Published : 22 Dec 2022, 02:30 PM
টুইটার ক্রয় প্রস্তাব থেকে শুরু করে প্ল্যাটফর্মের মালিকানা নিজের হাতে নেওয়ার পরও একের পর একের এক নাটকীয়তা আর বিতর্কের জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন ইলন মাস্ক। আর তার এমন কর্মকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হচ্ছে টুইটারের বিকল্প প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিতি পাওয়া মাস্টোডন।
দু’মাস আগেও বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যমগুলোর তালিকায় নাম ছিল না মাস্টোডনের; প্ল্যাটফর্মটির নাম জানা ছিল না টুইটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনেকের। কিন্তু গত দুই মাসে প্ল্যাটফর্মটিতে নতুন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে লক্ষ্যণীয় হারে।
ইলন মাস্ক অক্টোবর মাসের শেষে টুইটারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরপরই মাস্টোডনে নতুন সাইন-আপের হার কয়েক ধাপে বেড়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি।
প্রতি ঘণ্টায় কতজন সেবাগ্রাহক মাস্টোডন ব্যবহার করছেন সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে সিএনবিসি জানিয়েছে, টুইটার নিয়ে মাস্কের প্রতিটি বিতর্কিত বক্তব্য ও সিদ্ধান্ত খবরের শিরোনামে আসার পর প্রতিবারই মাস্টোডান ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে।
১ অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবরের মধ্যে মাস্টোডনের ওয়েবসাইটে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ১৩০ জন করে নতুন ব্যবহারকারী সাইন-আপ বা নিবন্ধন করেছেন। ২৮ অক্টোবর মাস্ক টুইটারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর মাস্টোডনে নতুন ব্যবহারকারীদের নিবন্ধনের গড় সংখ্যা প্রতি ঘণ্টায় দুই হাজার ছাড়িয়ে যায়।
এর এক সপ্তাহ পর মাস্ক টুইটারের অর্ধেক কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রতি ঘণ্টায় গড়ে পাঁচ হাজারের বেশি নতুন ব্যবহারকারী যোগ হয়েছে মাস্টোডনে।
আর ১৭ নভেম্বরে বাকি কর্মীদের কাজে আরও ‘হার্ডকোর’ হতে বলেছিলেন মাস্ক। মাস্কের সেই বক্তব্যের জেরে টুইটার কর্মীরা দলবেধে ইস্তফা দেওয়া শুরু করার পর মাস্টোডনে প্রতি ঘণ্টায় নতুন ব্যবহারকারীদের নিবন্ধনের গড় সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে মাস্টোডনে নতুন ব্যবহারকারী সাইন-আপের হার আবারও বেড়েছে বলে জানিয়েছে সিএনবিসি।
ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্ত জনসাধারণের সামনে প্রকাশের অভিযোগে সংবাদকর্মীদের টুইটার অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন মাস্ক; নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল জাতিসংঘ, আর টুইটারের ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছিল ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন।
ওই ঘটনার জেরে মাস্টোডনে নতুন ব্যবহারকারীদের সাই-আপ ফের লক্ষ্যণীয় হারে বেড়েছে বলে উঠে এসেছে সিএনবিসির প্রতিবেদনে।
একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে মাস্ক টুইটারে অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের কনটেন্ট ও প্রোফাইলের লিংক শেয়ারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর।
মাস্ক টুইটারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনের রাজনীতিবিদ, সংবাদকর্মী, মিডিয়া কোম্পানি এবং লেখকরা মাস্টোডনে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা শুরু করেছেন বলে জানিয়েছে সিএনবিসি।
তবে, ওপেন-সোর্স প্ল্যাটফর্ম হিসেবে মাস্টোডন এখনও আকারে ছোট বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। এ প্ল্যাটফর্মটি নির্দিষ্ট একটি ওয়েবসাইট নির্ভর নয়; বরং কয়েকশ ছোট ছোট ওয়েবসাইট একে অন্যের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে সামাজিক যোগাযোগের কার্যক্রম পরিচালনা করে।
বুধবার পর্যন্ত মাস্টোডনের ব্যাবহারকারী সংখ্যা ছিল ৮৭ লাখ। সে তুলনায়, এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকেও টুইটার ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৭০ লাখ, যা মাস্টোডনের তুলনায় ২৯ গুণ বেশি।
আর এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিশ্বের বৃহত্তম সামাজিক মাধ্যম হিসেবে পরিচিত ফেইসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ২৯০ কোটি; যা মাস্টোডনের চেয়ে ৩০০ গুণেরও বেশি।