সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট কার্যকর হওয়ার পর প্রথম ধাপে ১৪ জন শরণার্থীকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দিয়েছে কেন্দ্র সরকার।
Published : 16 May 2024, 05:26 PM
ভারতে লোকসভা ভোটের আগে দেশজুড়ে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর করে চমকে দিয়েছিল কেন্দ্র সরকার। এবার ভোটগ্রহণ চলার মাঝেই এ আইনে প্রথম নাগরিকত্ব দেওয়া হল ১৪ জনকে।
এক বিবৃতিতে কেন্দ্রে সরকার বলেছে, সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ) কার্যকর হওয়ার পর প্রথম ধাপে ১৪ জন শরণার্থীকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হল।
বুধবার নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা ১৪ জনের হাতে নাগরিকত্বের সংশাপত্র তুলে দেন। যারা নাগরিকত্ব পেয়েছেন তাদের মধ্যে পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা কয়েকজন আছেন।
বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি (সিএএ) পার্লামেন্টে পাস হওয়ার চার বছর পর এবছর লোকসভা নির্বাচনের আগে দিয়ে গত মার্চে ভারতে কার্যকর হয়।
২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকারের পাস করা এ আইনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকেহিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ ও পার্সি সম্প্রদায়ের যেসব মানুষ ধর্মীয় নিপীড়নের মুখে টিকতে না পেরে ভারতে চলে গেছেন, সেইসব শরণার্থীকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকারের দাবি, সংশোধিত এ আইন পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে নির্যাতিত হওয়াদের সুরক্ষা দেয়ায় ভূমিকা রাখবে।
তবে এ আইনে মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্তদের কথা উল্লেখ না থাকায় আইনটি বৈষম্যমূলক বলে সমালোচিত হয়েছে। তাছাড়া, তামিল উদ্বাস্তুদের বাদ দেওয়া নিয়েও আইনটি দক্ষিণ ভারতে বিতর্কিত হয়েছে।
২০১৯ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) পাসের পর থেকেই ভারতজুড়ে শুরু হয়েছিল বিক্ষোভ। এমনকি দাঙ্গাও বাধে রাজধানী দিল্লিতে। ২০২০ সালেও সিএএ বিরোধী বিক্ষোভ চলতে থাকে।
ফলে ভারত সরকার তখন আইনটি চালু করেনি। শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়েছে চলতি বছর। আইনটি কার্যকরের পাশাপাশি যোগ্যদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। সে কাজটিই শুরু হল বুধবার থেকে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিধি প্রস্তুত রয়েছে। তৈরি করা হয়েছে অনলাইন পোর্টালও। পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে হচ্ছে। এ আইন অনুযায়ী, ভিসা বা পাসপোর্টের মতো নথি না থাকলেও ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য উল্লিখিত দেশগুলোর শরণার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
ভারতে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়েছিল, নাগরিকত্ব পেতে টানা এক বছর দেশটিতে থাকতে হবে। এছাড়াও গত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতে থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সংশোধনী আইনে সেই ১১ বছরের সময়কাল কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়।
২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই মোদী সরকার ঘোষণা করে যে, ভারতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা হবে। সেই মতোই সংশোধনী বিল আনে কেন্দ্র সরকার। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভা এবং উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় পাস হয়ে যায় সেই বিল। ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিলে সই করেন।
উত্তর-পূর্ব ভারত থেকেই মূলত আপত্তি উঠেছিল সিএএ নিয়ে। অনেকেরই আশঙ্কা ছিল, সিএএ কার্যকর হলে শরণার্থীদের ভিড় বাড়বে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে। ফলে ভাষাগত এবং সংস্কৃতিগত সমস্যা প্রকোট হতে পারে। নিজেদের ভাষা এবং সংস্কৃতি রক্ষার স্বার্থেই অনেকে সিএএ বিরোধী আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন।
সিএএ-র ৬এ ধারার সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। সিএএ বাতিল আন্দোলনে সোচ্চার থেকেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বরাবরই সিএএ নিয়ে বিরোধিতা করে আসছেন। তার কথায়, নাগরিকত্ব দেওয়াই যদি কেন্দ্র সরকারের মূল লক্ষ্য হয়, তবে নতুন আইনের কী প্রয়োজন? আইনে মুসলিমদের বাদ দেওয়া নিয়েও আপত্তি তার।
বিরোধীদের দাবি, সিএএ ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক নীতি বিরোধী। এ আইনের মাধ্যমে ধর্মের ভিত্তিতে ‘বৈষম্য’ সৃষ্টি করা হচ্ছে। নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমারের মতো দেশগুলো কেন বাদ পড়েছে সেটিও প্রশ্নসাপেক্ষ।
তবে মোদী সরকার বিরোধীদের সব অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেছে, এ আইনের বাস্তবায়নে কোনোভাবেই ভারতের কোনও নাগরিকের উপর এর প্রভাব পড়বে না।