নাইজারের রাজধানী নিয়ামেতে প্রতিবেশী দেশ শাদের নেতা মোহমাত ইদ্রিস ডেবির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোম।
Published : 31 Jul 2023, 06:02 PM
গত সপ্তাহে সামরিক অভ্যুত্থানে পর থেকে বন্দি থাকা নাইজারের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে প্রথমবারের মতো দেখা গেছে।
নাইজারের রাজধানী নিয়ামেতে প্রতিবেশী দেশ শাদের নেতা মোহমাত ইদ্রিস ডেবির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। তাদের সাক্ষাতের একটি ছবি শাদের প্রেসিডেন্ট দপ্তর প্রকাশ করেছে।
ছবিতে একটি সোফায় শাদের নেতা ডেবির পাশে বসা বাজোমকে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় দেখা গেছে।
দেশটির জান্তাকে সাত দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে ক্ষমতায় পুনর্বহাল করার আল্টিমেটাম দিয়েছেন পশ্চিম আফ্রিকার নেতারা, অন্যথায় সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন তারা।
বিবিসি জানিয়েছে, এই সঙ্কট শেষ করতে শুরু হওয়া মধ্যস্থতার উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডেবি। তিনি প্রেসিডেন্ট বাজোমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর জান্তা নেতা জেনারেল আবদুরাহমানে চিয়ানির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।
অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া প্রেসিডেন্ট গার্ড ইউনিটের প্রধান জেনারেল চিয়ানি শুক্রবার নিজেকে নাইজারের নতুন শাসক বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
‘নাইজারকে অস্থির করে তোলা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান’ খোঁজা তার মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন ডেবি। তবে আর বিস্তারিত কিছু জানানি তিনি।
পশ্চিম আফ্রিকার আঞ্চলিক জোট ইকোওয়াসের নেতারা ডেবিকে নাইজারে পাঠিয়েছেন। ইকোওয়াসের নেতারাই রোববার নাইজারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাজোমকে ক্ষমতায় পুনর্বহাল করতে জান্তাকে এক সপ্তাহের সময় দিয়েছে।
তাদের দাবি না মানা হলে ‘নাইজারের সাংবিধানিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’ বলে হুঁশিয়ার করেছে আঞ্চলিক ব্লকটি।
‘এসব পদক্ষেপের মধ্যে বল প্রয়োগের বিষয়টিও থাকতে পারে’ বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে তারা।
সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে পরিকল্পনা করতে ইকোওয়াসভুক্ত দেশগুলোর সেনাপ্রধানরা ‘অবিলম্বে’ আলোচনায় বসবেন বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
নাইজারের জান্তা ইকোওয়াসের এসব দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, কিন্তু দেশটিতে আঞ্চলিক বা পশ্চিমা শক্তিগুলোর যে কোনো ‘আগ্রাসন’ প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। নাইজারের সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্স সামরিক হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ করেছে তারা।
জান্তা আরও ঘোষণা করেছে, তারা ফ্রান্সে ইউরেনিয়াম ও সোনা রপ্তানি স্থগিত করছে আর তা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। নাইজার বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ইউরেনিয়াম উৎপাদক দেশ।
এতদিন পশ্চিম আফ্রিকার জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পশ্চিমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে থাকা নাইজার এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে বলে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
কারণ নাইজারের প্রতিবেশী বুরকিনা ফাসো ও মালিতে একই ধরনের সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
রোববার নাইজারের জান্তা সমর্থকরা রাজধানী নিয়ামেতে ফ্রান্সের দূতাবাসে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এর আগে তারা এই দূতাবাসের সামনে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে ‘ফ্রান্সের পতন হোক’ বলে শ্লোগান দেয়। এ সময় তারা ‘রাশিয়া দীর্ঘজীবী হোক’, ‘পুতিন দীর্ঘজীবী হোক’ বলেও শ্লোগান দেয়।
এর প্রতিক্রিয়ায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নাইজারে তাদের কোনো স্বার্থের ওপর হামলা বরদাস্ত করবে না ফ্রান্স এবং ‘অবিলম্বে অনমনীয়তার সঙ্গে’ প্রতিক্রিয়া জানাবে।
আরও খবর:
নাইজারে অভ্যুত্থান: জান্তা বাহিনীকে পাশ্চিম আফ্রিকার নেতাদের ৭ দিনের আল্টিমেটাম
পশ্চিম আফ্রিকার নেতাদের বৈঠককে সামনে রেখে নাইজারের হুঁশিয়ারি