বিষাক্ত রাসায়নিক বহন করা ট্যাংকারগুলো ঠিকমত পরিষ্কর না করেই তাতে রান্নার তেল পরিবহণের অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
Published : 11 Jul 2024, 07:13 PM
চীনে যে জ্বালানি ট্যাঙ্কারে বিষাক্ত রাসায়নিক বহন করা হয়েছে, সেই ট্যাঙ্কার ঠিকঠাকমত পরিষ্কার না করেই তাতে ভোজ্যতেল পরিবহনের অভিযোগ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
চীনা সরকার বলেছে, তারা এ অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করবে। ভোজ্যতেল নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইনে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা এখন খাবারে দূষণ ঘটার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
চীনের রাষ্ট্র-পরিচালিত সংবাদপত্র ‘বেইজিং নিউজ’ বলছে, জ্বালানি পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত ট্যাঙ্কারগুলোতে ভোজ্যতেল ও সিরাপের মতো খাদ্যপণ্য পরিবহন করতে দেখা গেছে। আর সেইসব ট্যাংকার ভালোভাবে পরিষ্কারও করা হয়নি।
বেইজিং নিউজে এক ট্যাংকার চালকের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, দূষিত জ্বালানি বহনকারী ট্রাকগুলোতে ভোজ্যতেল পরিবহন খুবই সাধারণ বিষয় হয়ে পড়েছিল। একে ‘ওপেন সিক্রেট’ বলেই গণ্য করা হত।
ভোজ্যতেলে দূষণের সর্বসাম্প্রতিক এই ঘটনাটি চীন সরকারের খাদ্য নিরাপত্তামান বজায় রাখার সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তেল নিয়ে এই বিতর্ক চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শীর্ষ ট্রেন্ডিং-এ উঠে এসেছে।
বিবিসি জানায়, এক্সের (সাবেক টুইটার) মতো চীনের মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্ম উইবোত এই তেল দূষণ কেলেঙ্কারি নিয়ে কয়েক হাজার পোস্ট এসেছে, যা লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখেছে।
"খাদ্য নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়," এই মন্তব্যে আট হাজারের বেশি লাইক পড়েছে। অন্য একটি মন্তব্যে বলা হয়েছে, "একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে এই বিশ্বে বেঁচে থাকাটাই বিস্ময়কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
অনেকে এবারের ঘটনাটিকে ২০০৮ সালের সানলু গুঁড়াদুধ কেলেঙ্কারির সঙ্গে তুলনা করেছেন। শিল্প কারখানার উচ্চ মাত্রার রাসায়নিক মেলামাইন মিশ্রিত ওই দূষিত গুঁড়াদুধ পান করে প্রায় তিন লাখ শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছিল এবং কমপক্ষে ছয়জন মারা গিয়েছিল।
"এটি সানলু কেলেঙ্কারির চেয়েও খারাপ। কেবলমাত্র একটি বিবৃতি দিয়ে এর সমাধান করা যেতে পারে না," মন্তব্য করেন একজন উইবো ব্যবহারকারী।
চীনে ট্যাঙ্কারে পরিবহনের জন্য নির্দিষ্ট পণ্যের কোনও তালিকা নেই। ফলে ট্যাঙ্কারগুলোতে কয়লাভিত্তিক তেল পরিবহনের পরই তাতে সরাসরি খাদ্য পরিবহন করায় কোনও বাধাও নেই।
এখন ভোজ্যতেল দূষণ নিয়ে বিতর্ক শুরুর পর বলা হচ্ছে, চীনের একাধিক বড় বড় কোম্পানি- যেমন, রাষ্ট্র মালিকানাধীন সিনোগ্রেইনের একটি সহায়ক সংস্থা এবং হোপফুল গ্রেইন অ্যান্ড অয়েল গ্রুপ- এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত।
সিনোগ্রেইন বলেছে, খাদ্য নিরাপত্তা বিধি সঠিকভাবে মানা হচ্ছে কিনা, সেটি তারা তদন্ত করে দেখছে। যেসব ট্রাক নিয়ম ভেঙেছে, সেগুলোর কাজ অবিলম্বে বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
ওদিকে, হোপফুল গ্রেইনের একজন প্রতিনিধি সরকার-নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমসকে বলেছেন, তারা নিজেরাও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
চীন সরকার বলছে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা কর্মকর্তারা অভিযোগের তদন্ত করবেন। অন্যায়ে জড়িত যেকোনও কোম্পানি ও ব্যক্তিকে সাজা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়াসহ তদন্তের ফলও অবিলম্বে প্রকাশ করা হবে বলে মানুষজনকে আশ্বস্ত করেছে সরকার।