বৈশ্বিক জলবায়ু সংকটের জরুরী সমাধান হিসাবে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন অপসারণ শুরু হলেও এটি এখন প্রায় কয়েকশো কোটি ডলারের ব্যবসা হিসেবেও দাঁড়িয়ে গেছে।
Published : 24 Aug 2023, 03:06 PM
বৈশ্বিক জলবায়ু সংকটের জরুরী সমাধান হিসাবে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন অপসারণ শুরু হলেও এটি এখন প্রায় কয়েকশো কোটি ডলারের ব্যবসা হিসেবেও দাঁড়িয়ে গেছে। আর এই খাতে যারা কাজ করছেন, তারা এখন নজর ফেরাচ্ছেন সমুদ্রের দিকে।
প্রকৃতি থেকে সবচেয়ে বেশি কার্বন শোষণ করে সমুদ্র, যাকে তুলনা করা হয় পৃথিবীর ফুসফুস হিসাবে। আমাদের প্রয়োজনীয় মোট অক্সিজেনের অর্ধেক উৎপাদন করে সমুদ্র সেইসঙ্গে শোষণ করে নিঃসারিত মোট কার্বন ডাইঅক্সাইডের চারভাগের একভাগ। জলবায়ু সংকটে একধরনের ঢাল হিসাবে কাজ করে বিশাল এই জলরাশি।
সেই সমুদ্রকেও জলবায়ুর পরিবর্তনের শিকার হতে হচ্ছে। তাপ এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রের অম্লত্ব (অ্যাসিডিটি) বেড়ে যায়, ফলে হ্রাস পায় কার্যক্ষমতা।
অ্যাকুয়াটিক, ক্যাপচুরা, রানিং টাইডের মতো কোম্পানির সঙ্গে ‘এব কার্বনে’র মতো স্টার্টআপ সমুদ্রের রসায়নিক ভারসাম্য রক্ষা এবং প্রাকৃতিক সক্ষমতা বাড়াতে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে হাজির হয়েছে।
“সমুদ্রের রাসায়নিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি, যার ফলে সমুদ্রকে নিরাপদ করবে ও কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণে স্থিতিশীলতা আনবে,” বলেন এব কার্বনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও বেন টারবেল।
তিনি আশা করছেন, সমুদ্রের প্রাকৃতিক সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে প্রতি বছর দশ লাখ টন করে কার্বন ডাইঅক্সাইড অপসারণ করবে কোম্পানিটি।
পুরো প্রক্রিয়াটিকে তিনি এভাবে ব্যাখ্যা করেন: প্রথমে কোম্পানিটি তাদের মডিউলগুলো সমুদ্রের পানির কাছাকাছি স্থাপন করে। মডিউলগুলোতে একধরনের ত্বরিত-রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় যার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হলে সমুদ্রের পানির অম্লত্ব কমে আসে। এর ফলে ওই পানির কার্বন ডাইঅক্সাইড ধারণ ক্ষমতা বেড়ে যায়, এবং প্রাকৃতিকভাবে বাই কার্বনেট রূপে সংরক্ষণ করে। কোম্পানিটির প্রথম মডিউলটি ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের ‘সেকুইম বে’তে স্থাপন করা হয়েছে।
“ এই মডিউলগুলো যে কোনো স্থানেই বসানো যায় এবং সমুদ্রের পানিকে পরিশোধন করে এমন বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলোর পাশে মডিউল বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।” বলে যোগ করেন তিনি।
প্রযুক্তিটির সাশ্রয়ী, তাই এর বেশ সম্ভবনা রয়েছে বলেছে সিএনবিসি। এব তাদের কার্বন অপসারণ কর্মসূচি বিক্রি করছে স্ট্রাইপের মতো কোম্পানির কাছে, যারা নেট-জিরো লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এমন সেবা আকৃষ্ট করেছে প্রিলুড ভেঞ্চারসের মতো বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকেও।
“এই মুহূর্তে, কার্বনের অনেক বড় চাহিদা সম্পন্ন একটি বাজার রয়েছে, বড় করপোরেশনগুলো বায়ুমণ্ডল থেকে তাদের নিঃসরণের অংশ মুছে ফেলতে অর্থ খরচ করতে ইচ্ছুক। কেবল সেটিই কয়েকশো কোটি ডলারের সম্ভবনাময় বাজার।” বলেছেন প্রিলুড ভেঞ্চারসের ব্যবস্থাপন পরিচালক গেব্রিয়েল ক্রা।
টারবেল বলেন, বর্তমানে কার্বন অপসারণে প্রযুক্তিটির টনপ্রতি খরচ হয় একশো ডলার, কিন্তু বিভিন্ন স্থানে বড় পরিসরে স্থাপন করলে খুবই উল্লেখযোগ্যভাবে এই ব্যয় কমবে।
“বেশ কিছু প্রকল্প পানির লবনাক্ততা দূর করা বা ডিস্যালাইনেশনে কাজ করছে। এইসব প্রকল্প এবং উপকূলীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের মতো স্থাপনার সঙ্গে মিলে কাজ করলে আমরা যেমন ব্যয় সংকোচন সুবিধা পেতে পারি, তেমনিভাবে তারাও উপকৃত হতে পারে।” বলেন টারবেল।
প্রিলুডের পাশাপাশি, এব কার্বনের ওপর ইভোক ইনোভেশনস, কনগ্রুয়েন্ট ভেঞ্চার এবং প্রোপেলারের মতো বিনিয়োকারী প্রতিষ্ঠানের সু-নজর পড়েছে। কোম্পানিটি ইতোমধ্যেই দুই কোটি ৭৭ লাখ ডলারের তহবিল সংগ্রহ করেছে বলে জানিয়েছে।