আটকদের মধ্যে কৃষক নেতা সারওয়ার সিং পান্ধের ও জগজিৎ সিং দাল্লেওয়ালও আছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।
Published : 20 Mar 2025, 03:08 PM
ফসলের ভালো দাম চেয়ে হরিয়ানা সংলগ্ন সীমান্তে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া কৃষকদের হটাতে তাদের তাঁবু বুলডোজারে গুড়িয়ে দিয়েছে ভারতের পাঞ্জাবের পুলিশ।
বুধবার রাতে তারা আন্দোলনরত কয়েকশ কৃষককে আটকও করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ফসলের ক্ষেত্রে আরও বেশি রাষ্ট্রীয় সহায়তার আইন-সমর্থিত নিশ্চয়তার জন্য চাপ দিতে গত বছরের শুরুর দিকে নয়া দিল্লি অভিমুখে মিছিল ডাকে কৃষকরা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আটকালে তারা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্তে অস্থায়ী শিবির গড়ে আন্দোলন চালাতে শুরু করেন।
“আমাদের কোনো ধরনের বল প্রয়োগ করতে হয়নি, কারণ তারা কোনো ধরনের প্রতিরোধই গড়েননি। কৃষকরা ভালোভাবেই সহযোগিতা করেছেন, তারা নিজেরাই বাসে উঠে বসেন,” বুধবার রাতের অভিযান নিয়ে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালকে এমনটাই বলেছেন পাঞ্জাব পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নানক সিং।
কৃষকদের আগেই অভিযান চালানোর ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছিল, বলেছেন তিনি।
টেলিভিশনের ছবিতে পুলিশকে বুলডোজার চালিয়ে কৃষক শিবিরের মঞ্চ ও তাঁবু গুড়িয়ে দিতে এবং ব্যক্তিগত জিনিসপত্রসহ কৃষকদের গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
গণমাধ্যমে আসা কোনো কোনো ছবিতে আটকদের টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চিত্রও দেখা যাচ্ছে।
আটকদের মধ্যে কৃষক নেতা সারওয়ার সিং পান্ধের ও জগজিৎ সিং দাল্লেওয়ালও আছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।
এর মধ্যে দাল্লেওয়াল দীর্ঘদিন অনশন করেছিলেন, তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, বুধবার কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করে ফেরার পথে মোহালি থেকে পাঞ্জাব পুলিশের হাতে আটক হন কৃষক নেতা জগজিৎ সিংহ দাল্লেওয়াল ও তার সঙ্গীরা। এরপর রাতেই অবস্থানস্থল থেকে কৃষকদের হটানো শুরু করে পুলিশ।
কৃষক নেতা গুরমনীত সিং মঙ্গত জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের নেতৃত্বে কেন্দ্রের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে কৃষক নেতারা শম্ভু সীমানায় অবস্থানস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন। তখনই মোহালির কাছে দাল্লেওয়াল-সহ বেশ কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।
কৃষকদের উচ্ছেদে অনুমতি দেওয়া পাঞ্জাবের আম-আদমি সরকার বলছে, তারা কৃষকদের দাবির পক্ষে, তবে ক্ষোভ কেন্দ্রীয় সরকারকে দেখানো দরকার, রাজ্যের ক্ষতি করে নয়।
“সীমানার মহাসড়কগুলো হচ্ছে রাজ্যের প্রাণশক্তি। আন্দোলনের জন্য দুটি মহাসড়ক দীর্ঘসময় স্তব্ধ রয়েছে, এর ফলে ব্যবসা ও শিল্পের ক্ষতি হচ্ছে,” বলেছেন পাঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী হরপাল সিং চিমা।
“পাঞ্জাবের স্বার্থের সুরক্ষায় চলুন একসঙ্গে কাজ করি। মহাসড়ক বন্ধ রাখা কোনো সমাধান নয়,” বলেছেন রাজ্য আম-আদমি পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট তরুণপ্রীত সিং সোন্দ।
পাঞ্জাবের বিরোধীদল বিজেপি এভাবে কৃষক নেতাদের আটক ও বিক্ষোভ দমনের তুমুল সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, কেন্দ্রীয় সরকার ও কৃষক নেতাদের মধ্যে আলোচনায় বিঘ্ন ঘটাতে চাইছে পাঞ্জাবের আম-আদমির সরকার।
তবে কৃষক নেতাদের ক্ষোভের তীর কেন্দ্রীয় সরকারের দিকেই।
“একদিকে সরকার কৃষক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে, অন্যদিকে কৃষকদের গ্রেপ্তার করাচ্ছে,” সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এমনটাই বলেছেন ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের মুখপাত্র রাকেশ টিকায়েত।
দিল্লির বাইরে অবস্থান গেড়ে কৃষকরা বছরব্যাপী আন্দোলন চালানোর পর ২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন সরকার তাদের আনা বেশ কয়েকটি কৃষি আইন বদলাতে বাধ্য হয়েছিল।