ট্রাম্প-স্টর্মি যৌন কেলেঙ্কারি যেভাবে প্রকাশ্যে এল

আবারও আদালতের তলব পেলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2023, 07:43 AM
Updated : 11 March 2023, 07:43 AM

প্রাক্তন পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ঘটনা ধামাচাপা দিতে গোপনে তাকে অর্থ প্রদানের অভিযোগের বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে ডাকা হয়েছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে।

ড্যানিয়েলসের দাবি, ট্রাম্পের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক ছিল এবং ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ওই বিষয়ে মুখ না খুলতে তাকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দিয়েছিলেন ট্রাম্পের আইনজীবী।

পরবর্তীকালে বেশ কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাম্পের সেই আইনজীবী মাইকেল কোহেনের জেল হয়েছিল; তবে শুরু থেকেই সেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন ট্রাম্প।

মূলত পর্ন তারকার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ হওয়ার ঘটনাটি অনেক আগের বলে দাবি করা হলেও সর্বমহলে বিষয়টি চাউর হয় ২০১৮ সালে। ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে বিভিন্নভাবে চাপ, হুমকি ও নির্বাচনের আগ মুহূর্তে উৎকোচ প্রদানের ঘটনাবহুল তথ্য উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে।

শুরুটা কীভাবে

বিবিসি জানিয়েছে, ড্যানিয়েলসের আসল নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড। ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়টি তিনি প্রথম প্রকাশ করেন ২০১১ সালে। সেসময় নিজের আত্মজীবনী ‘ফুল ডিসক্লোজার’ নিয়ে সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘ইন টাচ’ এর সঙ্গে আলাপে বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলেন।

ড্যানিয়েলস জানান, ২০০৬ সালে জুলাইয়ে একটি গলফ টুর্নামেন্টে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ক্যালিফোর্নিয়া ও নেভাডার রিসোর্ট এলাকার লেক তাহো’র হোটেল কক্ষে তারা যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন। তখন ট্রাম্পের এক আইনজীবী সেই অভিযোগ বেশ জোরেশোরেই অস্বীকার করেছিলেন।

যৌন সম্পর্কের বিষয়টি কাউকে না জানাতে ট্রাম্প তাকে বলেছিলেন কি না, সেই প্রশ্নের জবাবে এই পর্ন তারকা বলেন, “তাকে বিষয়টি নিয়ে তখন তাকে (ট্রাম্প) চিন্তিত মনে হয়নি। তাকে একরকম উদ্ধতই দেখাচ্ছিল।”

বিবিসি বলছে, যদি ওই ঘটনা সত্যিই হয়, তাহলে দেখা যাচ্ছে, সবকিছু ঘটেছে ট্রাম্পের ছোট ছেলে ব্যারন ট্রাম্পের জন্মের চার মাস পর।

‘ট্রাম্পের হুমকি’

স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে ট্রাম্পের যৌন সম্পর্কের ঘটনাটি তখন ছাপতে পারেনি ইন টাচ ম্যাগাজিন। সিবিএস নিউজের ‘সিক্সটি মিনিট প্রোগ্রাম’ এর বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, ড্যানিয়েলসের ওই সাক্ষাতের পর ইন টাচ ম্যাগাজিনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন।

অবশেষে ২০১৮ সালে ট্রাম্প ও স্টর্মি ড্যানিয়েলসের যৌন সম্পর্কের বিষয়টি ছাপে ইন টাচ ম্যাগাজিন। এর কয়েক সপ্তাহ পর ‘সিক্সটি মিনিট’ অনুষ্ঠানে ড্যানিয়েলস জানান, ২০১১ সালে ইন টাচ ম্যাগাজিনকে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হওয়ার পরপরই তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

সিবিএস নিউজকে ড্যানিয়েলস বলেন, লাস ভেগাসে এক ব্যক্তি তার কাছে আসেন। এরপর হুমকি দিয়ে তাকে বলেন, ‘ট্রাম্পকে ছেড়ে চলে যান’।

তার শিশু মেয়েকে জড়িয়ে হুমকি দিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, “খুব সুন্দর ছোট্ট মেয়ে। যদি তার মায়ের কিছু হয়ে যায়, তবে সেটি বেশ বিব্রতকর হতে পারে।”

ড্যানিয়েলস জানান, পরবর্তীতে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক মাস আগে মাইকেল কোহেনের কাছ থেকে তিনি ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার পেয়েছিলেন ট্রাম্প আর তার ঘটনাটি গোপন রাখতে। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই সেসময় কিছু না বলে ওই অর্থ গ্রহণ করেন বলে দাবি করেন তিনি।

Also Read: ট্রাম্পকে নিয়ে স্টর্মি ড্যানিয়েলসের স্মৃতিকথা বাজারে

Also Read: মার্কিন পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস গ্রেপ্তার

সিক্সটি মিনিট এপিসোড সম্প্রচারের আগ দিয়ে আইনজীবী কোহেনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি শেল কোম্পানি ড্যানিয়েলসকে ২ কোটি ডলারের মামলার হুমকি দেয়। ড্যানিয়েলসকে ওই কোম্পানি জানায়, তিনি অপ্রকাশিত চুক্তি অথবা ‘ঘটনা ধামাচাপা’ দেওয়ার চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন।

সিবিএস শো-কে এই পর্ন তারকা জানান, তিনি ওই চুক্তি ভেঙে জাতীয় টেলিভিশনে বিষয়টি নিয়ে কথা বলায় ১০ লাখ ডলার জরিমানার ঝুঁকিতে ছিলেন।

“তবে নিজেকে রক্ষা করার মতো সক্ষম হওয়াও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল,” বলেন তিনি।

কোহেনের পালা

২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগ দিয়ে যখন পর্ন তারকার সঙ্গে ট্রাম্পের যৌন সংসর্গ নিয়ে গুজব ছড়াল, এর বছরখানেক পর ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল খবর ছাপল; সেখানে স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে আইনজীবী কোহেনের দেওয়া উৎকোচের বিষয়টি উঠে আসে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক মাস আগে ড্যানিয়েলসকে অর্থপ্রদানের বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্পের সমালোচকরা যুক্তি দিলেন, এর মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারের বিধি লঙ্ঘন হয়েছে।

শুরুতে কোহেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সেই প্রতিবেদন অস্বীকার করেন। কিন্তু ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি স্বীকার করেন, তিনি ড্যানিয়েলসকে সেই অর্থ দিয়েছেন নিজের তহবিল থেকে। আর সেখানে ট্রাম্প কিংবা নির্বাচনী প্রচারের সংশ্লিষ্টতা নেই।

পরবর্তীতে ২০১৮ সালে অগাস্টে কোহেন হলফনামায় সাক্ষ্য দেন, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর সেই অর্থ পেয়েছিলেন ট্রাম্পের কাছ থেকেই।

ডোনাল্ড ট্রাম্পও তার আইনজীবী কোহেনকে সেই অর্থ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন, যা অবৈধ নয় বলে দাবি করেন তিনি। তবে ড্যানিয়েলসের সঙ্গে সম্পর্ক ও নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেন তিনি।

২০১৬ সালের ওই নির্বাচনের সময় বিভিন্ন নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে কারাগারে যেতে হয় কোহেনকে।

তাহলে এখন কী

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের তৃতীয় নির্বাচনী প্রচারের এক আইনজীবী বিবিসিকে জানান, স্টর্মি ড্যানিয়েলসের অভিযোগ নিয়ে ট্রাম্পকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডেকেছেন প্রসিকিউটররা। ম্যানহাটনের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অবৈধ অর্থ প্রদানের বিষয়টি নিয়ে গত পাঁচ বছর ধরে তদন্ত করছেন।

গোপনে একটি গ্রান্ড জুরি গঠন করা হয়েছে এবং ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ আনার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে কি না, তা যাচাইয়ে একজন প্রসিকিউটরও রয়েছে জুরি বোর্ডে।

যদি সেই অভিযোগ গঠন করা হয়, তবে এটিই হবে কোনো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের নামে প্রথম ফৌজদারি মামলা।

তবে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, সাক্ষ্য দেওয়ার প্রস্তাবটি ইচ্ছাধীন, আর ট্রাম্প সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে পারেন।

নিজের সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ ট্রাম্প ওই তদন্তকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত, বিকৃত এবং অস্ত্রধারী বিচার ব্যবস্থা’য় রাজনৈতিক শিকার হিসেবে বর্ণনা করেন।