বিদ্রোহীদের জোট জানিয়েছে, সিরিয়ার পুনর্গঠনের জন্য তারা একটি অন্তর্বর্তী শাসকবর্গের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পূর্ণ করতে কাজ করে যাচ্ছে।
Published : 09 Dec 2024, 11:29 AM
সিরিয়ার বিদ্রোহীরা রাজধানী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার এবং প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার পর দেশটিতে চলা ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসানের পাশাপাশি আসাদ পরিবারের ৫০ বছরেরও বেশি সময়ের শাসনেরও অবসান হয়েছে।
রয়টার্স লিখেছে, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সত্ত্বেও সোমবার সিরীয়রা একটি আশা নিয়ে জেগে উঠেছে।
আল কায়েদার সাবেক শাখা হায়াত আল-তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এর নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী জোটের বিদ্যুৎগতির অগ্রগতির ফলে মধ্যপ্রাচ্যে কয়েক প্রজন্মের মধ্যে অন্যতম বড় ক্ষমতার পালা বদলের ঘটনা ঘটেছে। আসাদের পতনের ফলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরান ও রাশিয়ার প্রভাব বিস্তারের ঘাঁটিটি নাই হয়ে গেছে।
রাশিয়ার গণমাধ্যম ও ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোতে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত মিখাইল উলিয়ানভ রোববার তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানিয়েছেন, মস্কো আসাদকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে।
আসাদের স্বৈরতন্ত্রী সরকারের পতনকে বিশ্বের অনেক দেশ স্বাগত জানিয়েছে। তারা মধ্যপ্রাচ্যের নতুন দৃশ্যপটের সামগ্রিক মূল্যায়নের চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, সিরিয়া ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার একটি সময়ের মধ্যে রয়েছে আর কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রথম সেখানে রাশিয়া, ইরান বা হিজবুল্লাহ কোনো প্রভাবশালী ভূমিকায় নেই।
এইচটিএস এখনও যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও জাতিসংঘের সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত সংগঠন হিসেবে আছে। তবে উগ্রবাদী হিসেবে পরিচিত এই গোষ্ঠীটি বৈশ্বিক সরকার ও সিরিয়ার সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোকে আশ্বস্ত করার জন্য কয়েক বছর ধরে তাদের ভাবমূর্তি কোমল করার চেষ্টা করে আসছে।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত কয়েক লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন। শহরগুলো ধ্বংস হয়ে ধূলায় পরিণত হয়ে আছে। আর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে অর্থনীতি ফাঁপা হয়ে গেছে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বিদ্রোহীদের এখন এই দেশটি চালাতে ও পুনর্গঠন করার মতো পর্বতসম দায়িত্ব পালন করতে হবে।
রোববার ধর্মীয়ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দামেস্কের উমাইয়া মসজিদে জনতার বিশাল এক উপস্থিতির সামনে এইচটিএসের প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি (আহমেদ আল-শারা) বলেন, “আমার ভাইয়েরা, এই মহান বিজয়ের পর পুরো অঞ্চলে এক নতুন ইতিহাস লেখা হয়েছে। কঠিন পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে সিরিয়া ইসলামিক জাতির জন্য একটি বাতিঘর হয়ে উঠবে।”
বিদ্রোহীরা রোববার রাতে দামেস্কে কারফিউ জারি করেছিল। তাতে নগরীটি রাতভর শান্তই ছিল। রাজধানীর দিকে আসা সড়কগুলো প্রায় ফাঁকা ছিল।
রোববার দিনে নগরীর একটি দোকানে লুটপাট চালানো হয় আর কিছু মানুষ আসাদের প্রেসিডেন্ট ভবনের ভেতরে ঢুকে ভাংচুর চালায় ও আসবাবপত্র লুট করে।
বিদ্রোহীদের জোট জানিয়েছে, ‘সবাই মিলে সিরিয়ার’ পুনর্গঠনের জন্য তারা নির্বাহী ক্ষমতাসম্পন্ন একটি অন্তর্বর্তী শাসকবর্গের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পূর্ণ করতে কাজ করে যাচ্ছে।
জোলানি একজন সুন্নি মুসলিম। সুন্নিরা সিরিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও দেশটিতে শিয়া, শিয়াদের শাখা আসাদের আলাউইতি সম্প্রদায় এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক খ্রিস্টান ও অন্যান্য সম্প্রদায় আছে।
আসাদ ক্ষমতা হারানোয় ওই অঞ্চলে ইরানের নিজেদের মিত্রদের কাছে অস্ত্র পাঠানোর সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে। আর রাশিয়া তার ভূমধ্যসাগরীয় নৌ-ঘাঁটি হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে।
তবে নতুন পরিস্থিতিতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তুরস্ক, লেবানন ও জর্ডানের শরণার্থী শিবিরগুলোতে ছড়িয়ে থাকা লাখ লাখ সিরীয়র দেশে ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন:
আসাদের বাসভবনে জনতার লুটপাট, ঘরে-বাইরে সিরীয়দের উল্লাস
সিরিয়ায় হুমকির মুখে রুশ ঘাঁটি, দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে হামলা