যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরাক সরকারকে বারবার সতর্ক করার পর উত্তেজনা প্রশমনে এই পদক্ষেপ এল।
Published : 07 Apr 2025, 07:10 PM
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেনট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সংঘাত বেড়ে যাওয়ার হুমকি এড়াতে প্রথমবারের মতো অস্ত্র পরিহারে রাজি হয়েছে ইরাকের ইরান-সমর্থিত কিছু প্রভাবশালী মিলিশিয়া গোষ্ঠী। এমটাই জানিয়েছেন ইরাকের ১০ জন ঊর্ধ্বতন কমান্ডার ও সরকারি কর্মকর্তারা।
তারা জানিয়েছেন, ডনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরাক সরকারকে বারবার সতর্ক করে বলা হয়েছে– দেশটির মাটিতে সক্রিয় মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো নিয়ন্ত্রণে না আনলে তাদের ওপর বিমান হামলা চালানো হতে পারে। এই সতর্কবার্তার পরই উত্তেজনা প্রশমনে এই পদক্ষেপ এল।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি ও মিলিশিয়া নেতাদের মধ্যে আলোচনায় অনেকটাই অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইরাকের জোট সরকারের ঘনিষ্ঠ ঊর্ধ্বতন রাজনীতিবিদ ইজ্জাত আল-শাহবান্দার। তিনি বলেন, “গোষ্ঠীগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নিরস্ত্রীকরণের ডাকে সাড়া দিতে ইচ্ছুক। তারা এখন আর অনড় অবস্থানে নেই, বরং তারা ভালোভাবেই বুঝতে পারছে যুক্তরাষ্ট্র যে কোনও সময় আঘাত হানতে পারে।”
বাগদাদ ও দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি প্রদেশ থেকে সাক্ষাৎকার দেওয়া ছয় কমান্ডার জানান, তারা কাতায়েব হিজবুল্লাহ, নুজাবা, কাতায়েব সাইয়্যেদ আল- শুহাদা এবং আনসারুল্লাহ আল -আউফিয়া- এই চারটি বড় গোষ্ঠীর সদস্য।
কাতায়েব হিজবুল্লাহর এক কমান্ডার বলেন, “ট্রাম্প আমাদের সঙ্গে যুদ্ধকে আরও ভয়াবহ পর্যায়ে নিতে প্রস্তুত। আমরা তা জানি এবং এমন একটি খারাপ পরিস্থিতি এড়াতে চাই।”
তিনি জানান, ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীও (আইআরজিসি) যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্ভাব্য ধ্বংসাত্মক সংঘাত এড়াতে নিজেদের মত করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে।
প্রায় ৫০ হাজার যোদ্ধা এবং ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমানবিধ্বংসী অস্ত্রসহ বিপুল অস্ত্রভাণ্ডার রয়েছে ‘ইসলামিক রেজিট্যান্স ইন ইরাক’ নামের একটি মিলিশিয়া জোটের হাতে, যেটি এই শিয়া গোষ্ঠিগুলোকে একত্রিত করেছে। গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে তারা ইরাক ও সিরিয়ায় ইসরায়েল ও মার্কিন বাহিনীর ওপর ডজনখানেক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার দায় স্বীকার করেছে।
নিরস্ত্রীকরণ আলোচনার বিষয়ে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আল-সুদানির পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ফরহাদ আলাউদ্দিন রয়টার্সকে বলেন, বিভিন্ন জাতীয় শক্তির সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপের মধ্য দিয়ে সব অস্ত্র রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইরাকের দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সুদানি ইসলামিক রেসিসট্যান্স ইরাকের সব মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোকে নিরস্ত্রীকরণের জন্য চাপ দিচ্ছেন। ইসলামিক রেসিসট্যান্স ইরাক বাগদাদ সরকার নয় বরং ইরানের আইআরজিসি এবং কুদস ফোর্সের অনুগামী।
ইরাকের কর্মকর্তা ও কমান্ডাররা বলছেন, বিমান হামলার নিশানা হওয়ার ভয়ে কিছু গোষ্ঠী জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকেই মসুল ও আনবারের মতো শহর থেকে নিজেদের অবস্থান গুটিয়ে নিয়েছে। অনেক কমান্ডার সে সময় নিজের নিরাপত্তাও বাড়িয়েছে, বারবার মোবাইল, গাড়ি ও বাসস্থান বদলাচ্ছে।
ওদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলেছে তারা অনবরতই বাগদাদকে মিলিশিয়াদের রাশ টেনে রাখার কথা বলে আসছে। তাদের মতে, এই বাহিনীগুলোকে ইরাকের সেনাপ্রধানের অধীন থাকতে হবে, ইরানের নয়।”
তবে একজন মার্কিন কর্মকর্তা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, অতীতেও এমন হয়েছে— যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে মিলিশিয়ারা হামলা বন্ধ রেখেছিল, তবে দীর্ঘমেয়াদে অস্ত্র পরিহারে তারা রাজি ছিল না।
ইরাকের শিয়া রাজনীতিবিদ শাহবান্দার জানিয়েছেন, মিলিশিয়া নেতাদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত ইরাক সরকারের কোনও চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি। গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র পরিহার প্রক্রিয়া কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে—তা নিয়েই আলোচনা চলছে।