অভিযোগ মাথায় নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে কীভাবে সমর্থন কুড়াবেন ট্রাম্প?

অভিযুক্ত হওয়ায় ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের অযোগ্য বিবেচিত হওয়া উচিত বলে মনে করে বেশির ভাগ মার্কিনি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2023, 06:26 PM
Updated : 31 March 2023, 06:26 PM

পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের কথা চাপা দিতে তাকে অর্থ দেওয়ার মামলায় অভিযুক্ত হয়ে গ্রেপ্তারের মুখে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।

বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে একটি গ্র্যান্ড জুরি তাকে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত করেছে।

এ অভিযোগের কারণে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প অযোগ্য বিবেচিত হওয়া উচিত বলে মনে করে বেশিরভাগ মার্কিনি। এ সপ্তাহের শুরুর দিকের জনমত জরিপে এমনটিই দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপের প্রকাশিত ফলে দেখা গেছে, ৫৭ শতাংশই ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী দৌড়ে বর্জন করার পক্ষে মত দিয়েছে।

তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে এ প্রশ্নে দেখা গেছে বড় ধরনের বিভক্তি। ৮৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাটই মনে করে অভিযুক্ত হওয়ার ফলে ট্রাম্প আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর যোগ্য নন। কিনতু রিপাবলিকানদের তিন-চতুর্থাংশই তা মনে করে না।

এমন পরিস্থিতিতে অপরাধের অভিযোগ মাথায় নিয়েও ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে নিজের জনসমর্থন বাড়াতে ট্রাম্প কীভাবে এর ফায়দা হাসিল করতে পারেন তা বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

প্রথমেই ট্রাম্প তার গোঁড়া সমর্থকদের ক্ষোভ উস্কে দিয়ে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ফায়দা নিতে পারেন, যে সমর্থকরা দেশের বিচার ব্যবস্থাকে আক্রমণাত্মক হিসাবেই দেখে। যদিও অভিযুক্ত হওয়ার ফলে ট্রাম্পের দলের রিপাবলিকানদের আরও অনেকেই হয়ত তাকে ঘিরে একের পর এক নাটকে তিতিবিরক্ত হয়ে অন্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর খোঁজেও নামতে পারে।

২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের তথ্য লুকিয়ে রাখতে পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়ালসকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়েছিল। সেই ঘটনার তদন্তের পরই ট্রাম্প অভিযুক্ত হয়েছেন, এমনকী তিনি আরেকবার হোয়াইট হাউজের দৌড়ে নামার ঘোষণা দেওয়ার পরও অভিযোগ গঠন হয়েছে।

সাবেক প্রেসিডেন্টের এমন বিচারের মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তবে ট্রাম্পের সমর্থকরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে করে। আর তাই এতে করে ট্রাম্পকে ২০২৪ সালের নির্বাচনে লড়তে সমর্থন দিয়ে যেতেই কেবল আরও দৃঢ়সংকল্প হতে পারে তার সমর্থকরা। দলের কর্মকর্তারা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন এমন কথাই।

ট্রাম্প অভিযুক্ত হওয়ার পরপরই তার শত শত সমর্থক পাম বিচের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে সংহতি জানিয়েছেন । তাছাড়া, বৃহস্পতিবার রাতেই ট্রাম্প সমর্থকদের একটি দল ফ্লোরিডা রিসোর্টের বাইরে জড়ো হয়ে ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণার পতাকা উড়িয়েছে। 

ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকরা তার বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই বর্ণনা করছেন। ট্রাম্প নিজেও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, তিনি রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার।

তার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ ভুয়া ও অসম্মানজনক অভিযোগ আনা হয়েছে বলে ট্রাম্প দাবি করেছেন। ম্যানহাটনের জেলা অ্যাটর্নির বিচারের সমালোচনা করেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি নিউজকে ফোনে ট্রাম্প তার অভিযুক্ত হওয়াকে ‘দেশের ওপর হামলা’ বলেও বর্ণনা করেছেন। বলেছেন, নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে।

তার আইনজীবী এক বিবৃতিতে বলছেন, ট্রাম্প কোনও অপরাধ করেননি। তারা এই রাজনৈতিক বিচারের বিরুদ্ধে আদালতে লড়বেন।

ওদিকে, নিউ হ্যাম্পশায়ারের বেলক্যাপ কাউন্টিতে রিপাবলিকান পার্টির চেয়ারম্যান গ্রেগ হগের কথায়, “এই মানুষটাকে (ট্রাম্প) কেবল হয়রানি করা হচ্ছে।” ট্রাম্প যদি এই অভিযোগে বিশ্বাসযোগ্যভাবে দোষী সাব্যস্ত না হন, তাহলে তার জনপ্রিয়তা ‘তুঙ্গে উঠে যাবে’ বলে ধারণা প্রকাশ করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগকে ‘আইনের মস্ত বড় অপব্যবহার’ বলে বর্ণনা করেছেন। ট্রাম্পের ওপর ক্ষোভ থেকেই তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে মন্তব্য তার।

রিপাবলিকান এক কৌশলবিদ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগকে তার মাথার ওপর ঝুলে থাকা অন্যান্য অভিযোগের যে তদন্ত চলছে সেগুলোর তুলনায় ‘তুচ্ছ’ বলে মন্তব্য করেছেন। এসব অভিযোগের মধ্যে আছে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী ফল উল্টে দেওয়ার ট্রাম্পের চেষ্টা।

এতসব অভিযোগ মাথায় নিয়ে পার্টির মনোনয়ন জিততে ট্রাম্পকে রিপাবলিকান ইলেক্টরেটদের মধ্যে তার সমর্থন ২৫%-৩০% এর বেশি বাড়াতে হবে। সাধারণত যাই ঘটুক না কেন, এই ইলেক্টরেটদের পাল্লা তার দিকে ঝুঁকে থাকে বলে মনে করা হয়। আর বিশেষ করে সামনের দিনগুলোতে রিপাবলিকান প্রার্থীদের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে আসলে ট্রাম্প সমর্থন পেতেও পারেন। তারপরও অভিযুক্ত হওয়ার কারণে ট্রাম্পের পক্ষে নিজের আবেদন বাড়ানো কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর পলিটিক্স’ এর পরিচালক ল্যারি সাবাতো বলেছেন, কিছু রিপাবলিকান ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগের কারণে তার বদলে ফ্লোরিডার রিপাবলিকান গভর্নর কিংবা অন্য কোনও সম্ভাবনাময় প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারে। তেমন হলে তা ট্রাম্পের জন্য ভাল হবে না।

ট্রাম্পের প্রচার শিবির এরই মধ্যে ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছে, হোয়াইট হাউজের দৌড় থেকে ট্রাম্পকে ঠেকানোর চেষ্টায় অ্যাটর্নি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নির্দেশে কাজ করছেন।

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কংগ্রেসে দুটি অভিশংসনসহ বিচারের সব পদক্ষেপই যে তিনি ও তার সমর্থকদের হেয় করতে রাষ্ট্রের অন্যায় প্রচেষ্টা- এরই প্রমাণ হিসাবে সদ্য আনা অভিযোগকে তুলে ধরার চেষ্টা করবে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার শিবির।

পেনসিলভেইনিয়ার একটি কাউন্টির রিপাবলিকান পার্টি চেয়ারম্যান স্যাম ডিমার্কো বলেছেন, রিপাবলিকানরা ম্যানহাটনের গ্র্যান্ড জুরির অভিযোগকে রাজনৈতিক হিসাবেই দেখবে এই প্রেক্ষিতে যে, ২০১৮ সালে ফেডারেল কৌঁসুলিরা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের মামলাটি পুনঃপর্যালোচনা করে ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেননি। যদিও ক্ষমতায় থাকা একজন প্রেসিডেন্টকে অভিযুক্ত না করাটা বিচার বিভাগের নীতি।

অনেকক্ষেত্রেই জবাবদিহিতা এড়ানোর রেকর্ড আছে ট্রাম্পের। এজন্য তাকে কখনও কখনও মাফিয়া বসের তকমা দিয়ে ’টেফলন ডন’ নামে ডাকা হত। একবার ট্রাম্প বড়াই করে বলেওছিলেন যে, ম্যানহাটনের মধ্যে তিনি কাউকে গুলি করে মারলেও তাকে এর কোনও পরিণতি ভোগ করতে হবে না।

২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় নারীদের নিয়ে ট্রাম্পের কটুক্তির একটি টেপ ফাঁস হওয়ার পরও তিনিই তার প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন।

এরপর ২০১৮ সালে ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখনও স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে সম্পর্কের জন্য দৃশ্যত তাকে কোনও রাজনৈতিক মূল্য দিতে হয়নি। যদিও ড্যানিয়েলসকে অর্থ দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং ট্রাম্পের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করার জন্য তার আইনজীবীকে জেলে যেতে হয়েছিল।

২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতেছিলেন। আগামীতে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী দৌড়েও রিপাবলিকানদের মধ্যে ট্রাম্পই এখনও সামনের সারিতে আছেন। র্মাচে রয়টার্স/ইপসোস পরিচালিত জরিপে তার পক্ষে ৪৪ শতাংশ রিপাবলিকানের সমর্থন দেখা গেছে; যেখানে ফ্লোরিডার রিপাবলিকান গভর্নর রোনাল্ড পেয়েছেন মাত্র ৩০ শতাংশ সমর্থন।