সবমিলিয়ে তাকে ১৪ দিনের রিমান্ডে পেল পুলিশ।
Published : 22 Apr 2025, 04:40 PM
রূপবতীদের দিয়ে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের প্রেমের ফাঁদে ফেলার ধানমন্ডি থানার মামলায় জনশক্তি রপ্তানিকারক সানজানা ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার দেওয়ান সমিরকে ফের চার দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম এম এ আজহারুল ইসলাম।
এর আগে গত ১৭ এপ্রিল একই মামলায় সমিরের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। তারও আগে ১২ এপ্রিল একই ধরনের অভিযোগে ভাটারা থানার মামলায় তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পেয়েছিল পুলিশ। সবমিলিয়ে দুই মামলায় তাকে ১৪ দিনের রিমান্ডে পেল পুলিশ।
আগের রিমান্ড শেষে সমিরকে মঙ্গলবার সমিরকে আদালতে হাজির করা হয়। তার ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আক্তার মোর্শেদ। এ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ওমর ফারুক ফারুকী।
তিনি বলেন, “এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে দেশে আগত রাষ্ট্রদূতদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে। তাদের উদ্দেশ্য- রাষ্ট্রদূতদের কাছে দেশের ইমেজ নষ্ট করা। এর পেছনে দেশীয় ছাড়াও আন্তর্জাতিক চক্র কাজ করছে। এ দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দেশের শ্রমবাজার নষ্ট করার চক্রান্ত করছে।”
রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে সমিরের জামিন চান শহিদুল ইসলামসহ কয়েকজন আইনজীবী।
শুনানিতে এক আইনজীবী বলেন, “মেঘনার সাথে সমিরের কোনো সম্পর্ক নেই। সমির একজন রেমিটেন্স যোদ্ধা। দেশের স্বার্থে তিনি কাজ করছেন। কিন্তু তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। মেঘনা আলমের সাথে কোন রাষ্ট্রদূতের সাথে সম্পর্ক, সেটার জন্য কি সমির দায়ী? পেপার পত্রিকায় মেঘনার সাথে সমিরের বিভিন্ন সম্পর্ক উল্লেখ করা হচ্ছে। কিন্তু এগুলো সব মিথ্যা।
“আর এ মামলাটি করাই তো সঠিক নয়। মামলা করবেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি অর্থাৎ রাষ্ট্রদূত। কিন্তু কে মামলাটি করেছে। এ মামলায় চলে না। রিমান্ড তো পরের কথা। শেকড়বিহীন মামলা। ট্রায়াল হলে তিনি খালাস পাবেন।”
তিনি বলেন, “মেঘনাকে সবাই চেনে। ফটো সুন্দরী। কথা বলার সুযোগ পেলে তো সবাই বলবে। দেওয়ার সমিরও বলেছেন। হয়রানি করার জন্য মামলা দেওয়া হয়েছে। তার রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থনা করছি।”
শুনানি শেষে বিচারক সমিরের ৪ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, মেঘনা আলম, দেওয়ান সমিরসহ অচেনা দুই-তিনজন একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা রূপবতীদের দিয়ে ভিনদেশি কূটনীতিক বা প্রতিনিধি এবং দেশের ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করে আসছে। দেওয়ান সমির কাওয়াই গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সানজানা ইন্টারন্যাশনালের মালিক। এর আগে মিরাই ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ছিল তার।
এজাহার অনুযায়ী, সমির নিজের প্রতিষ্ঠানে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে রূপবতীদের নিয়োগ দিতেন। তাদেরকে দিয়ে বিদেশি কূটনীতিক ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলতেন। এরপর ব্ল্যাকমেইল করে বড় অংকের চাঁদা আদায় করা হতো।
এ মামলার আসামি মডেল ও মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেঘনা আলম ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর মিস আর্থ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন। গত ৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়।
আটকের আগে তিনি ফেইসবুক লাইভে এসে বাসার ‘দরজা ভেঙে পুলিশ পরিচয়ধারীরা’ ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন। তাকে আটক করার পরপরই লাইভটি বন্ধ হয়ে যায়।
পরদিন ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করা হলে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মেঘনাকে ৩০ দিনের আটকাদেশ দেন বিচারক।
মডেল মেঘনাকে আটকের প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনার মধ্যে ১২ এপ্রিল ডিএমপির ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে ১৭ এপ্রিল ধানমন্ডি থানার ‘হানি ট্র্যাপিংয়ের’ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
‘ধৈর্য ধরুন, সঠিক ফল আসবে’
আদালতের আদেশের পর সমিরকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে তিনি বলেন, “আমি এ মামলার সাথে জড়িত না। আত্মীয়স্বজনদের বলেছি, মেঘনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। আমার কোনো এ জাতীয় চক্রান্ত নাই। আমি একজন রেমিটেন্স যোদ্ধা। আমি জাপানে ছিলাম।”
সাংবাদিকদের উদ্দেশে সমির বলেন, “আপনারা ধৈর্য ধরুন, সঠিক ফল আসবে। আমি যদি অন্যায় করে থাকি, রাষ্ট্র থেকে যে শাস্তি দেয় মেনে নেব।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মেঘনা আদালতে বলেছে, তার একটা মাত্র পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক; তিনি হলেন সৌদি রাষ্ট্রদূত। আমি তার বয়ফ্রেন্ড না।”
সৌদি রাষ্ট্রদূতকে চেনেন না বা জানেন না বলেও দাবি করেন তিনি।
দেওয়ান সমির বলেন, “আমি সঠিক বিচার চাই। রাষ্ট্রদূতকে আনা হোক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজিকে আনা হোক, মেঘনাকেও আনা হোক।”
আরও পড়ুন
সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে 'প্রতারণা': মডেল মেঘনার 'সহযোগী' সমির রিমান্ডে