ট্রাম্প ও স্টর্মি ড্যানিয়েলসের মধ্যে আসলে কী হয়েছিল

সাবেক পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের দাবি, ট্রাম্প ও তার মধ্যে যৌন সম্পর্ক হয়েছিল এবং ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ওই বিষয়ে চুপ থাকতে তাকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দিয়েছিলেন ট্রাম্পের আইনজীবী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2023, 07:30 AM
Updated : 31 March 2023, 07:30 AM

সাবেক পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ঘটনা ধামাচাপা দিতে গোপনে অর্থ দেওয়ার অভিযোগে ফৌজদারি মামলায় বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।

ড্যানিয়েলসের দাবি, ট্রাম্প ও তার মধ্যে যৌন সম্পর্ক হয়েছিল এবং ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ওই বিষয়ে চুপ থাকতে তাকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দিয়েছিলেন ট্রাম্পের আইনজীবী।

পরে বেশকিছু অভিযোগে সেই আইনজীবী মাইকেল কোহেনের জেল হয়েছিল। যদিও ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের খবর ২০১৮ সালে ছড়ানোর পর থেকে ট্রাম্প সেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

পর্ন তারকার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হওয়ার শুরুর ঘটনা ও যৌন সম্পর্কের অভিযোগ, ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতে বিভিন্নভাবে চাপ, হুমকি ও নির্বাচনের আগ মুহূর্তে উৎকোচ দেওয়ার অভিযোগ এবং সব মিলিয়ে ট্রাম্প কেন অভিযুক্ত হলেন, তার বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।

সামনে এলেন স্টর্মি ড্যানিয়েলস

তার আসল নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড। গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ২০০৬ সালে একটি চ্যারিটি গলফ টুর্নামেন্টে ট্রাম্পের সঙ্গে তার দেখা হয়।

তার ভাষ্য, ক্যালিফোর্নিয়া ও নেভাডার রিসোর্ট এলাকার লেক তাহো’র হোটেল কক্ষে তারা যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন। তখন ট্রাম্পের এক আইনজীবী সেই অভিযোগ বেশ জোরেশোরেই অস্বীকার করেছিলেন।

যৌন সম্পর্কের বিষয়টি কাউকে না জানাতে ট্রাম্প তাকে বলেছিলেন কি না, সেই প্রশ্নের জবাবে এই পর্ন তারকা বলেন, “বিষয়টি নিয়ে তখন তাকে (ট্রাম্প) চিন্তিত মনে হয়নি। তাকে একরকম উদ্ধতই মনে হয়েছিল।”

ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ওই সময় টুর্নামেন্টে ছিলেন না। সেসময় সবে সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন তিনি।

চুপ থাকতে হুমকি ও অর্থ

ড্যানিয়েলস জানান, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কিছুদিন আগে ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন তাকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দিয়েছিলেন যৌন সম্পর্কের ঘটনা গোপন রাখতে। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই সেসময় কিছু না বলে ওই অর্থ গ্রহণ করেন বলে দাবি করেন তিনি।

ট্রাম্পের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ঘটনায় নীরব থাকতে আইনি ও শারীরিকভাবেও হুমকি পেয়েছিলেন বলে ড্যানিয়েলসের ভাষ্য।

ওই ঘটনা নিয়ে ২০১১ সালে ইন টাচ ম্যাগাজিনকে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হওয়ার পরপরই হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, লাস ভেগাসে এক ব্যক্তি তার কাছে যান। এরপর হুমকি দিয়ে তাকে বলেন, “ট্রাম্পকে নিজের মত থাকতে দাও ।”

ড্যানিয়েলসের বাচ্চা মেয়েকে জড়িয়ে হুমকি দিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, “খুব সুন্দর ছোট্ট মেয়ে। তার মায়ের যদি কিছু হয়ে যায়, তবে সেটা ভালো কিছু হবে না।”

২০১৮ সালে সিবিএস নিউজের ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছিলেন ড্যানিয়েলস। বিষয়টি নিয়ে এর আগে তিনি ইন টাচ ম্যাগাজিনকে যে সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন, ২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত তা পুরোপুরি ছাপতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

ড্যানিয়েলস জানান, ‘সিক্সটি মিনিটস’ এপিসোড সম্প্রচারের আগে আগে আইনজীবী কোহেনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি শেল কোম্পানি তাকে ২ কোটি ডলারের মামলার হুমকি দেয়। ওই কোম্পানি জানায়, তিনি অপ্রকাশিত চুক্তি অথবা ‘ঘটনা ধামাচাপা’ দেওয়ার চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন।

সিবিএস শোতে এই পর্ন তারকা বলেন, তিনি ওই চুক্তি ভেঙে টেলিভিশনে বিষয়টি নিয়ে কথা বলায় ১০ লাখ ডলার জরিমানার ঝুঁকিতে ছিলেন।

“তবে নিজেকে রক্ষা করার মত সক্ষম হওয়াও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল,” বলেন তিনি।

‘তথ্য চাপতে অর্থ প্রদান’ অবৈধ?

বিবিসি লিখেছে, ‘নন ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট’ বা তথ্য না প্রকাশ করার চুক্তির বিনিময়ে কাউকে অর্থ দেওয়া অবৈধ নয়। কিন্তু যেহেতু সেই অর্থ দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক মাস আগে, সেহেতু ট্রাম্পের সমালোচকদের যুক্তি, ওই অর্থ নির্বাচন প্রচার বিধি লঙ্ঘন করতে পারত।

২০১৮ সালের অগাস্টে ট্রাম্পের আইনজীবী কোহেন কর ফাঁকি এবং প্রচারে আর্থিক নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন, যার কিছুটা ড্যানিয়েলস এবং ট্রাম্পের কথিত অন্য এক প্রেমিকাকে অর্থ প্রদানের সঙ্গেও সম্পর্কিত।

ড্যানিয়েলসকে অর্থ প্রদানের ঘটনায় ট্রাম্পের সংশ্লিষ্টতা শুরুতে অস্বীকার করলেও কোহেন ২০১৮ সালে অগাস্টে হলফনামায় সাক্ষ্য দেন, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর সেই অর্থ পেয়েছিলেন ট্রাম্পের কাছ থেকেই।

ডোনাল্ড ট্রাম্পও তার আইনজীবী কোহেনকে ব্যক্তিগতভাবে সেই অর্থ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন, যা অবৈধ নয় বলে দাবি করেন তিনি। তবে ড্যানিয়েলসের সঙ্গে সম্পর্ক ও নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেন তিনি।

২০১৬ সালের ওই নির্বাচনের সময় বিভিন্ন নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে কারাগারে যেতে হয় কোহেনকে।

কেন অভিযুক্ত হলেন ট্রাম্প?

ড্যানিয়েলসকে গোপনে অর্থ দেওয়ার মামলায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য যথেষ্ট উপাদান রয়েছে কিনা, সেটি বিচারে এ বছরের শুরুর দিকে একটি গ্র্যান্ড জুরি গঠন করেন নিউ ইয়র্ক সিটির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগ।

গোপনে সেই গ্রান্ড জুরি গঠন করা হয় এবং মামলায় অভিযোগ আনার জন্য যথেষ্ট উপাদান রয়েছে কিনা, তা নির্ধারণে একজন প্রসিকিউটরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

বিবিসি লিখেছে, বৃহস্পতিবার সেই গ্র্যান্ড জুরি ট্রাম্পের ওই মামলায় অভিযোগ গঠনের পক্ষে ভোট দেয়; এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কোনো সাবেক প্রেসিডেন্টকে ফৌজদারি মামলায় বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

এ মামলার মূল অভিযোগ, স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে দেওয়া অর্থ ট্রাম্প তার আইনজীবী কোহেনকে দেওয়া লিগ্যাল ফি হিসেবে দেখিয়ে ব্যবসার খরচ বলে চালিয়েছেন।

আর কোহেন হলফনামায় বলেছিলেন, সেই ১ লাখ ৩০ হাজার ডলারের সঙ্গে কর বাবদ খরচা ও বোনাসসহ ৪ লাখ ২০ হাজার ডলার তিনি ট্রাম্পের কাছ থেকে পেয়েছিলেন।

নিউ ইয়র্কের আইনে ব্যবসার নথিতে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য দেওয়া ফৌজদারি অপরাধ। 

অবশ্য ট্রাম্প তার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক ‘ট্রুথ সোশ্যাল‘-এ বলেছেন, তিনি ‘দুর্নীতিগ্রস্ত, বিকৃত এবং অস্ত্রধারী বিচার ব্যবস্থার’রাজনৈতিক শিকার।

আরও পড়ুন-

Also Read: সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত

Also Read: ট্রাম্প-স্টর্মি যৌন কেলেঙ্কারি যেভাবে প্রকাশ্যে এল