নিজের ধুঁকতে থাকা গাড়ি কোম্পানি টেসলার প্রতি মনোযোগ বাড়াতে এখন থেকে সপ্তাহে কেবল এক বা দুইদিনই সরকারি কাজে সময় দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী।
Published : 24 Apr 2025, 03:41 PM
ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফেশিয়েন্সি (ডিওজিই) থেকে ইলন মাস্ক সরে দাঁড়ানো মাত্র সেখানকার কর্মীদের প্রভাব কমিয়ে এনে বাজেট ও সরকারি কর্মীবহরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ফের নিজেদের হাতে তুলে নিতে ডনাল্ড ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার সদস্যরা প্রস্তুত।
বিষয়টি সম্বন্ধে সরাসরি জ্ঞাত দুটি সরকারি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ কথা জানিয়েছে।
জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার দিনই এক নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প সরকারি ব্যয় কাটছাঁট ও কর্মীবহর ছোট করে আনতে এই ডিওজিই প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার বিলিয়নেয়ার সহযোগী মাস্ককে তার দায়িত্ব দেন।
দায়িত্ব পাওয়ার পর মাস্ক এ পর্যন্ত অসংখ্য মন্ত্রণালয় ও ফেডারেল বিভাগের হাজার হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করেছেন, অসংখ্য চুক্তি বাতিল করেছেন এবং মার্কিনিদের দেওয়া ফেডারেল সরকারের সেবার পরিমাণ কমিয়ে এনেছেন।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সের এ মালিক মঙ্গলবার বলেছেন, নিজের ধুঁকতে থাকা গাড়ি কোম্পানি টেসলার প্রতি মনোযোগ বাড়াতে এখন থেকে সপ্তাহে কেবল এক বা দুইদিনই সরকারি কাজে সময় দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি।
বিশেষ সরকারি কর্মী হওয়ায় মে-তে তার দায়িত্ব শেষ হবে বলে মনে করা হচ্ছিল; তিনি দায়িত্ব কমালে বা পুরোপুরি ছেড়ে দিলে ডিওজিই-র কাজের ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে তা নিয়ে এখন থেকেই প্রশ্ন উঠছে।
সরকারি ব্যয় কমাতে ডিওজিই যেসব কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, তা হোয়াইট হাউসের জন্য রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করলেও মাস্ক তা সামাল দিতে পেরেছেন। যদিও অনেক মন্ত্রীই মনে করছেন, তাদের নিজের মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ ও ছাঁটাইয়ের ক্ষমতায় ডিওজিই হস্তক্ষেপ করছে—মন্ত্রিসভার কাউকে কাউকে মাস্কের বিভাগের আদেশ/নির্দেশ মানতে অনাগ্রহীও দেখা গেছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে টেসলাপ্রধানকে দেওয়া কর্তৃত্ব নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরেই উত্তেজনা বেড়েছে।
মার্চে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মাস্কের বিরুদ্ধে ইউএসএআইডিকে দুর্বল করে দেওয়ার অভিযোগ আনেন, পরিবহন মন্ত্রী শন ডাফিও বিমান চলাচল খাতে নিরাপত্তা উদ্বেগের মধ্যে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের ছাঁটাইয়ের প্রস্তাব নিয়ে স্পেসএক্স প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে তর্কে জড়ান, জানিয়েছে পরিস্থিতি সম্বন্ধে অবগত একাধিক সূত্র।
মন্ত্রিসভার সদস্যরা বরাবরই বাজেট সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ চাইছিলেন। মাস্কের হাই-প্রোফাইল উপস্থিতি বাধা হয়ে দাঁড়ালেও, এখন তিনি পিছু হটায় তারা বিস্তৃত কাটছাঁটের বদলে নির্দিষ্ট কিছু খাতে খরচ কমানোর পরিকল্পনা সহজেই এগিয়ে নিতে পারবেন, বলছে তারা।
কথা বলার দায়িত্বপ্রাপ্ত না হওয়ায় এই সূত্রগুলো তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশে রাজি হয়নি, বলছে রয়টার্স।
মাস্ক সরে গেলে সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন হবে, তা হলো- কোন প্রস্তাবনা সামনে যাবে আর কোনটা যাবে না, মন্ত্রণালয় বা সংস্থার প্রধানরাই সে বিষয়ে শেষ কথা বলবেন। ব্যয় ও দক্ষতা বিষয়ক কৌশলের কেন্দ্রে তাদের ভূমিকা আরও সুদৃঢ় হবে।
মন্ত্রিসভা আরও বেশি স্বাধীনতা পাবে, প্রতিটি সিদ্ধান্তে মাস্কের অনুমোদন লাগবে না, বলেছে একটি সূত্র।
ডিওজিই-র ভেতরে নেতৃত্ব বদলালে মাস্ক যে তরুণ প্রকৌশলীদের নিয়োগ দিয়েছিলেন, তাদের ভূমিকা ও দায়িত্ব পুনর্মূল্যায়নের মুখে পড়বে।
এই প্রকৌশলীদের প্রভাব কমে যেতে পারে এবং তারা ব্যাপক যাচাই-বাছাইয়ের মুখে পড়তে পারেন। সরকারি কাজে অভিজ্ঞতা কম এমন একটি তরুণ প্রকৌশলী গোষ্ঠীর যোগ্যতা ও কর্তৃত্ব নিয়ে তো প্রশ্ন উঠবেই, বলেছে সূত্রটি।
তবে মাস্ক সরে গেলে ডিওজিই-র প্রভাব ও কাজে পরিবর্তন আসবে এমন ধারণা উড়িয়ে দিয়েছেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র হ্যারিসন ফিল্ডস।
“যেভাবে ডিওজিই-র নকশা করা হয়েছে, তাতে মন্ত্রিসভার এখনি ব্যয় কমানোর ব্যাপারে সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব রয়েছে। ডিওজিই কেবল সহায়ক উপাদান। কোনো পরিবর্তন আসবে না। ডিওজিই নির্বিঘ্নে চলছে, একভাবে দেখলে এটি অনেকটা ‘স্বয়ংক্রিয় উপায়ে’ চলছে এবং প্রেসিডেন্টের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ফেডারেল সরকারের ভেতরে থেকেই কাজ করছে,” বলেছেন ফিল্ডস।
ডিওজিই-র ভূমিকার পক্ষে-বিপক্ষে থাকা অনেকেই বলছেন, মাস্ক সরকারি দায়িত্ব কমালেও ট্রাম্পের বাজেট কাটছাঁট কর্মসূচি অব্যাহতই থাকবে।
প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ এরই মধ্যে ‘গাড়ির গতি ঠিক করে দিয়েছে’ এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরাও তার এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর, বলছেন তারা।
“ডিওজিই এরই মধ্যে যা করেছে অনেক মন্ত্রণালয় ও সংস্থা এরই মধ্যে এর সঙ্গে ধাতস্থ হয়ে গেছে, এবং এখন এটা এগিয়ে যেতে থাকবে,” বলেছেন মিনেসোটা ল স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক নিক বেদনার।
সরকারের ব্যয় কাটছাঁটের পদক্ষেপের দিকে নজর রাখা এ শিক্ষক বলছেন, ডিওজিই যা করেছে, মন্ত্রণালয় বা ফেডারেল সংস্থাগুলো তা উল্টে দেবে বলে তিনি মনে করেন না।
“ট্রেন স্টেশন ছেড়ে চলে গেছে, একে থামানো কঠিন,” বলেন বেদনার।