সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট আসাদের পতনের পর লাতাকিয়া প্রদেশে রুশ হেমেইমিম বিমানঘাঁটি এবং তারতুস উপকূলের নৌঘাঁটির ভবিষ্যৎ মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে।
Published : 08 Dec 2024, 08:14 PM
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের বিদ্যুৎগতির আক্রমণের মুখে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতনের পর দেশটিতে তার মিত্র রাশিয়া ও ইরানের প্রভাব-প্রতিপত্তিও বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে।
সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি এবং মধ্যপ্রাচ্যে মস্কোর উপস্থিতি হুমকির মুখে পড়েছে। হামলার কবলে পড়েছে রাজধানী দামেস্কে ইরানের দূতাবাসও।
ইরানের গণমাধ্যম দামেস্কের দূতাবাসে হামলা হওয়ার খবর জানিয়েছে। আরবি সংবাদ সংস্থা আল আরাবিয়ার প্রকাশিত ভিডিওতে, দূতাবাস ভবনের বাইরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা গেছে।
ভবনের জানালা ভাঙা এবং ঘরের ভেতরে কাগজপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকার দৃশ্যও দেখা গেছে।
ভিডিও ফুটেজে আরও দেখা যায়, ভবনের দেয়ালে ইরানের প্রয়াত কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেমানি এবং হিজবুল্লাহর প্রয়াত নেতা হাসান নাসরুল্লাহর ছবির বড় একটি ব্যানার হামলাকারীরা ছিঁড়ে ফেলছে।
অন্যদিকে, সিরিয়ায় অবস্থিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ রুশ সামরিক স্থাপনা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন রুশ যুদ্ধবিষয়ক ব্লগাররা।
রাশিয়ার সেনাবাহিনী এখন ইউক্রেইন যুদ্ধ জয়েই সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা নেওয়ার আগে তারা যতটা সম্ভব ইউক্রেইনের ভূমি দখল করতে চায়।
এই সময়ে সিরিয়ায় মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার সক্ষমতা তাদের সেই ২০১৫ সালের তুলনায় এখন অনেক কম।
রুশ যুদ্ধবিষয়ক ব্লগাররা বলেছেন, রাশিয়ার জন্য সবচেয়ে তাৎক্ষণিক হুমকি হল: সিরিয়ার লাতাকিয়া প্রদেশে রুশ হেমেইমিম বিমানঘাঁটি এবং তারতুস উপকূলের নৌঘাঁটির ভবিষ্যৎ।
তারতুসের ঘাঁটি ভূমধ্যসাগরে রাশিয়ার একমাত্র মেরামত ও সরবরাহকেন্দ্র। তাছাড়া, সিরিয়াকে আফ্রিকায় সামরিক ঠিকাদারদের যাতায়াতের কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করে আসছে রাশিয়া।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী রুশ যুদ্ধবিষয়ক ব্লগার ‘রাইবার’ বলেছেন, রাশিয়ার বাহিনী গুরুতর হুমকির মুখে পড়েছে। বাস্তবে আমাদের বুঝতে হবে যে, বিদ্রোহীরা থামবে না।
তারা সিরিয়ায় রুশ ফেডারেশনের প্রতিনিধিদের সর্বোচ্চ মর্যাদাহানি এবং শারীরিক ক্ষতি করার চেষ্টা করবে, বিশেষ করে আমাদের সামরিক ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করতে পারে তারা।”
রাশিয়ার যুদ্ধবিষয়ক আরেক ব্লগার ‘ফাইটারবম্বার’ বলেন, “সিরিয়ায় রুশ বাহিনী খুবই অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। রাশিয়ার হেমেইমিম বিমানঘাঁটি হারানো মানে বিমান হামলা চালানোর সক্ষমতা হারানো। রাশিয়া ৭৫ শতাংশ বিমান হামলাই এ ঘাঁটি থেকে চালায়।”
‘তারতুসের রুশ নৌঘাঁটির পরিস্থিতিও প্রায় একই রকম জানিয়ে এই ব্লগার বলেন, “একারণে সিরিয়ায় আমাদের বাহিনীর প্রধান কাজ হল শত্রুকে লাতাকিয়া দখল করতে বাধা দেওয়া, এমনকি যদি আমাদেরকে সাময়িকভাবে বাকি অঞ্চল ছেড়েও দিতে হয়।’
সিরিয়ায় রাশিয়ার এই ঘাঁটিগুলোর ভবিষ্যৎ কী সে সম্পর্কে শনিবার দোহায় এক প্রশ্নের জবাবে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, কী ঘটবে সে ব্যাপারে তিনি ধারণার ভিত্তিতে কিছু বলতে চান না। তবে তিনি জানান, সন্ত্রাসীদের ঠেকাতে মস্কোর পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব তা তারা করছে।