‘ভয় দেখিয়ে’ সদ্য ঢাকা থেকে বিদায় নেওয়া রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে ‘৫ মিলিয়ন ডলার’ আদায়ের চেষ্টার ‘প্রাথমিক প্রমাণ’ মেলার দাবি করেছে পুলিশ।
Published : 12 Apr 2025, 10:10 PM
‘সুন্দরী নারীকে’ ব্যবহার করে সৌদি আরবের সদ্য বিদায় নেওয়া রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ বিন ঈসা আল দুহাইলানের কাছ থেকে বড় অঙ্কের ‘অর্থ দাবির প্রতারণার’ মামলায় এক ব্যক্তিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
পুলিশ বলছে, মো. দেওয়ান সমির নামের ওই ব্যক্তি সম্প্রতি ডিবির হাতে গ্রেপ্তার মডেল ও অভিনেত্রী মেঘনা আলমের সহযোগী। সমিরের বিরুদ্ধে ‘সুন্দরী নারীকে দিয়ে প্রেমের ফাঁদে’ ফেলে ঢাকায় সৌদি রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে ’ভয় দেখিয়ে’ ৫ মিলিয়ন ডলার আদায়ের চেষ্টার ’প্রাথমিক প্রমাণ’ মিলেছে।
রাজধানীর ভাটারা থানায় দায়ের করা এ ‘প্রতারণার’ মামলায় ৫৮ বছর বয়সী সমিরের পরিচয় দেওয়া হয়েছে ‘কাওয়াই’ নামে একটি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী (সিইও) এবং ’সানজানা ম্যানপাওয়ারের’ কর্ণধার।
শনিবার এ মামলায় ভাটারা থানার আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি শেষে সমিরকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ্ ফারজানা হক।
ভাটারা থানার আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই জাকির হোসেন রিমান্ডের এ আদেশের তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
এ মামলায় দেওয়ান সমিরসহ আরও আসামির কথা বলা হলেও বাকিদের নাম বলেননি ভাটারা থানার ওসি মো. মাজহারুল ইসলাম। মডেল মেঘনা আলম আসামি কি না সেটিও সুস্পষ্ট করেনি তিনি।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার উপপরিদর্শক মো. আরিফুল ইসলাম ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন। শুনানি শেষে বিচারক পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন।
রিমান্ডের আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, গত ১০ এপ্রিল বসুন্ধরা এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র সুন্দরী মেয়েদের মাধ্যমে বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রদূত এবং ধনাঢ্য ব্যক্তিদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ’ব্ল্যাকমেইল’ করে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করার তথ্য জানা যায়। ওইদিন রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে আসামি দেওয়ান সমিরকে সেখানে পাওয়া যায়।
”জিজ্ঞাসাবাদে ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, দেওয়ান সমির প্রতারক দলের সদস্য তথা বিভিন্ন সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ও অবৈধ সম্পর্ক তৈরি করে। পরবর্তীতে সুকৌশলে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে।
”আসামিরা ঈসা বিন ইউসুফ বিন ঈসা আল দুহাইলানকে টার্গেট করে গত বছরের জানুয়ারি মাস হতে এখন পর্যন্ত তার সাথে প্রতারক দলের সদস্যরা সখ্যতা তৈরি করে। একপর্যায়ে ব্যক্তিগত যোগাযোগ স্থাপন করে ফাঁদে ফেলে পাঁচ মিলিয়ন ডলার দাবি করেন। দেওয়ান সমির এ টাকা দেয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও হুমকি দিয় চাপ সৃষ্টি করে।”
আবেদনে বলা হয়, প্রতারণা চেষ্টার অংশ হিসেবে এ ঘটনায় গত ৮ এপ্রিল সমিরের বাসায় অর্থ আদায়ের চেষ্টা করা হয়। বসুন্ধরা আবাসিকের ওই বাসা থেকে তাকে ১০ এপ্রিল রাতে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার ’সত্যতা’ পাওয়া যায়।
“এ ঘটনায় আসামি ও তার সহযোগীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে বলে জানা গেছে। সৌদি আরবের (সদ্য বিদায় নেওয়া) রাষ্ট্রদূতের কাছে পাঁচ মিলিয়ন ডলার দাবির ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন ও প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তারে আসামিকে (সমির) আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন,” বলে আবেদনে তুলে ধরা হয়।
এর আগে বুধবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে মডেল ও মিস আর্থ বাংলাদেশ-২০২০ বিজয়ী মেঘনা আলমকে আটক করা হয়।
পরে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাবেক এই মিস আর্থ বাংলাদেশকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে উপস্থাপন করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
সেদিন রাতে ডিবির আবেদনের প্রেক্ষিতে মহানগর হাকিম মো. সেফাতুল্লাহ বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাকে ৩০ দিন কারাগারে আটক রাখার আদেশ দেন।
মেঘনাকে আটক করা নিয়ে তার ফেইসবুক লাইভের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা তৈরি হয়। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিক থেকে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি।
দিনভর মেঘনার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি বৃহস্পতিবার। তার খোঁজ না পেয়ে স্বজন ও বন্ধুরা ফেসবুকে তাকে অপহরণ ও গুম করে রাখার অভিযোগ করেন।
শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এক বার্তায় জানায়, মডেল ও অভিনেত্রী মেঘনা আলমকে ‘দরজা ভেঙে বাসা থেকে অপহরণের’ যে অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে, সেটি ‘সঠিক নয়’।
পুলিশের ভাষ্য ‘যথাযথ আইন মেনেই তাকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে’।
আনুষ্ঠানিকভাবে মেঘনার বিরুদ্ধে অভিযোগ সুনির্দিষ্ট না করলেও শুক্রবার পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, “সৌদি দূতাবাসের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মেঘনাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ।”
মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে সৌদি দূতাবাসের অভিযোগের বিষয়ে এবং দেওয়ান সমিরের বিরুদ্ধে প্রতার্ণার মামলায় সদ্য ঢাকা থেকে চলে যাওয়া সৌদি রাষ্ট্রদূতের নাম আসা প্রসঙ্গে ঢাকায় দেশটির দূতাবাসের বক্তব্য জানার চেষ্টা চলছে।
তবে এ বিষয়ে শুক্রবার সৌদি দূতাবাসের তরফে একটি সংবাদমাধ্যমকে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য থাকলে পরে জানানো হবে।