‘ডব্লিউএএসপি-১০৭ বি’-এ প্রত্যাশার চেয়ে প্রায় হাজার ভাগের এক ভাগ মিথেন রয়েছে। এর বায়ুমণ্ডলে সালফার ডাই অক্সাইড, জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাই অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইডও খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা।
Published : 23 May 2024, 12:34 PM
সম্প্রতি দূরবর্তী এক্সোপ্ল্যানেটের বিস্ময়কর রহস্য প্রকাশ করেছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ।
টেলিস্কোপটি বিজ্ঞানীদের কাছে এক দূরবর্তী এক্সোপ্ল্যানেটের অভ্যন্তরের নজিরবিহীন চেহারা প্রকাশ করেছে, যা এর গঠন ও কোর সম্পর্কে বিস্ময়কর তথ্য দিয়েছে।
‘ডব্লিউএএসপি-১০৭ বি’ নামের এক্সোপ্ল্যানেটটি এক বিশাল গ্রহ যার কোর পৃথিবীর চেয়ে ১২ গুণ ভারী ও সেখানে ধারণার চেয়ে অনেক কম মিথেন রয়েছে।
বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল ‘নেচার’-এ প্রকাশিত এ গবেষণার বিভিন্ন ফলাফল এই প্রথম এক্সোপ্ল্যানেটের মূল ভরের পরিমাপকে চিহ্নিত করেছে এবং গ্রহের বায়ুমণ্ডল ও অভ্যন্তরীণ বিষয় সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে।
‘ডব্লিউএএসপি-১০৭ বি’ পৃথিবী থেকে প্রায় ২০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এটি আকারে বৃহস্পতির মতো, তবে এ গ্রহটিতে বৃহস্পতির ভরের মাত্র এক-দশমাংশ রয়েছে। পাশাপাশি গ্রহটিকে হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো হালকা ও তুলতুলে দেখায় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
পৃথিবীর মতো ‘ডব্লিউএএসপি-১০৭ বি’ গ্রহটিতে জীবনের বিল্ডিং ব্লক বা অর্গানিক ফাংশনালাইজড অণু মিথেন থাকা সত্ত্বেও এটি মূল তারা’র কাছাকাছি থাকা ও শক্ত পৃষ্ঠের অভাবের কারণে বাসযোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি।
তবে, এ গ্রহটি নিয়ে পরীক্ষা করলে বিভিন্ন গ্রহ পরবর্তী পর্যায়ে কীভাবে বিবর্তিত হয় সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র মিলতে পারে বলে গবেষকদের ধারণা।
বিষয়টিকে ‘জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক ও এ গবেষণার প্রধান লেখক ডেভিড সিং ব্যাখ্যা করেছেন, “শতশত আলোকবর্ষ দূরে থাকা একটি গ্রহের ভেতরের দিক সম্পর্কে জানা বা দেখা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হয়। তবে আপনি যখন এর ভর, ব্যাসার্ধ, বায়ুমণ্ডলীয় গঠন ও এর ভেতরের তাপমাত্রা বা ভেতরে কী আছে এবং এর কোর কতটা ভারী তা বুঝতে চান তাহলে তা বোঝার জন্য আপনার কাছে সব ধরনের তথ্য রয়েছে।”
“এটি এখন এমন কিছু, যা আমরা নানা পদ্ধতিতে বিভিন্ন গ্যাস গ্রহের জন্য করতে পারি।”
গবেষণা দলটি দেখেছেন, ‘ডব্লিউএএসপি-১০৭ বি’-এ প্রত্যাশার চেয়ে প্রায় হাজার ভাগের এক ভাগ মিথেন রয়েছে। এর বায়ুমণ্ডলে সালফার ডাই অক্সাইড, জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাই অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইডও খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা।
এইসব ফলাফল থেকে ইঙ্গিত মেলে, ‘ডব্লিউএএসপি-১০৭ বি’-এর মিথেন অন্যান্য যৌগে রূপান্তরিত হতে পারে। যখন এটি গ্রহের অভ্যন্তর থেকে উঠে আসে তখন এটি অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ ও উপরের বায়ুমণ্ডলে তারার আলোর সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে।
গ্রহটিতে ইউরেনাস ও নেপচুনের চেয়ে বেশি ভারী উপাদানও রয়েছে, যা চরম পরিস্থিতিতে গ্রহটির বায়ুমণ্ডলীয় আচরণের নতুন ধাঁধা যোগ করে।
এ গবেষণার সহ-লেখক ও ‘জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি’র গ্রহ বিজ্ঞানের পিএইচডি’র শিক্ষার্থী জাফর রুস্তমকুলভ বলেছেন, “গ্রহটির এক উষ্ণ কোর রয়েছে এবং এই তাপের উৎস গ্যাসের রসায়নকে আরও গভীরে পরিবর্তন করে। এটি ভেতর থেকে শক্তিশালী ও কানেকটিভ বা সংবহনশীল মিশ্রণ চালাচ্ছে পাশাপাশি মিথেনকে ধ্বংস করছে এবং উচ্চ পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড তৈরি করছে।”
এ গবেষণাটি একটি এক্সোপ্ল্যানেটের ভেতর ও এর বায়ুমণ্ডলের মধ্যে এখনও সবচেয়ে স্পষ্ট যোগসূত্র প্রদান করে চলেছে।
গত বছর ৭০০ আলোকবর্ষ দূরে থাকা আরেকটি ‘ডব্লিউএএসপি-৩৯’-এ নামের এক্সোপ্ল্যানেটে সালফার ডাই অক্সাইড শনাক্ত করেছিল ওয়েব টেলিস্কোপটি, যার থেকে প্রথমবারের মতো তারা’র আলোর মাধ্যমে চালিত প্রতিক্রিয়ার ফলে গঠিত এক বায়ুমণ্ডলীয় যৌগের প্রমাণ মেলে।
‘জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি’র গবেষণা দলটি এখন খুঁজে দেখছে, কী কারণে ‘ডব্লিউএএসপি-১০৭ বি’-এর কোর এত গরম থাকতে পারে। গবেষকরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, তারা’র মহাকর্ষীয় টানের প্রভাব গ্রহটিকে প্রসারিত করতে ও টেনে ধরতে পারে, বিষয়টি পৃথিবীর সমুদ্রের জোয়ার তৈরিকারী শক্তির মতোই।
এইসব শক্তি বোঝার মাধ্যমে গ্রহের কেন্দ্রের উচ্চ তাপের বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
ওয়েব টেলিস্কোপের এই যুগান্তকারী গবেষণাটি কেবল রহস্যময় ‘ডব্লিউএএসপি-১০৭ বি’-এর ওপরই আলোকপাত করেনি বরং অন্যান্য এক্সোপ্লানেট ও তাতে প্রাণের উৎস থাকার সম্ভাবনা সন্ধানের জন্য নতুন পথও খুলে দেয়।