আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা এই ঘটনায় স্তম্ভিত। আজ মরদেহগুলো শনাক্ত করা হয়েছে এবং মর্যাদার সঙ্গে দাফনের জন্য উদ্ধার করা হয়েছে। এসব কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক নিজেদের জীবন বিপন্ন করে অন্যদের সহায়তা পৌঁছে দিতেন।”
Published : 01 Apr 2025, 05:43 PM
গাজা ভূখণ্ডের দক্ষিণে বালির মধ্যে একটি কবর থেকে রেড ক্রিসেন্ট, ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স ও জাতিসংঘের ১৫ উদ্ধারকর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা সোমবার এ খবর দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মৃতদেহগুলোকে ‘বিধ্বস্ত ও সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়’ এমন যানবাহনের কাছে কবর দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে এক পোস্টে তিনি বলেন, “তারা যখন জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন, তখনই ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হন। আমরা এর ব্যাখ্যা চাই, ন্যায়বিচার চাই।”
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী রেড ক্রিসেন্ট কর্মীদের মৃত্যুর বিষয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেনি।
পরে রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তারা তাদের ভাষায় ওই ‘সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্র’ থেকে মৃতদেহ সরিয়ে নিতে সহায়তা করা হচ্ছে বলে জানায়।
তবে মরদেহগুলো কেন বালির নিচ থেকে পাওয়া গেছে, কিংবা কেনইবা যানবাহনগুলো বিধ্বস্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে, সে বিষয়ে প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর দেয়নি তারা।
ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘ সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান ফিলিপে লাজারিনি এক্স-এ লিখেছেন, “মরদেহগুলো অগভীর কবরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, যা মানবিক মর্যাদার চরম লঙ্ঘন।”
এ ১৫ জন নিয়ে গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত ৪০৮ উদ্ধারকর্মী নিহত হলেন, জানিয়েছেন তিনি।
রোববার রাতে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা এই ঘটনায় স্তম্ভিত। আজ মরদেহগুলো শনাক্ত করা হয়েছে এবং মর্যাদার সঙ্গে দাফনের জন্য উদ্ধার করা হয়েছে। এ কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে অন্যদের সহায়তা পৌঁছে দিতেন।”
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ বলছে, রেড ক্রসের ৯ সদস্যের ৮ জনের মৃতদেহ মিলেছে, কিন্তু একজনের এখনও কোনো খোঁজ মেলেনি।
হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সেনারা ফের পূর্ণদ্যমে অভিযান শুরু করার পর ২৩ মার্চ রাফাতে আহতদের সহায়তা করতে গিয়ে এ নয়জন নিখোঁজ হন। তাদের বিবৃতিতে যে স্থান থেকে মৃতদেহগুলো উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানকার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়নি। জরুরি ও ত্রাণকর্মীদের মৃত্যুর পেছনে দায়ী কারা, সরাসরি তাদের নামও বলা হয়নি।
তবে ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, তারা একই জায়গা থেকে ছয়জন সিভিল ডিফেন্স সদস্য ও এক জাতিসংঘ কর্মীর মরদেহও উদ্ধার করেছে। ইসরায়েলি বাহিনী এদের ওপর হামলা চালিয়েছিল বলে জানিয়েছে তারা।
পরে সোমবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তাদের তদন্তে উঠে এসেছে, ২৩ মার্চ তাদের সেনারা একটি গাড়িবহরে গুলি চালায়, যে বহরে অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার ট্রাকও ছিল। গাড়িগুলো আগে থেকে সমন্বয় না করেই সেখানে চলে এসেছিল, এবং সেগুলোতে হেডলাইট বা জরুরি সঙ্কেত চালু ছিল না।
ওই ঘটনায় হামাস ও ইসলামিক জিহাদের কয়েকজন যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলেও দাবি করেছে তারা।
“গাজা ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলি যেভাবে বারবার বেসামরিক অবকাঠামো বারবার ব্যবহার করছে তার নিন্দা জানাচ্ছে আইডিএফ। এসব অবকাঠামোর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোও রয়েছে,” বিবৃতিতে এমনটাই বলেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
জাতিসংঘের গাজা কার্যালয়ের প্রধান জনাথন হুইটল যে স্থান থেকে জরুরি ও ত্রাণকর্মীদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, সেটির বর্ণনা দিতে গিয়ে মৃতদেহগুলো বিধ্বস্ত একটি অ্যাম্বুলেন্স থেকে নেওয়া একটি ইমার্জেন্সি লাইট দিয়ে চিহ্নিত একটি ‘গণকবরে’ পাওয়া গেছে বলে জানান।
এক্সে তার দেওয়া পোস্টের সঙ্গে দেওয়া ছবিতে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া একটি ফায়ার ট্রাক ও জাতিসংঘের একটি গাড়ির পাশে মৃতদেহের সন্ধানে রেড ক্রসের কয়েকটি দলকে বালি খুঁড়তে দেখা যাচ্ছে।
রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রম সমন্বয় কার্যালয়ের (ওসিএইচএ) এক মুখপাত্র বলেন, সমাধিস্থলটি দেখতে বিশাল একটি বিরাট বালির ঢিবির মতো ছিল, ‘যা স্পষ্টতই বুলডোজার বা অনুরূপ যন্ত্রপাতি দিয়ে বানানো হয়েছিল, বিস্ফোরণের প্রভাবে নয়’।
যা তথ্য মিলেছে, তাতে মনে হচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী ২৩ মার্চ উদ্ধারকারীদের প্রথম দলটিতে হত্যা করে, পরের কয়েক ঘণ্টায় নিখোঁজ সহকর্মীদের খুঁজতে থাকা জরুরি পরিষেবা সংস্থার কর্মী ও ত্রাণ কর্মীরা একের পর এক হামলার শিকার হন, বলেছেন ওই মুখপাত্র।
বিশ্বের যে কোনো জায়গা বিবেচনায় এটি ২০১৭ সালের পর রেডক্রস বা রেড ক্রিসেন্টের ওপর সবচেয়ে মারাত্মক আক্রমণ, বলছে আইএফআরসি।
“আমি খুবই ভেঙে পড়েছি। এই নিবেদিতপ্রাণ অ্যাম্বুলেন্স কর্মীরা আহতদের সেবা করছিলেন। তারা ছিলেন মানবতাবাদী। তারা এমন প্রতীক পরতেন যা তাদের সুরক্ষার জন্য ছিল; তাদের অ্যাম্বুলেন্সগুলিতেও সুস্পষ্ট চিহ্ন ছিল,” বলেছেন আইএফআরসি সেক্রেটারি জেনারেল জাগান চাপাগেইন।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণ শুরু হওয়ার পরের ১৮ মাসে অন্তত ১ হাজার ৬০ জন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী নিহত হয়েছেন।
নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে জাতিসংঘ গাজায় তাদের আন্তর্জাতিক কর্মী সংখ্যা এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনারও ঘোষণা দিয়েছে।