জি৭ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে হিরোশিমা যাচ্ছেন জেলেনস্কি

রাশিয়ার ওপর চাপ আরও বাড়াতে পারমাণবিক যুদ্ধের বিভীষিকার প্রতিশব্দে পরিণত হওয়া শহরটিতে সম্মেলনে হাজির হবেন তিনি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2023, 10:34 AM
Updated : 19 May 2023, 10:34 AM

ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জাপানের হিরোশিমায় শুরু হওয়া জি৭ এর শীর্ষ সম্মেলনের শেষদিনে যোগ দেবেন।

রাশিয়ার ওপর চাপ আরও বাড়াতে পারমাণবিক যুদ্ধের বিভীষিকার প্রতিশব্দে পরিণত হওয়া শহরটিতে সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে তিনি যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন ইউক্রেইনের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা।

শীর্ষ সম্মেলনটি আয়োজনের সঙ্গে জড়িত দুই কর্মকর্তাও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট রোববার সম্মেলনে হাজির হবেন।

“সেখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে, আমাদের স্বার্থ রক্ষায় প্রেসিডেন্টের সেখানে উপস্থিতি অপরিহার্য,” রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে ইউক্রেইনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের মহাসচিব ওলেক্সি দানিলভ এমনটাই বলেছেন, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

জেলেনস্কির উপস্থিতি সম্মেলনে নাটকীয়তা যোগ করবে এবং মস্কোর সঙ্গে সংঘাতে ইউক্রেইনকে বিস্তৃত সহায়তা দিতে তার আহ্বান সেখানে উপস্থিত নেতাদের মধ্যে তাগিদ সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এবারের সম্মেলনে জি৭ দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং চীনকে মোকাবেলায় নিজেদের ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ানোর ঘোষণা দেবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট শনিবার সন্ধ্যায় জাপানে পৌঁছাবেন বলে রয়টার্সকে ধারণা দিয়েছে একটি সূত্র।

হোয়াইট হাউস জেলেনস্কির এই হিরোশিমা সফর নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

শুক্রবার জি৭ নেতারা হিরোশিমায় ৭৮ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক হামলায় নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সেবার যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা হামলায় জাপানের দুটি শহর হিরোশিমা ও নাগাসাকি নরককুণ্ডে পরিণত হয়েছিল।

শিল্পোন্নত ৭টি দেশের এবারের শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞায় আরও কড়াকড়ি আরোপ এবং এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতের কৌশল নিয়ে বিতর্ক হবে বলে প্রত্যাশা করছেন জি৭ নেতারা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনীতে পরিণত হওয়া যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, ব্রিটেন ফ্রান্স, কানাডা ও ইতালি, এই ৭টি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য চীন ও রাশিয়ার অপ্রত্যাশিত কর্মকাণ্ডে চ্যালেঞ্জ ক্রমাগত বেড়ে চলছে।

হিরোশিমা সম্মেলনে রাশিয়ার ওপর কী ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসতে যাচ্ছে, তা নিয়ে অনেকেরই আগ্রহ আছে।

অবশ্য যুক্তরাজ্য এরই মধ্যে এক বিবৃতিতে বলেছে, ইউক্রেইনের প্রতি সংহতি জানিয়ে তারা রাশিয়ার হীরা এবং তামা, অ্যালুমিনিয়াম ও নিকেলসহ বিভিন্ন ধাতু আমদানি নিষিদ্ধের ঘোষণা দেবে।

শিপিং, ধাতু ও জ্বালানি খাতের সঙ্গে জড়িতদের পাশাপাশি আরও ৮৬ জন ব্যক্তি এবং পুতিনের সামরিক খাত সংশ্লিষ্ট অনেক কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে বলেও বিবৃতিতে জানিয়েছে দেশটি।  

ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল বলেছেন, যুক্তরাজ্যের মতো ইউরোপও রাশিয়ার হীরা বিক্রিতে বিধিনিষেধ আরোপ করবে।

রাশিয়াকে নিয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা, এর সঙ্গে চীনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কী ভাষা থাকবে, তা নিয়ে সাত দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে এখনও নিবিড় আলোচনা চলছে, জানিয়েছেন জি৭ সম্মেলনে সম্পৃক্ত চারটি দেশের কর্মকর্তারা।

এদিকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দিকে মনোযোগ নিবিষ্ট করতেই তিনি সম্মেলনের স্থান হিসেবে হিরোশিমাকে বেছে নিয়েছেন। কিশিদা জাপানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে হিরোশিমার প্রতিনিধি।

ইউক্রেইন যুদ্ধের বিভিন্ন পর্বে রাশিয়া ‘আঞ্চলিক অখণ্ডতা’ রক্ষায় প্রয়োজন পড়লে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে একাধিকবার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

মিত্রদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রও ৭০টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে কালো তালিকাভূক্ত করা, রাশিয়ার অর্থনীতির নতুন নতুন খাতসহ নিষেধাজ্ঞার আওতায় ৩০০ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে নিয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে, জানিয়েছেন মার্কিন প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

“রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিক্রিয়ায় আপনি ঐক্য, শক্তি ও প্রতিশ্রুতি সম্বলিত একটি শক্তিশালী বিবৃতি শুনতে পাবেন। রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করতে এবং তার যুদ্ধ চালানোর ক্ষমতাকে দুর্বল করতে নেওয়া নতুন পদক্ষেপগুলিও দেখতে পাবেন,” বলেছেন তিনি।

আরও পড়ুন:

Also Read: হিসাবে ভুল, ইউক্রেইনে পাঠানো অস্ত্রের দাম ৩০০ কোটি ডলার বেশি দেখিয়েছে পেন্টাগন