গবেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে ‘দুর্যোগপ্রবণ এলাকার ত্রান, সামরিক বাহিনীর সদাই এমনকি মহাকাশের খাবার’ হিসেবেও এটি পরিবেশনের সম্ভাবনা রয়েছে।
Published : 16 Feb 2024, 11:00 AM
ভাত দিয়ে নতুন এক ধরনের হাইব্রিড খাবার উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা।
তাদের দাবি, এ ‘মাংসালো ভাত’ প্রোটিনের সাশ্রয়ী ও পরিবেশ-বান্ধব উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে।
ল্যাবে বানানো এ খাবারে, ভাতের দানায় গরুর পেশী ও চর্বির কোষ মিশিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
এ প্রক্রিয়ায় প্রথমে চাউলকে মাছের জেলাটিন দিয়ে আবৃত করা হয় যাতে গরুর মাংসের কোষ সহজেই মিশে যেতে পারে। পরবর্তীতে, ল্যাবের একটি পাত্রে ১১ দিনের জন্য সে দানাগুলো রেখে দেওয়া হয়।
গবেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে ‘দুর্যোগপ্রবণ এলাকার ত্রাণ, সামরিক বাহিনীর খাবার এমনকি মহাকাশের খাবার’ হিসেবেও এটি পরিবেশনের সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে, এটি বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে বাজারে এলে গ্রাহকরা সেটি গ্রহণ করবেন কি না, তা এখনও দেখা বাকি।
বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ম্যাটার’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, হাইব্রিড এ চাউল গতানুগতিক চাউলের চেয়ে কিছুটা শক্ত ও ভঙ্গুর হলেও এটি প্রোটিনে ভরপুর।
দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নসে ইউনিভার্সিটির গবেষণা দলের তথ্য অনুসারে, এতে গতানুগতিক ভাতের তুলনায় আট শতাংশ বেশি প্রোটিন ও সাত শতাংশ বেশি চর্বি আছে।
গরুর মাংসের তুলনায় এতে কার্বনের মাত্রাও অনেক কম। এমনকি খামারে অতিরিক্ত প্রাণী লালন পালনের প্রয়োজনীয়তাও কমে আসে এর উৎপাদন প্রক্রিয়ায়।
গবেষকদের দাবি, হাইব্রিড এই ভাত থেকে উৎপন্ন প্রতি একশ গ্রাম প্রোটিনে কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের মাত্রা আনুমানিক ছয় দশমিক ২৭ কিলোগ্রাম, যা গরুর মাংসের বেলায় আট গুণ বেশি অর্থাৎ ৪৯ দশমিক ৮৯ কিলোগ্রাম।
গবেষক সোহিয়েওন পার্ক বলেন, “আমরা সাধারণত প্রোটিন পাই খামারের পশু থেকে। তবে, এর উৎপাদনে অনেক সম্পদ ও পানি খরচ হয়। এমনকি ব্যপক গ্রিন হাউজ গ্যাসও বের হয় খামারগুলো থেকে।”
“কল্পনা করুন, আমরা কোষে আবৃত ‘প্রোটিন রাইস’ থেকেই সকল পুষ্টিগুন পেয়ে যাচ্ছি।”
“ভাতের পুষ্টিগুণ এরইমধ্যে অনেক উচ্চমাত্রার। তবে, এতে খামারের পশুর কোষ যোগ করলে এর মাত্রা আরও বেড়ে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “কোষগুলো এতো ভালোভাবে ভাতের সঙ্গে মিশে যাবে, তা আমি ধারণা করিনি। তাই এখন গোটা বিশ্বে শস্যভিত্তিক হাইব্রিড খাবারের সম্ভাবনাও বেড়ে গেছে।”
‘মানুষকে বোঝাতে হবে’
ভাতের দানা মাংসের কোষ বৃদ্ধির কাঠামো হিসেবে কাজ করে, যার ফলে এর পুষ্টিগুণও বেড়ে যায়।
তবে, ল্যাবে তৈরি বা কৃত্রিম মাংসের পণ্যের সম্ভাবনা খুঁজে দেখা প্রথম গবেষক দল নয় এটি।
২০১৩ সালে লন্ডনের বাজারে এসেছিল ল্যাবে তৈরি প্রথম বার্গার। পরবর্তীতে, বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে কৃত্রিম মাংস আনার বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছে অনেক কোম্পানিই।
সম্প্রতি গ্রাহকদের জন্য বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম মুরগির মাংস বিক্রি শুরু করেছে সিঙ্গাপুর।
অন্যদিকে, নিজ দেশের খাবারের সংস্কৃতি সুরক্ষিত রাখার লক্ষ্যে ল্যাবরেটরিতে তৈরি মাংসে নিষেধাজ্ঞা জারির বিল উত্থাপন করেছে ইতালি।
এ পদক্ষেপের সমালোচকরা বলছেন, ল্যাবে তৈরি মাংসে কৃত্রিম কিছু নেই। কারণ সেগুলো প্রাকৃতিক কোষের মাধ্যমেই উৎপাদিত হয়ে থাকে।
‘ইউনিভার্সিটি অফ ইস্ট অ্যাংলিয়া’র কৃষি-খাদ্য ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নিল ওয়ার্ড বলেছেন, এ ধরনের গবেষণায় ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশবান্ধব খাবার তৈরির সম্ভাবনা থাকলেও তা ‘মানুষকে বোঝাতে হবে’।