রাশিয়ার জাতিসংঘ দূত ভাসিলি নিবিয়েনসা স্বীকার করেন, ইউক্রেইন যুদ্ধের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে ‘গঠনমূলক পরিবর্তন’ ঘটেছে।
Published : 25 Feb 2025, 12:00 PM
ইউক্রেইন যুদ্ধের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ যুক্তরাষ্ট্রের করা খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী এই সংঘাতের বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেইন যুদ্ধ শেষ করার উদ্যোগ গ্রহণ করার পর সোমবার নিরাপত্তা পরিষদ এ অবস্থান নিলো।
রয়টার্স জানায়, ওই সংক্ষিপ্ত খসড়া প্রস্তাবটিতে ইউক্রেইন বিষয়ে ট্রাম্পের গ্রহণ করা মার্কিন নীতি প্রতিফলিত হয়েছে।
ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ইউক্রেইন যুদ্ধের বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আরও সমঝোতামূলক অবস্থান নেন। এর বিপরীতে তার আগের মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন যুদ্ধের পুরো সময় ধরে ইউক্রেইনকে সমর্থন করার জন্য জাতিসংঘকে পরিচালিত করার চেষ্টায় নেতৃত্ব দিয়েছিল।
রাশিয়ার জাতিসংঘ দূত ভাসিলি নিবিয়েনসা স্বীকার করেন, এই যুদ্ধের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে ‘গঠনমূলক পরিবর্তন’ ঘটেছে।
তিনি পরিষদকে বলেন, “এই প্রস্তাব আদর্শ না হলেও শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির ভবিষ্যৎ উদ্যোগের জন্য একটি সূচনা বিন্দু।”
ইউক্রেইন যুদ্ধের পুরোটা সময় ধরেই ১৫ সদস্যের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ রাশিয়ার ভিটো ক্ষমতার কারণে কোনো পদক্ষেপ নিতে না পেরে অচল হয়েছিল। কিন্তু ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদ বারবার ইউক্রেইনের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন দিয়ে জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী একটি ন্যায্য, দীর্ঘস্থায়ী ও ব্যাপক শান্তির জন্য আহ্বান জানিয়ে এসেছে।
তিন অনুচ্ছেদের যে প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদ গ্রহণ করেছে একইদিন এর আগে তা গ্রহণ করার জন্য সাধারণ পরিষদকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু ব্যর্থ হয়।
প্রস্তাবে ‘রাশিয়া-ইউক্রেইন লড়াইয়ে’ প্রাণহানির জন্য শোক প্রকাশ করা হয়। এতে জাতিসংঘের লক্ষ্য যে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা এবং বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি, তা পুনরোল্লেখ করা হয়। শেষে ইউক্রেইন যুদ্ধের দ্রুত অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির আহ্বান জানানো হয়।
নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবকে বাধ্যতামূলক বলে বিবেচনা করা হয়, কিন্তু সাধারণ পরিষদেরটা তা না। তবে সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবের রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে, এতে কোনো একটা বিষয়ে পুরো বিশ্বের মনোভাব প্রতিফলিত হয়।
নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটির পক্ষে ১০টি ভোট পড়ে। ফ্রান্স, ব্রিটেন, ডেনমার্ক, গ্রিস ও স্লোভেনিয়া ভোট দানে বিরত থাকে।
রাশিয়া কিছু সংশোধন আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর প্রস্তাবটির পক্ষেই ভোট দেয়। প্রস্তাবে ইউক্রেইনকে সমর্থন করে কিছু কথা যুক্ত করার প্রস্তাব করে ইউরোপীয় সদস্য রাষ্ট্রগুলো, কিন্তু রাশিয়ার ভিটোতে তা বাতিল হয়ে যায়।
প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ডরোথি শে বলেন, “এই প্রস্তাব আমাদের শান্তির পথে স্থাপন করেছে। এটি একটি প্রথম পদক্ষেপ, কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ- যেটিকে নিয়ে আমাদের সবার গর্বিত হওয়া উচিত। ইউক্রেইন, রাশিয়া ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য এখন আমাদের অবশ্যই এটি ব্যবহার করতে হবে।”
নিরাপত্তা পরিষদের আগে সাধারণ পরিষদ দু’টি প্রস্তাব গ্রহণ করে। এর একটির খসড়া ইউক্রেইন ও ইউরোপীয় দেশগুলোর করা আর অপরটি যুক্তরাষ্ট্রের। পরিষদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটিতে সংশোধন এনে ইউক্রেইনকে সমর্থ করে দীর্ঘ বক্তব্য জুড়ে দেয়। এই পদক্ষেপে ইউক্রেইন ও ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে একটি কূটনৈতিক জয় পায়।
ভোটাভুটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটির পক্ষে ৯৩ ভোট পড়ে, ৭৩ সদস্য রাষ্ট্র ভোট দানে বিরত থাকে আর আটটি প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। রাশিয়া মার্কিন প্রস্তাবের বিবরণীতে সংশোধন এনে যুদ্ধের ‘মূল কারণ’ উল্লেখ করতে চেয়েছিল কিন্তু ব্যর্থ হয়।
ইউক্রেইন ও ইউরোপী দেশগুলোর প্রস্তাবটির পক্ষে ৯৩ ভোট পড়ে, ৬৫ সদস্য রাষ্ট্র ভোট দানে বিরত থাকে এবং না ভোট দেয় ১৮টি রাষ্ট্র। যে রাষ্ট্রগুলো না ভোট দিয়েছে তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া ও ইসরায়েল উল্লেখযোগ্য।