“প্রতি ১৫ দিন পরপর ক্রমাগত উত্তর দিক থেকে চন্দ্রোদয় হয়, যা এক সময় গিয়ে পৌঁছায় দক্ষিণ দিকে। আমরা বিশ্বাস করি, এক্ষেত্রে স্টোনহেঞ্জের মতো স্থানগুলোর চাঁদের সঙ্গে সংযোগ থাকতে পারে।”
Published : 15 Apr 2024, 04:35 PM
যুক্তরাজ্যের ঐতিহাসিক স্থাপত্য স্টোনহেঞ্জের অবস্থানের সঙ্গে চাঁদ বা সূর্যের কোনও যোগসূত্র আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখছেন গবেষকরা।
সেই লক্ষ্যে এই আদিম স্থাপত্য ও চাঁদের এক বিশেষ মূহুর্ত, যা প্রতি সাড়ে ১৮ বছরে একবারই ঘটে, তাদের মধ্যে সম্ভাব্য যোগসূত্র নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে অলাভজনক সংস্থা ‘ইংলিশ হেরিটেজ’ ও বিশেষজ্ঞরা।
ওই বিশেষ মূহুর্ত মূলত এমন একটি সময়, যখন চন্দ্রোদয় ও চন্দ্রাস্ত দিগন্তে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করে থাকে। আর এর পরবর্তী ঘটনা দেখা যাবে সম্ভবত ২০২৪-২৫ সালে।
গবেষকদের ধারণা বলছে, চাঁদের এ ধরনের গতিবিধি সম্ভবত স্টোনহেঞ্জের প্রাথমিক ধাপে শনাক্ত করা যেত, যা পরবর্তীতে এর নকশা করার ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলেছে।
এমন ঘটনা যেহেতু সচরাচর ঘটে না, তাই শিক্ষাবিদরা এ বিষয়ে গবেষণা করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
এজন্য অক্সফোর্ড, লেস্টার ও বোর্নমাউথের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির পাশাপাশি অলাভজনক সংস্থা ‘রয়াল অ্যাস্ট্রনমিকাল সোসাইটি’র সঙ্গেও কাজ করছে ইংলিশ হেরিটেজ।
“আমরা হয়ত এমন এক ঘটনা নিয়ে কথা বলছি, যা এক প্রজন্মের সমান। আর এটি দেখতে লোকজনের সম্ভবত উইলটশায়ারে পাড়ি জমাতে হবে,” বলেন বোর্নমাউথ ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. ফাবিও সিলভা।
“আমরা কখনওই এটা প্রমাণ করতে না পারলেও এইসব স্থাপত্য ও চাঁদের সম্ভাব্য যোগসূত্র নিয়ে আরও নির্ভরযোগ্য যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করছি।”
চাঁদের গতিবিধি ও এর সঙ্গে স্টোনহেঞ্জের পাথরের মধ্যে সম্পর্ক নথিভুক্ত করার দায়িত্ব পেয়েছেন বোর্নমাউথ ইউনিভার্সিটির প্রভাষক ও শিক্ষার্থীরা।
“প্রতি ১৫ দিন পরপর ক্রমাগত উত্তর দিক থেকে চন্দ্রোদয় হয়, যা এক সময় গিয়ে পৌঁছায় দক্ষিণ দিকে। আমরা বিশ্বাস করি, এক্ষেত্রে স্টোনহেঞ্জের মতো স্থানগুলোর চাঁদের সঙ্গে সংযোগ থাকতে পারে।” বলেন ড. সিলভা।
“আমাদের কাছে যে জবাব এরইমধ্যে আছে, তাতে বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করবে এ গবেষণা।”
মূলত সূর্যের গতিবিধির সঙ্গে যোগসূত্রের জন্য পরিচিত স্টোনহেঞ্জ। বিশেষ করে গ্রীষ্মে, যখন সুর্যোদয়ের সাক্ষী হতে ভোরবেলায় হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে থাকেন এ স্মৃতিস্তম্ভে।
অতীতে মানুষ কীভাবে আকাশের বিভিন্ন ঘটনা বোঝার চেষ্টা করত, সে বিষয়ে গবেষণা করা জোতির্বিদ ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ লেস্টার’-এর অধ্যাপক ক্লাইভ রাগলস বলেছেন, “সূর্যের সঙ্গে স্টোনহেঞ্জের স্থাপত্যের সংযোগ থাকার বিষয়টি সবারই জানা। তবে, চাঁদের সঙ্গে এর সম্পর্ক এখনও ভালোভাবে বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি।”
“এর মধ্যে চারটি মূল পাথরের মিল খুঁজে পাওয়া যায় চাঁদের সবচেয়ে দূরবর্তী অবস্থানের সঙ্গে। আর গবেষকরা বেশ কয়েক বছর ধরেই এ বিষয়ে বিতর্ক করে আসছেন, হোক সেটা ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে। তবে, এ দাবি সত্য হলে এ সক্ষমতা কীভাবে অর্জিত হয়েছিল, আর এর সম্ভাব্য উদ্দেশ্য কি ছিল, সেটি জানাও জরুরী।”
এজন্য মানুষকে এক সিরিজ আয়োজনে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে ইংলিশ হেরিটেজ, যার মধ্যে রয়েছে কথোপকথন, গ্রহমণ্ডল ও তারা দেখার মতো কার্যক্রমও।
এ ছাড়া, স্টোনহেঞ্জে সবচেয়ে দক্ষিণ দিক থেকে চাঁদ ওঠার ঘটনাও লাইভ স্ট্রিম করার ঘোষণা দিয়েছে অলাভজনক সংস্থাটি।