মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী সমন্বিতভাবে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে সামরিক বাহিনীর দুর্বলতা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
Published : 30 May 2024, 01:25 PM
মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা তাদের বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক সীমান্তে প্রবেশের অধিকারসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, এতে দেশটির জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলো আরও বিস্তৃত করে সেখানে নিজেদের অবস্থান জোরদার করে তুলেছে।
মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ মূল্যায়ন করে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত দু’টি প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, তারপর থেকে সাড়ে পাঁচ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে অশান্তি বিরাজ করছে।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে শুরু হওয়া প্রতিবাদ নির্মমভাবে দমন করে জান্তা সরকার। দমনপীড়নের শিকার আন্দোলনকারীরা ও সু চীর দলের নেতা-কর্মীরা অস্ত্র তুলে নিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আগে থেকেই সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে জাতিগত বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেয়। এই সম্মিলিত বাহিনী কয়েক দশকের মধ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত স্বাধীন পরামর্শক গোষ্ঠী স্পেশাল অ্যাডভাইসরি কাউন্সিল ফর মিয়ানমার (এসএসি-এম) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৬৭ শতাংশ লোকজন বসবাস করে এমন ৮৬ শতাংশ অঞ্চলের শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হারানোর ফলে মিয়ানমারে জান্তার আর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ নেই।
এসএসি-এম বলেছে, “মিয়ানমার রাষ্ট্রের মূল দায়িত্ব পালন করার মতো পর্যাপ্ত অঞ্চল আর সামরিক জান্তার নিয়ন্ত্রণে নেই। জান্তা উল্লেখযোগ্য অঞ্চল ছেড়ে এসেছে এবং এখনও দেশের যেসব এলাকার তাদের উপস্থিতি আছে তার অধিকাংশেই আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও জান্তার একজন মুখপাত্র সাড়া দেননি।
গত বছরের অক্টোবরে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী সমন্বিতভাবে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে সামরিক বাহিনীর দুর্বলতা স্পষ্ট হতে শুরু করে। ‘অভিযান ১০২৭’ নামাঙ্কিত ওই অভিযানে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের বিশাল এলাকা জান্তা বাহিনীর হাতছাড়া হয়ে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
তারপর থেকে জাতিগত বাহিনীগুলোর ধারাবাহিক আক্রমণে জান্তা বাহিনী পূর্বে থাইল্যাণ্ডের সঙ্গে থাকা দেশটির প্রায় সব সীমান্ত অঞ্চলের এবং পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর উপকূলের বহু অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারায়।
আন্তর্জাতিক অলাভজনক গোষ্ঠী ক্রাইসিস গ্রুপ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, “অনেকগুলো সামরিক জয় পাওয়া জাতিগত সশস্ত্র বাহিনীগুলো তাদের বিস্তৃত নিজস্ব আবাসভূমিতে নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছে আর অনেকে ক্ষুদে স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকেও এগোচ্ছে।”
ক্রাইসিস গ্রুপের ভাষ্য অনুযায়ী, সামরিক বাহিনীর ক্রমবর্ধমান পরাজয়ে রাজধানী নেপিদোর অভিজাতদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে, যা জান্তা প্রধান মিং অং হ্ললাইয়ের ভবিষ্যৎকে গুরুতর সন্দেহের মধ্যে ফেলে দিয়েছে; যদিও তিনি তার অনুগত কর্মকর্তাদের সামরিক বাহিনীর জ্যেষ্ঠ পদগুলোতে পদায়ন করে রেখেছেন।
গোষ্ঠীটি বলেছে, “এভাবে তিনি হয়তো তার পদ ধরে রাখতে পারবেন, কিন্তু ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের কারণে তিনি তাকে হটানোর চক্রান্তের মুখোমুখি হতে পারেন।”
দেশের সীমান্ত অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারানো অব্যাহত থাকলে আর অ-রাষ্ট্রীয় প্রশাসন বাড়তে থাকলে প্রতিবেশী দেশগুলো, আঞ্চলিক জোটগুলো এবং আন্তজার্তিক মহল প্রতিরোধকারীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বাড়িয়ে তুলতে পারে, উভয় প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।