ভয় না পেলেও এই নারীর শঙ্কা, সাবেক প্রেসিডেন্ট আবার সহিংসতা উস্কে দিতে পারেন।
Published : 01 Apr 2023, 03:58 PM
ক্ষমতাবান ডনাল্ড ট্রাম্পের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছেন যে নারী, সেই স্টর্মি ড্যানিয়েলস এখন আদালতে সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
ধনকুবের একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট, যার প্রভাব এখনও দৃশ্যমান, তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে কোনো ভীতি বোধ করছেন না বলে জানিয়েছেন এক সময়ের এই পর্ন অভিনেত্রী।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে মার্কিন রাজনীতিতে তোলপাড় করা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের আসল নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড।
ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের কথা চাপা দিতে তাকে অর্থ দেওয়ার মামলায় অভিযুক্ত হয়ে গ্রেপ্তারের মুখে রয়েছেন এখন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
৭৬ বছর বয়সী ট্রাম্পকে বৃহস্পতিবার আদালত বলেছে, হয় তাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে অথবা তাকে গ্রেপ্তার করে নিউ ইয়র্কে হস্তান্তর করা হবে।
ট্রাম্পই হচ্ছেন একমাত্র সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি কোনো ফৌজদারি মামলায় বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত
অভিযোগ মাথায় নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে কীভাবে সমর্থন কুড়াবেন ট্রাম্প?
২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জোরালো ইঙ্গিত দিলেন ট্রাম্প
ট্রামকে অভিযুক্ত করে আদালতের আদেশের পর যুক্তরাজ্যের দৈনিক ‘দ্য টাইমস’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্টর্মি ড্যানিয়েলস বলেছেন, ট্রাম্পকে তিনি ভয় না পেলেও তার শঙ্কা, সাবেক প্রেসিডেন্ট আবার সহিংসতা উস্কে দিতে পারেন।
ট্রাম্পের অভিযুক্ত হওয়ার বিষয়ে এই নারী বলেন, “এটা স্মরণীয় এবং মহাকাব্যিক এক ঘটনা আমার কাছে।”
তার মতে, ক্ষমতা কিংবা অর্থবিত্ত যাই থাকুক না কেন, মানুষকে তার কাজের জন্য যে জবাবদিহি করতে হয় এবং ন্যায়বিচার হয়ে থাকে, এই ঘটনা তারই নজির।
দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে হারের পর ট্রাম্প যেভাবে সহিংসতা উসকে দিয়ে ক্যাপিটল ভবন দাঙ্গা ঘটিয়েছিল, তেমন ঘটনার শঙ্কা প্রকাশ করেন এই নারী।
তিনি বলেন, “তিনি ইতোমধ্যে দাঙ্গা উস্কে দিয়ে প্রাণহানি এবং ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়ে পালিয়ে গেছেন। ফলাফল যাই হোক না কেন এটি সহিংসতার কারণ হতে চলেছে। হতাহত এবং মৃত্যুর ঘটনাও ঘটতে চলেছে।”
যদিও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকা হয়নি, হবে এই নারী আশা করছেন, সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ তিনি পাবেন।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হলে তিনি ভয় পেয়েছেন কি না- জানতে চাইলে ড্যানিয়েলস বলেন, প্রথমে ভয় পেয়েছিলেন, কারণ ঝামেলা কিংবা সহিংসতা তার কাম্য নয়। তবে ভয় কেটে গেছে।
ড্যানিয়েলস বলেন, “আমি তাকে (ট্রাম্প) নগ্ন অবস্থায় দেখেছি। পোশাক পরে তিনি এর চেয়ে ভয়ঙ্কর আর কোনো রূপ ধারণ করতে পারেন না। আমি অতটা ভীত নই।”
ট্রাম্পকে নিয়ে স্টর্মি ড্যানিয়েলসের স্মৃতিকথা বাজারে
মার্কিন পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস গ্রেপ্তার
ট্রাম্প ও স্টর্মি ড্যানিয়েলসের মধ্যে আসলে কী হয়েছিল
ট্রাম্প-স্টর্মি যৌন কেলেঙ্কারি যেভাবে প্রকাশ্যে এল
ড্যানিয়েলসের দাবি, ট্রাম্প ও তার মধ্যে যৌন সম্পর্ক হয়েছিল এবং ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ওই বিষয়ে চুপ থাকতে তাকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দিয়েছিলেন ট্রাম্পের আইনজীবী। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে সেসময় কিছু না বলে ওই অর্থ নিয়েছিলেন তিনি।
মার্কিন আইনে এভাবে অর্থ দেওয়া অবৈধ নয়। কিন্তু ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ হল, ড্যানিয়েলসকে দেওয়া ওই অর্থ তিনি কোহেনকে দেওয়া লিগ্যাল ফি হিসেবে দেখিয়ে ব্যবসার খরচ হিসেবে চালিয়েছেন। প্রসিকিউটররা নিউ ইয়র্কে একে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে ধরেছেন।
পরে বেশ কিছু অভিযোগে সেই আইনজীবী মাইকেল কোহেনের জেল হয়েছিল। যদিও ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের খবর ২০১৮ সালে ছড়ানোর পর থেকে ট্রাম্প অস্বীকার করে আসছেন।
ট্রাম্পের সমর্থকরা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ‘হর্স ফেইস’ নাম দিয়ে তাকে সামাজিক মাধ্যমে নিয়মিতভাবে কটাক্ষ করে থাকেন।
ড্যানিয়েলস জানিয়েছেন, এই ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে চর্চিত হয়েছে তাতে তিনি ‘নির্যাতিত’ বোধ করেছেন। তিনি এই ঘটনাকে ‘সরাসরি সহিংস’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ঘটনায় নীরব থাকতে আইনি ও শারীরিকভাবেও হুমকি পেয়েছিলেন বলে ড্যানিয়েলসের ভাষ্য।