প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উদ্বাস্তু পরিবারগুলোর মধ্যে ত্রাণ বিতরণের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত একটি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কলেজে হামলাটি চালানো হয়েছে।
Published : 24 Jun 2024, 02:23 PM
ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত একটি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কলেজে ইসরায়েলের বিমান হামলায় আট ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
তারা জানান, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কলেজটি জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালনা করত, সেটি এখন উদ্বাস্তু পরিবারগুলোর মধ্যে ত্রাণ বিতরণের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, রোববার বিমান থেকে ছোড়া বোমা এর একটি অংশে আঘাত হেনেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন মোহাম্মদ তাফেশ বলেছেন, “কিছু মানুষ কুপন নিতে এখানে আসছিলেন আর অন্যরা বাস্তুচ্যুত হয়ে এখানে আশ্রয় নিয়ে ছিল। কয়েকজন পানি ভরছিলেন আর অন্যরা কুপন নিচ্ছিল আর এ সময় হঠাৎ করে আমরা কিছু পড়ার শব্দ শুনলাম। আমরা দৌঁড়ে গিয়ে দেখি যারা পানি ভরছিল তারা পড়ে আছে।”
রয়টার্সের একজন আলোকচিত্র সাংবাদিক দেখেছেন, একটি নিচু ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে আছে আর রাস্তার পাশে কম্বল দিয়ে মুড়ে মৃতদেহগুলো রাখা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে।
তাফেশ বলেন, “আমরা শহীদদের টেনে বের করি (ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে), এদের মধ্যে একজন কোমলপানীয় বিক্রি করতেন আর আরেকজন পেস্ট্রি বিক্রি করতেন, বাকি অন্যরা কুপন বিতরণ করতেন অথবা নিতে এসেছিলেন। সেখানে চার থেকে পাঁচজন শহীদ আর ১০ জন আহত ছিল। খোদাকে ধন্যবাদ যে আহতদের অবস্থা ভাল আছে।”
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, স্থাপনাটি আগে ইউএনআরডব্লিউএ এর সদরদপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এখন হামাস ও ইসলামিক জিহাদের ‘জঙ্গিরা’ ব্যবহার করতো।
বেসামরিকদের ক্ষতির ঝুঁকি হ্রাস করতে আঘাত হানার আগে পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছে তারা।
এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, “আজ সকালে (রোববার) ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর (আইএএফ) যুদ্ধবিমানগুলো ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) ও ইসরায়েলি সিকিউরিটিজ অথরিটির (আইএসএ) গোয়েন্দা নিদের্শনায় সন্ত্রাসীদের অবকাঠামোতে আঘাত হানে, যেখন থেকে হামাস ও ইসলামিক জিহাদের সন্ত্রাসীরা তৎপরতা চালাচ্ছিল।
“হামাস যে বেসামরিক অবকাঠামোগুলো পদ্ধতিগতভাবে অপব্যবহার করছে ও বেসামরিক জনগণকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে এটি তার আরেকটি উদাহরণ।”
বেসামরিকদের মানব ঢাল ও বেসামরিক স্থাপনাগুলোকে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ইসরায়েলি অভিযোগ অস্বীকার করেছে হামাস।
ইউএনআরডব্লিউএ-র যোগাযোগ বিষয়ক প্রধান জুলিয়েট টোমা জানিয়েছেন, সংস্থাটি প্রকাশিত হামলার বিষয়ে আরও তথ্য জানানোর আগে বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছে।
তিনি বলেন, “এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আমাদের প্রায় ১৯০টি ভবনে আঘাত হানা হয়েছে বলে রেকর্ড করেছি আমরা। এগুলো গাজায় আমাদের ভবনগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ।”
গাজা যুদ্ধে এ পর্যন্ত ইউএনআরডব্লিউএ-র ১৯৩ জন দলীয় সদস্য নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
রয়টার্স জানিয়েছে, মধ্যরাতের পর গাজা সিটির একটি ক্লিনিকে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি পরিষেবার পরিচালক হানি আল-জাফারভি ও আরেকজন চিকিৎসা কর্মী নিহত হন।
এ হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
আট মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজা ধ্বংসস্তূপে পারিণত হয়েছে এবং এ পর্যন্ত ৩৭৬০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
আরও পড়ুন:
হিজবুল্লাহর হামলা সামলাতে পারবে না ইসরায়েলের আয়রন ডোম: শঙ্কা যুক্তরাষ্ট্রের