এই ধরনের শব্দকে ‘ম্যাজিক ওয়ার্ড’ হিসেবে ডাকা হয়, যেখানে শিশুদের সৌজন্য ও সম্মান প্রদর্শন শেখানোর মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন আকাঙ্ক্ষা বা দাবিকে ভদ্রভাবে তুলে ধরা হয়।
Published : 27 May 2024, 03:09 PM
‘প্লিজ’ শব্দটি বলা ভদ্রতা নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত বিষয় বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
ছোটবেলা থেকে বেশিরভাগ শিশু কোনো কিছু চাওয়ার ভদ্র উপায় হিসেবে ‘প্লিজ’ বলা শিখে বড় হয়।
এই ধরনের শব্দকে ‘ম্যাজিক ওয়ার্ড’ হিসেবে ডাকা হয়, যেখানে শিশুদের সৌজন্য ও সম্মান প্রদর্শন শেখানোর মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন আকাঙ্ক্ষা বা দাবিকে ভদ্রভাবে প্রস্তাব করা হয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস এঞ্জেলেস - ইউসিএলএ’র নতুন এক গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, ‘প্লিজ’ সবসময় ভদ্রতার প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে বলা হয় না।
এর পরিবর্তে, ‘প্লিজ’ শব্দটিকে একটি কৌশলগত টুল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যা নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য দ্বন্দ্ব বা বাধা অপসারণে ব্যবহৃত হয়।
পিয়ার-রিভিউড একাডেমিক জার্নাল ‘সোশাল সাইকোলজি কোয়াটার্লি’তে প্রকাশিত এ গবেষণাটি ইউসিএল-এর সমাজবিজ্ঞানীরা পরিচালনা করেছেন।
গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রত্যাশার তুলনায় লোকেরা ‘প্লিজ’ শব্দটি অনেক কম ব্যবহার করেন এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘না’ শব্দের প্রতিক্রিয়ায় লোকজন প্লিজ’ শব্দটির ব্যবহার করে থাকেন।
উদাহরণ হিসেবে– কাউকে খাবার টেবিলে মাখন এগিয়ে দিতে বলা বা বিমানবন্দরে যেতে লিফট চাওয়ার সময় কেউ যখন ‘প্লিজ’ বলেন, তার অলিখিত মানে দাঁড়ায়, যাকে প্লিজ বলা হচ্ছে, তিনি সম্ভবত সাহায্য করতে অনিচ্ছুক বা অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত। ফলে, অনুরোধে আরও একটু জোর দিতেই প্লিজ’ শব্দটি যোগ হয়েছে।
এ গবেষণার বিভিন্ন ফলাফল থেকে ইঙ্গিত মেলে, শিশুদেরকে ভদ্রতার বিষয়ে ‘ওয়ান-সাইজ-ফিট-অল’ বা সবার জন্য একই নিয়ম শেখানোর পরিবর্তে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সংবেদনশীল হতে শেখানো আরও কার্যকর হতে পারে।
“যে কোনো সাধারণ নিয়ম, যেমন ‘প্লিজ’ বা ‘থ্যাংক ইউ’ বলা, এক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনায় আসে না। আর এতে সবসময় সম্মান বা ভদ্রতা ফুটে উঠবে, বিষয়টি এমনও নয়,” বলেন ইউসিএল’র স্নাতক শিক্ষার্থী ও এ গবেষণার প্রধান লেখক অ্যান্ড্রু চালফাউন।
“আর এ পদ্ধতি খুব কার্যকর নাও হতে পারে।”
এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘প্লিজ’ বললে হিতে বিপরীত ঘটার ঝুঁকিও থাকে।
“ভুল প্রেক্ষাপটে ‘প্লিজ’ বলা অনেকটা চাপ প্রয়োগ করার মতো শোনাতে পারে। এতে করে অন্যের সাহায্য করার ইচ্ছাটাও অনিশ্চিত হয়ে যায়।”
এই গবেষণার জন্য নিজেদের পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও সহকর্মীদের মধ্যে ১৭ ঘন্টার ভিডিও-রেকর্ড করা কথোপকথন বিশ্লেষণ করেছেন চালফাউন ও তার সহযোগী ইউসিএল’র সমাজবিজ্ঞানী জিওভানি রসি ও তানিয়া স্টিভার্স।
এইসব রেকর্ডিং স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশে ধারণ করা হয়েছে। এর উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, বাড়ি, কর্মক্ষেত্র ও বাইরের এলাকাগুলো।
এ গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন এমন বর্ণ, জাতি ও আর্থসামাজিক পটভূমি থেকে এসেছেন, যারা সাধারণত ব্রিটিশ ও আমেরিকান ইংরেজি ভাষায় কথা বলে থাকেন। তবে, লিখিত বা মৌখিক ব্যবসায়িক লেনদেন ও ফোন অনুরোধের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা ছিল না এতে।
গবেষণাটিতে এক হাজারের বেশি মানুষের অনুরোধ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে ‘প্লিজ’ শব্দটির ব্যবহার করা হয়েছে ৬৯ বার, যা সময়ের হিসাবে সাত শতাংশ। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যখন কোনও বাধার মুখে পড়ার ঝুঁকি ছিল। আর এক্ষেত্রে সম্মানের প্রয়োজনীয়তা, লিঙ্গের পার্থক্য বা অনুরোধের আপেক্ষিক আকারের তেমন ভূমিকা ছিল না।
পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের প্রায় অর্ধেকই শব্দটি এমন ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে দেখা গেছে, যারা এর আগে অনুরোধ জানানো ব্যক্তির অনিচ্ছার সম্মুখীন হয়েছেন বা তার অনুরোধটি এর আগে প্রতাখ্যাত হয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, এক নারীকে তার স্বামী রাতের খাবার খেতে টেবিলে বসার অনুরোধ জানিয়ে বারবার ‘প্লিজ’ বললেও কাজ হয়নি।।
এদিকে এক তৃতীয়াংশ ঘটনায় দেখা গেছে, যাকে অনুরোধ করা হচ্ছে, তিনি অন্য কাজে ব্যস্ত। উদাহরণ হিসেবে, একজন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে স্যুপ তৈরির অনুরোধ জানিয়ে ‘প্লিজ’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, তার স্ত্রী শিশুর বোতল ধোয়ার কাজে ব্যস্ত, সেটি জানার পরও।
তবে মজার বিষয় হল, শিশুরাও প্রাপ্তবয়স্কদের মতো একই রকম পরিস্থিতিতে ‘প্লিজ’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। এক পর্যবেক্ষণমূলক ভিডিওতে দেখা যায়, একজন কিশোরী তার মাকে একটি পোশাক কিনতে বলে ‘প্লিজ’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন শুধু প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ধারণা থেকে। কারণ এর আগেও তার একই ধরনের অনুরোধ নাকচ করা হয়েছিল।
“প্রত্যেক কমিউনিটির নিজস্ব নিয়ম আছে, যা থেকে কোনটি ভদ্র আচরণ হিসাবে গণ্য, সে বিষয়টি সংজ্ঞায়িত করা যায়,” বলেছেন চালফাউন।
“আমরা বুঝতে চাই এইসব নিয়ম দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করা হয় কি না, বা এর মধ্যে কোনো বিশেষ ধরনের নিয়ম আছে কি না।”
বাস্তব-জীবনের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট গবেষণা করে গবেষকরা আশা করছেন, এর মাধ্যমে সামাজিক আচরণের গতিশীলতা বোঝার আরও ভাল মডেল তৈরি করা সম্ভব হবে।