ওপেনএআই’র চ্যাটজিপিটি আসলে কী?

চ্যাটবট এক ধরনের সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন, যা ব্যবহারকারীর বলা কথার ওপর ভিত্তি করে মানুষের সঙ্গে কথোপকথন চালানোর উদ্দেশ্যে তৈরি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2022, 12:06 PM
Updated : 7 Dec 2022, 12:06 PM

উদীয়মান প্রযুক্তি খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার দ্রুতগতিতেই এগিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আছে স্যানফ্রান্সিস্কো-ভিত্তিক এআই কোম্পানি ওপেনএআই’র নতুন চ্যাটবট ‘চ্যাটজিপিটি’।

চ্যাটবট এক ধরনের সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন, যা ব্যবহারকারীর বলা কথার ওপর ভিত্তি করে মানুষের সঙ্গে কথোপকথন চালানোর উদ্দেশ্যে তৈরি। গত ৩০ নভেম্বর, নিজেদের সর্বশেষ উদ্ভাবিত এই চ্যাটবটের সার্বজনীন পরীক্ষার জন্য একে বিনামূল্যে উন্মুক্ত করে দিয়েছে ওপেনএআই।

কোম্পানির সহ প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও স্যাম অল্টম্যান বলছেন, চ্যাটবটটি উন্মোচনের এক সপ্তাহের মধ্যেই একে দিয়ে কথা বলানোর চেষ্টা করেছেন ১০ লাখেরও বেশি ব্যবহারকারী।

কে চালায় ওপেনএআই? ইলন মাস্কও এখানে জড়িত?

২০১৫ সালে একটি অলাভজনক গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে ওপেন এআই প্রতিষ্ঠা করেন সিলিকন ভ্যালির বিনিয়োগকারী স্যাম অল্টম্যান ও ধনকুবের ইলন মাস্ক। পাশপাশি, প্রযুক্তি বিনিয়োগকারী পিটার টিল’সহ অনেকের কাছ থেকেই অর্থ পেয়েছে কোম্পানিটি।

২০১৯ সালে একটি লাভজনক সহযোগী কোম্পানি গঠন করে এটি যেখানে বাইরে থেকে বিনিয়োগ এসেছে।

বর্তমানে সামাজিক প্ল্যাটফর্ম টুইটার ‘ঢেলে সাজানোর’ কার্যক্রম হাতে নেওয়া ইলন মাস্ক ওপেনএআই’র পরিচালনা পর্ষদ থেকে সরে আসেন ২০১৮ সালে। তবে, ভাইরাল হওয়া এই চ্যাটবটকে তিনি আখ্যা দিয়েছেন ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ হিসেবে।

পরবর্তীতে মাস্ক টুইট করেন, টুলটি ‘প্রশিক্ষণের’ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে, বিষয়টি জানার পর তিনি টুইটার ডেটাবেজে ওপেনএআই’র প্রবেশাধিকার আটকে রেখেছেন।

এটি কীভাবে কাজ করে?

ওপেনএআই বলছে, ‘রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিং ফ্রম হিউম্যান ফিডব্যাক (আরএলএইচএফ)’ নামের এক মেশিন লার্নিং কৌশল ব্যবহার করে প্রশিক্ষিত হয়েছে চ্যাটজিপিটি মডেলটি, যা সংলাপ অনুকরণ, সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ভুল স্বীকার, ভুল অনুমান চ্যালেঞ্জ ও অনুপযুক্ত অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে।

এর প্রাথমিক উন্নয়নের অংশ ছিল বিভিন্ন মানব এআই প্রশিক্ষক। মডেলকে কথপোকথন শেখানোর উদ্দেশ্যে তারা ব্যবহারকারী ও এআই সহকারী দুটো ভূমিকাতেই অভিনয় করতেন।

ব্যবহারকারীর করা বিভিন্ন প্রশ্ন বোঝার চেষ্টার পাশাপাশি কথোপকথনের একটি ফরম্যাটে মানব-লিখিত টেক্সটের সহায়তায় সর্বজনীন পরীক্ষার উদ্দেশ্যে উন্মুক্ত এই বট সংস্করণ বিশ্লেষণধর্মী জবাব দেয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।

একে কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে?

ডিজিটাল মার্কেটিং, অনলাইন কনটেন্ট তৈরি, বিভিন্ন গ্রাহক সেবায় প্রশ্নের জবাব দেওয়া এমনকি কোড ডিবাগের মতো বাস্তব জগতের অ্যাপ্লিকেশনেও ব্যবহার করা যেতে পারে চ্যাটজিপিটি’র মতো টুল।

মানুষের কথা বলার ধরন অনুকরণের পাশাপাশি অনেক প্রশ্নেরই জবাব দিতে পারে বটটি।

কোনো সমস্যা আছে এতে?

এআই-চালিত অন্যান্য উদ্ভাবনের মতো, চ্যাটবটজিপিটিও ভুলের বাইরে নয়। টুলটির ‘নির্ভরযোগ্য শোনায় এমন প্রশ্নেও ভুল বা অযৌক্তিক জবাবের’ প্রবণতার কথা স্বীকার করেছে ওপেনএআই। তাদের মতে, এর সমাধান বেশ জটিল।

জাতি, লিঙ্গ ও সংস্কৃতির মতো বিভিন্ন সামাজিক পক্ষপাতও চাপিয়ে দিতে পারে এআই প্রযুক্তি। এর আগে গুগল ও অ্যামাজনের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টরাও স্বীকার করেছে, এআই নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো তাদের কয়েকটি প্রকল্প ‘নৈতিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে বিপজ্জনক’ হওয়ার পাশাপাশি এগুলোতে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতাও ছিল। এদিকে, বেশ কিছু কোম্পানিতে এআই’র ধ্বংসযজ্ঞ ঠেকাতে মানুষকেই এগিয়ে আসতে হয়েছিল।

এই উদ্বেগের পরও, এআই গবেষণা এখনও আকর্ষণীয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

গত বছর বিভিন্ন এআই ডেভেলপমেন্ট ও অপারেশন কোম্পানিগুলোতে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের বিনিয়োগ বেড়ে প্রায় এক হাজার তিনশ কোটি ডলারে ঠেকেছে বলে জানিয়েছে সিয়াটল ভিত্তিক বাজার বিশ্লেষক কোম্পানি পিচবুক। আর ২০২২ সালের অক্টোবরের আগ পর্যন্ত এই খাতে বিনিয়োগ ছিল ছয়শ কোটি ডলার।