এ গবেষণায় কোস্টারিকার এক খোলা মাঠে আলোর আশপাশে ঘূর্ণায়মান বিভিন্ন কীটপতঙ্গের ভিডিও ধারণের উদ্দেশ্যে একটি উচ্চ রেজুলিউশনের ক্যামেরা ব্যবহার করেছেন গবেষকরা।
Published : 31 Jan 2024, 04:24 PM
দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞানী ও কবিরা ধারণা প্রকাশ করে এসেছেন যে, বিভিন্ন উড়ুক্কু কীটপতঙ্গ সহজেই উজ্জ্বল আলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়, যা নিয়ে গান ও কবিতাও কম রচিত হয় নি। তবে, নতুন গবেষণা এর বিপরীতটাই বলছে।
কীটপতঙ্গ মোটেও আলোর প্রতি আকৃষ্ট হয় না, বরং এরা বিভ্রান্ত হয়।
গবেষকদের ধারণা বলছে, রাতের আঁধারে জ্বালানো কৃত্রিম আলো উড়ন্ত কীটপতঙ্গের সহজাত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে এরা রাতের বেলা বারান্দার আলো, রাস্তার আলো বা অন্যান্য কৃত্রিম উজ্জ্বল আলোর আশপাশে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যায়।
“কীটপতঙ্গের চলাচলজনিত সমস্যা রয়েছে,” বলেন উত্তর ক্যারোলাইনার ‘চ্যাপেল হিল’ এলাকায় অবস্থিত ‘ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনা’র জীববিজ্ঞানী টাইসন হেড্রিক। তবে তিনি এ গবেষণার সঙ্গে জড়িত নন।
“কীটপতঙ্গরা কোন পথে আছে সেটা জানতে তারা আলো ব্যবহার করে অভ্যস্ত।”
তবে কীটপতঙ্গ সরাসরি আলোর উৎসের দিকে উড়ে যায় না। বরং তারা ‘আলোর দিকে পিঠ কাত করে রাখে,’ বলেন ‘ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন’-এর কীটতত্ত্ববিদ ও ‘নেচার কমিউনিকেশন’ জার্নালে মঙ্গলবার প্রকাশিত গবেষণার সহ-লেখক স্যাম ফ্যাবিয়ান।
কীটপতঙ্গরা আলোর সবচেয়ে শক্তিশালী উৎস বলতে মূলত আকাশকে বুঝে থাকে। তবে, কৃত্রিম আলোর উপস্থিতিতে তারা সে আলোর দিকে আকৃষ্ট হয় না বরং বিভ্রান্ত হয়ে যায়।
গবেষণাটি পরিচালনার জন্য গবেষকরা পোকামাকড়ের ওড়ার ভিডিও ধারণ করেছেন, যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে ‘মোশন-ক্যাপচার’ প্রযুক্তি। পাশাপাশি, একটি পরীক্ষাগারে পতঙ্গ ও ফড়িংয়ের সঙ্গে ক্ষুদ্র সেন্সরও যুক্ত করেছেন তারা। অনেকটা চলচ্চিত্র নির্মাতারা যেভাবে অভিনয়শিল্পীদের গতিবিধি ট্র্যাক করার লক্ষ্যে তাদের শরীরে বিভিন্ন সেন্সর যোগ করে থাকেন।
এ গবেষণায় লাতিন আমেরিকার দেশ কোস্টারিকার এক খোলা মাঠে আলোর আশপাশে ঘূর্ণায়মান বিভিন্ন কীটপতঙ্গের ভিডিও ধারণের উদ্দেশ্যে একটি উচ্চ রেজুলিউশনের ক্যামেরা ব্যবহার করেছেন গবেষকরা।
এ থেকে দেখা গেছে, কীভাবে বিভিন্ন কীটপতঙ্গ আলোর উৎসের চারপাশে বৃত্তাকার পথ বানিয়ে আলোর দিকে পিঠ দিয়ে অবিরাম ঘুরতে থাকে।
গবেষণাটি চলার সময় তারা আরও লক্ষ্য করেন, কিছু সংখ্যক কীটপতঙ্গ ডিগবাজি খেয়ে ‘ক্র্যাশ ল্যান্ডিং’ করে, যেখানে আলোর উৎস অনেকটা ‘সার্চ লাইটের’ মতো ওপর থেকে আসে।
অন্যদিকে, গবেষকরা দেখেছেন, যে আলোর উৎস সরাসরি নিচের দিকে মুখ করে থাকে, সেখানে কীটপতঙ্গের চলাফেরা তুলনামূলক কম ব্যাহত হয়েছে।
“লাখ লাখ বছর ধরে কীটপতঙ্গরা আকাশকেই আলোর মূল উৎস হিসেবে বিবেচনা করেছে। আর মাটিকে দেখেছে অন্ধকার হিসেবে। তবে, কৃত্রিম আলো উদ্ভাবনের পর এ প্রেক্ষাপট পুরোপুরি বদলে গেছে,” বলেন ‘হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি’র কীটতত্ত্ববিদ অ্যাভালন ওয়েন্স। তবে এ গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না তিনিও।