“প্রতিটি উল্কাপিণ্ডের পতন আমাদের একটি নতুন সূত্র দিয়েছে এবং এখন আমরা আরও বড় ছবিটি দেখতে শুরু করেছি।”
Published : 01 Apr 2025, 02:06 PM
প্রথমবারের মতো গ্রহাণু বেল্টের একটি ভূতাত্ত্বিক মানচিত্র তৈরি করছেন বিজ্ঞানীরা। এটি মঙ্গল ও বৃহস্পতির গ্রহের মধ্যবর্তী অঞ্চলে পাথুরে মহাকাশ বস্তুতে ভরা।
উল্কাপিণ্ডের পতনের পথ অনুসরণ করে মহাকাশের এসব শিলা মূলত কোথা থেকে এসেছে তার অনেকগুলো এখন শনাক্ত করতে পেরেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
“বিষয়টি এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা এক রহস্য সমাধানের মতোই,” বলেছেন ‘এসইটিআই ইনস্টিটিউট’ ও ‘নাসা এমস রিসার্চ সেন্টার’-এর আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ পিটার জেনিসকেন্স।
“প্রতিটি উল্কাপিণ্ডের পতন আমাদের একটি নতুন সূত্র দিয়েছে এবং এখন আমরা আরও বড় ছবিটি দেখতে শুরু করেছি।”
প্রায় দশ বছর আগে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেছে এমন উল্কাপিণ্ডের উজ্জ্বল ঝলকানি ধারণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ও নেভাদায় ‘অল স্কাই’ ক্যামেরা স্থাপন করেছিলেন জেনিসকেন্স ও তার গবেষণা দল।
গোটা বিশ্বের অন্যান্য বিজ্ঞানী ও নাগরিক পর্যবেক্ষকরা এতে যোগ দিয়েছিলেন, যা এখন ‘গ্লোবাল ফায়ারবল অবজারভেটরি’ নামে পরিচিত।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ১৭টি উল্কাপাতের ঘটনা ট্র্যাক করেছেন তারা। পাশাপাশি ডোরবেল ও ড্যাশবোর্ড ক্যামেরা থেকে আরও বেশি তথ্য সংগ্রহ করেছেন গবেষকরা।
এখন পর্যন্ত ৭৫টি উল্কাপিণ্ডের উৎপত্তিস্থল শনাক্তের জন্য তাদের পথ যথেষ্ট ভালোভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন তারা। এসব উল্কাপিণ্ডের বেশিরভাগই গ্রহাণু বেল্ট থেকে এসেছে, যেখানে দশ লাখেরও বেশি গ্রহাণু সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
গবেষকরা বলছেন, এসব ছোট আকারে শিলা বড় আকারের গ্রহাণুর টুকরো, যা প্রাচীন সংঘর্ষে বিচ্ছিন্ন বা ভেঙে গিয়ে গঠন করেছে ধ্বংসাবশেষের ক্ষেত্র বা ‘পরিবার’।
গবেষণার একটি বড় অনুসন্ধান হচ্ছে ‘এইচ কনড্রাইটস’ নামে পরিচিত লোহাওয়ালা উল্কাপিণ্ডের একটি দল। এটি গ্রহাণু বেল্টের মূল অংশে করোনিস পরিবার থেকে এসেছে বলে গবেষকদের অনুমান।
এসব উল্কাপিণ্ডের কক্ষপথ ও এক্সপোজার বয়স রয়েছে অর্থাৎ এরা কতক্ষণ মহাকাশে ছিল তা করোনিস পরিবারের মধ্যে থাকা বিভিন্ন গ্রহাণু গুচ্ছের সঙ্গে মিলে যায়। যেমন– কারিন, করোনিস ২ ও করোনিস ৩ নামের গ্রহাণু গুচ্ছ।
অন্যদিকে ‘এইচ কনড্রাইট’ গ্রহাণুর আরেকটি দল নিলি পরিবার থেকে এসেছে বলে ধারণা গবেষকদের। তবে তৃতীয় দলটির সঙ্গে অভ্যন্তরীণ গ্রহাণু বেল্টের মাসালিয়া পরিবারের যোগ থাকতে পারে।
কম লোহাওয়ালা বিভিন্ন উল্কাপিণ্ড যাকে ‘এল’ ও ‘এলএল’ কনড্রাইট বলা হয় এর বেশিরভাগই অভ্যন্তরীণ গ্রহাণু বেল্ট থেকে আসে। এসব এলএল কনড্রাইট ফ্লোরা পরিবারের গ্রহাণুর সঙ্গে যুক্ত। বিজ্ঞানীদের দাবি, এসব এল কনড্রাইট হার্থা পরিবার থেকে এসেছে।
গ্রহাণু হার্থা দেখতে একেবারে অন্ধকার ও ক্ষতিগ্রস্থ, চার হাজার ছয়শ ৮ কোটি বছর আগে একটি বিশাল সংঘর্ষের কারণে পৃথিবীতে অনেক এল কনড্রাইট গ্রহাণু এসেছে।
পৃথিবীকে গ্রহাণুর আঘাত ঠেকাতে সহায়তা করতে পারে এ গবেষণা। কোনও গ্রহাণু যদি পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে তবে এর কক্ষপথ বিজ্ঞানীদের বলে দিতে পারে, এটি কোথা থেকে এসেছে এবং এটি কী দিয়ে তৈরি ও পৃথিবীকে রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
“আমরা কেবল শুরু করছি। মনে হচ্ছে আমরা যেনো এক নতুন বিশ্বের প্রথম রূপরেখা আঁকতে চলেছি,” বলেছেন জেনিসকেন্স।