মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ঐতিহ্যগত অভিষেক অনুষ্ঠানগুলো থেকে ব্যতিক্রম ঘটিয়ে ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন বেশ কয়েকজন বিদেশি নেতা।
Published : 20 Jan 2025, 03:23 PM
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম নাটকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটানো ডনাল্ড ট্রাম্প দেশটির ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য শপথ নিচ্ছেন।
চার বছর আগে ক্ষমতা না ছাড়তে চাইলেও হোয়াইট হাউজ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন ট্রাম্প। চার বছর পর দেশের মানুষের বিপুল সমর্থন নিয়ে সেই হোয়াইট হাউজেই ফিরছেন তিনি।
২০২০ সালের নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট জো বাইডেনের কাছে পরাজয়ের পর পৌঁছে গিয়েছিলেন খাদের কিনারে; সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে, আততায়ীর বুলেট এড়িয়ে, অধিকাংশ মার্কিন ভোটারের সমর্থন নিয়ে ৫ নভেম্বর দ্বিতীয়বারের মত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রিপাবলিকান ট্রাম্প।
সোমবার ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স উভয়েই শপথ নেবেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় এই শপথ অনুষ্ঠান শুরু হবে। তীব্র শীতের কারণে ৪০ বছরের মধ্যে এই প্রথম অভিষেক অনুষ্ঠান মার্কিন ক্যাপিটল ভবনের পশ্চিম দিকের খোলা সিঁড়ির পরিবর্তে গম্বুজঅলা গোলাকার হলঘর রোটান্ডায় অনুষ্ঠিত হবে। চার বছর আগে ট্রাম্পর একদল উগ্র সমর্থক মার্কিন গণতন্ত্রের প্রতীক এই ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালিয়েছিল, তারা ডেমোক্র্যাট জো বাইডেনের কাছে রিপাবলিকান ট্রাম্পের পরাজয় আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টায় ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন।
ঊনিশ শতকের পর থেকে ট্রাম্পই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় নির্বাচনের হারার চার বছর পর ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ঐতিহ্যগত অভিষেক অনুষ্ঠানগুলো থেকে ব্যতিক্রম ঘটিয়ে তার এ শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন বেশ কয়েকজন বিদেশি নেতা। এদের মধ্যে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের পাশাপাশি তার কিছু প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাও উপস্থিত থাকবেন। রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, হিসাবমতো অনুষ্ঠানে মোট পাঁচ লাখ অতিথি উপস্থিত থাকবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ঐহিত্য অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের অভিষেক একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়। প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট সাধারণত মার্কিন কর্মকর্তা, দেশটির সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্টদের উপস্থিতিতে ক্যাপিটল ভবনের সিঁড়িতে স্থাপিত খোলা মঞ্চে শপথ গ্রহণ করেন। আশপাশের খোলা জায়গা থেকে উপস্থিত জনতা এই অনুষ্ঠান সরাসরি প্রত্যক্ষ করেন।
কিন্তু এবারের শপথ অনুষ্ঠানে এই ঐতিহ্যের ভাঙছেন ট্রাম্প। এই অনুষ্ঠানে অভিষেক বক্তৃতা, প্যারেড, সঙ্গীতানুষ্ঠানের পাশাপাশি বিদেশি অতিথিরাও থাকছেন। এতে অনুষ্ঠানটি আর অভ্যন্তরীণ না থেকে আন্তর্জাতিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রায় এক ডজন বিদেশি নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের অধিকাংশই রক্ষণশীল ও ডানপন্থি। এর আগে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর শুধু রাষ্ট্রদূত অথবা পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন।
যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে:
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হ্যাভিয়ার মিলি: আর্জেন্টিনার এ ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং: বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের প্রেসিডেন্ট তার প্রতিপক্ষ হলেও শি-কে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু শি-য়ের প্রতিনিধি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হান জং।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি: শিডিউল মিললে ইতালির চরম ডানপন্থি দল ব্রাদার্স অব ইতালির নেতা মেলোনি ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছে তার দপ্তর।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী: ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ থেকেই মোদীর সঙ্গে তার ‘ব্রোমান্স’ চললেও এবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তার বদলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রাহ্মনিয়াম জয়শঙ্কর সোমবার ক্যাপিটলের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর অরবান: দেশটির জনপ্রিয়তাবাদী নেতা অরবান ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে তিনি ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারছেন না।
একুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া: নোবোয়া ট্রাম্পের জয়কে লাতিন আমেরিকার বিজয় বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি তার পুনর্নির্বাচনী প্রচারণ বন্ধ রেখে ওয়াশিংটনে উপস্থিত হচ্ছেন।
এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে: ট্রাম্পের ছেলে ডনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রের বন্ধু বুকেলে ওয়াশিংটনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন কি না তার দপ্তর এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি। ২০২৪ সালে বুকেলের অভিষেক অনুষ্ঠানে সাল সালভাদরে উপস্থিত ছিলেন জুনিয়র ট্রাম্প।
ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো: ‘ক্রান্তীয় অঞ্চলের ট্রাম্প’ নামে পরিচিত চরম ডানপন্থি বোলসোনারো আমন্ত্রণ পেলেও শাস্তিমূলক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারবেন না।
পোল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাতেউশ মোরাভিয়েছকি: সম্প্রতি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ডানপন্থি ইউরোপিয়ান কনজারভেটিভস ও রিফর্মিস্টস পার্টির নেতা নির্বাচিত হওয়া মোরাভিয়েছকি ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।
যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি: যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছে তার দপ্তর। তবে ব্রিটেনের চরম ডানপন্থি নেতা নাইজেল ফ্যারাজকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে আর তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ: ট্রাম্প ও মাক্রোঁর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকালেও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে ফ্রান্সের রিকনকুয়েস্ট পার্টির চরম ডানপন্থি নেতা এরিক জেমুরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে আর তিনি অনুষ্ঠানে থাকছেন।
জার্মানির প্রেসিডেন্ট ওলাফ শলজ: ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম অর্থনীতির প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। জার্মানিতেও চরম ডানপন্থি দল আল্টারনেটিভ ফর জার্মানি পার্টির (এএফডি) নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান উরসুলা ফর ডার লিয়েন: লিয়েনের মতো ইউরোপী ইউনিয়নের ও নেটোভুক্ত দেশগুলোর অধিকাংশ নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
তবে স্পেনের চরম ডানপন্থি ভক্স পার্টি ও পর্তুগালের জনপ্রিয়তাবাদী শেগা পার্টির নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:
অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পের