“তাকবিরের শব্দে ঘুম ভাঙার বদলে আমাদের ঘুম ভেঙেছে বিমান হামলা আর বোমার গর্জনে,” বলেন নাহাল; ঘরছাড়া এই নারীর ঈদ কেটেছে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে।
Published : 30 Mar 2025, 09:16 PM
দখলদার বাহিনীর ঘেরাটোপে থেকে রমজানের শেষে ঈদুল ফিতরে যতখানি আনন্দ করা যেত, টানা দ্বিতীয় বছর সেটারও স্বাদ পেলেন না যুদ্ধে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজার বাসিন্দারা।
এবারও আনন্দের দিনটিতে তাদের ঘুম ভেঙেছে ইসরায়েলি বোমারু বিমানের শব্দে, জানিয়েছে খালিজ টাইমস।
“ঈদ, যা একসময় ছিল পরিবারের সবার পুনর্মিলন ও ঘোরার দিন, এখন তা পরিণত হয়েছে চিরবিদায় আর শেষকৃত্যের দিনে,” ২৮ বছর বয়সী মা নাহলা আবু মাতার প্যারিসভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যমের কাছে ঈদের দিন নিয়ে তার অনুভূতি এভাবেই ব্যক্ত করেছেন।
আরও লাখ লাখ গাজাবাসীর মতো নাহলাও বাস্তুচ্যুত, উত্তর গাজার নিজের বাড়ি বাদ দিয়ে এবার তাকে ঈদ করতে হচ্ছে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে।
“যেসব মসজিদে নামাজ পড়তাম সেগুলো এখন ধ্বংসস্তূপের ঢিবিতে পরিণত হয়েছে, যেসব জায়গায় আমরা একত্রিত হতাম সেগুলো ছেয়ে গেছে জঞ্জাল আর মৃতদেহে,” বলেন এ নারী।
এই হাহাকারের মধ্যেও রোববার ঈদ এসেছে গাজায়, যদিও এদিন ভোরের আগেই খান ইউনিসে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৫ শিশুসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজায় কাজ করা একাধিক উদ্ধারকারী দল।
“তাকবিরের শব্দে ঘুম ভাঙার বদলে আমাদের ঘুম ভেঙেছে বিমান হামলা আর বোমার গর্জনে,” বলেন নাহাল।
তার মধ্যেই নিয়ম করে ঈদের সকালে গাজার বিভিন্ন এলাকায় ঈদের নামাজে অনেকে সমবেত হয়েছিলেন।
কেউ কেউ রাস্তায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই তাদের জায়নামাজ বিছান, কেউ কেউ জায়গা পান মসজিদে। ঈদের নামাজ হয়েছে একসময়কার ঝলমলে ওমারি মসজিদেও, বোমার আঘাতে যার দেয়ালগুলো প্রায় মাটিতে মিশে গেছে।
অনেকে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রের তাঁবুতেও নামাজ পড়েছেন, যে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মানবেতন জীবনযাপন করছেন ঘরছাড়া লাখ লাখ গাজাবাসী।
মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের অনেকে কবরস্থানে গিয়ে যুদ্ধে হারানো প্রিয়জনের মাগফেরাত কামনাও করেছেন।
তারা যখন নামাজ পড়ছিলেন, তখনও পেছনে পাওয়া যাচ্ছে গোলার শব্দ, বাতাসে সামরিক ড্রোনের গুঞ্জন।
‘আর কত?’
ঈদের দিনও গাজাবাসীর মধ্যে যে ভয় আর আতঙ্ক কাজ করছে তা উঠে এসেছে ভূখণ্ডটির বাসিন্দা এজেদিন মুসার কথায়।
“মানুষজন একে অপরের সঙ্গে দেখা করতেও ভয় পাচ্ছে, কারণ যে কোনো মুহূর্তে রকেট উড়ে এসে তাদের প্রাণে কেড়ে নিতে পারে। আমাদের শিশুদের চোখেও সেই ভয় দেখা যাচ্ছে, তারপরও আমাদের সামান্য যা কিছু আছে, তা দিয়ে আমরা তাদের খুশি রাখার চেষ্টা করছি,” বলেছেন তিনি।
সোয়া এক বছরের যুদ্ধ শেষে চলতি বছরের জানুয়ারিতে হামাস ও ইসরায়েলে এক চুক্তির মাধ্যমে গাজায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল।
তবে সে বিরতি কয়েক সপ্তাহ পরেই ভেঙে পড়ে, এরপর চলতি মাসের মাঝামাঝি তেল আবিব ফের গাজায় অভিযানে নামে। এই অভিযান এরই মধ্যে গাজার ৯০০-র বেশি বাসিন্দার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের কয়েক হাজার যোদ্ধা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকে পড়ে এক হাজার ২১৮ ইসরায়েলিকে হত্যা ও ২৫১ জনকে জিম্মি করার পর তেল আবিব গাজায় সর্বাত্মক যুদ্ধে নামে।
সেই যুদ্ধ এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক, বলছে তারা।
“বিশ্ব ঈদে আনন্দ করছে, এদিকে আমাদের ছেলে-মেয়েরা মর্গে শুয়ে আছে। এই বেদনাদায়ক সময় আর কত দীর্ঘ হবে?” জিজ্ঞাসা ঈদের দিন ভোরের আগে ইসরায়েলের বিমান হামলায় বোন ও ভাগ্নে হারানো মোহাম্মদ আল কাদি’র।
প্রত্যক্ষদর্শী ও চিকিৎসাকর্মীরা জানান, পুরো দিনজুড়েই খান ইউনিস ও গাজার অন্যান্য এলাকায় থেমে থেমে ইসরায়েলি হামলা হয়েছে।
রাফায় বিমান হামলায় দুই শিশুও আহত হয়েছে, বলেছেন চিকিৎসাকর্মীরা।