন, “আমি খুশি, আমরা কমলা হ্যারিসকে এই বিতর্কে পাচ্ছি এবং সত্যিই খুশি যে, তারা একজন কথা বলার সময় অন্যজনের মাইক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যাতে কেউ কারও কথায় বাধা না সৃষ্টি করতে পারেন।
বিতর্কে প্রার্থীরা একে অপরকে খুবই ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে কথা বলেন বলে মনে করেন ৩৩ বছর বয়সী এই নারী। তিনি বলেন, “এমনকি সর্বশেষ বিতর্কেও এমন হয়েছে।
“আমার মনে হয়েছিল, তারা কি আদৌ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন? নাকি একজন অন্যজনকে কী বলেছেন তা নিয়ে দুইজন নিজ নিজ পক্ষ সমর্থন করছেন? আমরা যা শুনতে চেয়েছি সেটি না করে তারা কেবল একে অপরকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে যাচ্ছিলেন।”
ডগলাস স্টুয়ার্ট (ডেমোক্র্যাটিক পার্টি)
জর্জিয়ার তরুণ ডেমোক্র্যাট ডগলাস স্টুয়ার্ট বাইডেনের সরে দাঁড়ানোতে খুশি। তিনি বলেন, তার দলের হাতে ট্রাম্পকে হারানোর জন্য এখন আগের চেয়ে ভাল হাতিয়ার আছে।
স্টুয়ার্ট ট্রাম্প-হ্যারিস বিতর্ক দেখবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, ট্রাম্পের বিপক্ষে বাইডেন একেবারেই ভাল করতে পারেননি। ট্রাম্পের বিপক্ষে নতুন প্রার্থী হ্যারিস কেমনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেন, কীভাবে কথা চালিয়ে যান, সেটি দেখতে তাই তিনি আরও বেশি উৎসুক।
স্টুয়ার্ট বলেন, “আমার কাছে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিষয়ক নীতিমালা জানা গুরুত্বপূর্ণ। তাই হ্যারিসের কাছ থেকে এ বিষয়ে কী শুনতে পাব সেটি নিয়ে আমি কৌতূহলী।”