উত্তর কোরিয়ার নিজস্ব স্যাটেলাইট নিয়ে সমস্যা নয়, নিষেধাজ্ঞা স্যাটেলাইট পাঠানোর পদ্ধতিতে। জাতিসংঘের সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার পথে হাঁটার ঘোষণা দিয়েছে উত্তর কোরিয়া।
পৃথিবীর কক্ষপথে নিজেদের তৃতীয় গুপ্তচর স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রচেষ্টা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে উত্তর কোরিয়া।
ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রযুক্তি ব্যবহারে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে উত্তর কোরিয়ার ওপর। মহাকাশে রকেট পাঠাতেও ব্যবহার হয় একই প্রযুক্তি।
স্যাটেলাইটটি এই বুধবারের মধ্যেই উৎক্ষেপিত হতে পারে বলে জাপানকে জানিয়েছে পিয়ংইয়ং। সঙ্গেসঙ্গেই এ পদক্ষেপের সমালোচনা করে জাপান বলেছে, কিম জং-উনকে এ পরিকল্পনা থেকে সরে আসার ‘জোড়ালো আহ্বান’ তারা মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করবে।
ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছর উত্তর কোরিয়ার চালানো দুটি প্রচেষ্টাই বিব্রতকর ও খরচ সাপেক্ষ ফলাফল দেখিয়েছে, যেখানে উৎক্ষেপণের প্রাথমিক পর্যায়েই স্যাটেলাইটগুলো ভেঙে পড়ে।
আগের ঘটনাগুলোকে ‘গুরুতর ব্যর্থতা’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তারা।
প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়াও পিয়ংইয়ংকে এ উৎক্ষেপণ না চালানোর বিষয়ে সতর্ক করেছে। এ ছাড়া, ২০১৮ সালে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে করা এক চুক্তি খারিজ করার হুমকিও দিয়েছে দেশটি।
উত্তর কোরিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন কার্যক্রম চালানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এর মধ্যে রয়েছে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর প্রচেষ্টা চালানোর বিষয়টিও।
“তাদের লক্ষ্য স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হলেও এতে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির ব্যবহার জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলের শর্তগুলোর স্পষ্ট লঙ্ঘন।” --সংবাদকর্মীদের বলেন জাপানের প্রধান মন্ত্রী ফুমিও কিশিদা।
“এটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার ওপরও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।”
জাপান কোস্টগার্ডের মুখপাত্র কাজুও ওগাওয়া বলেন, উত্তর কোরীয় কর্মকর্তারা তিনটি সামুদ্রিক অঞ্চল শনাক্ত করেছেন, যেখানে রকেটের ধ্বংসাবশেষ আছড়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ উৎক্ষেপণ ঘটতে পারে ২২ নভেম্বর ও ৩০ নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে।
ওগাওয়ার তথ্য অনুসারে, শনাক্ত করা তিনটি অঞ্চল হল কোরীয় উপদ্বীপ, চীন ও ফিলিপিন্স সাগর।
মে ও আগস্টে গুপ্তচর স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পূর্ববর্তী প্রচেষ্টাগুলোতেও এইসব অঞ্চলের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, সম্ভাব্য তৃতীয় প্রচেষ্টাতেও একই পথ অনুসরণ করবে দেশটি।
কিশিদা বলেন, জাপানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে যুদ্ধজাহাজ ‘এজিস ডিস্ট্রয়ার’ ও লকহিড মার্টিনের বানানো ‘প্যাক-৩’ ক্ষেপণাস্ত্র। আর যে কোন ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনা ঠেকাতে প্রস্তুত এগুলো। তবে, এ বিষয়ে বিস্তারিত কোন তথ্য দেননি তিনি।
এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রচেষ্টাকে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি পরীক্ষার অজুহাত হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ।
উত্তর কোরিয়া বলেছে, প্রতিপক্ষদের ওপর আরও ভালো নজর রাখার জন্য একটি মহাকাশভিত্তিক নজরদারি ব্যবস্থা প্রয়োজন।
সেপ্টেম্বরে রাশিয়ায় কিম জং-উনের বিরল ও ঐতিহাসিক সফর এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে স্পেসপোর্ট ভোস্টোচনি কসমোড্রোম ভ্রমণের পর উত্তর কোরিয়ার প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রচেষ্টা এটি।
ওই আধুনিক স্পেস লঞ্চ সেন্টার ভ্রমণের পর পুতিন পিয়ংকে আশ্বাস দেন, উত্তর কোরিয়ার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে তিনি সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।
অন্যদিকে, ৩০ নভেম্বর নিজেদের প্রথম উদ্ধারকারী স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। মার্কিন সামরিক বাহিনীর ভ্যানডেনবার্গ ঘাঁটি থেকে এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে সহায়ক হিসেবে থাকবে স্পেসএক্স-এর ফ্যালকন ৯ রকেট।
উৎক্ষেপণের প্রাথমিক পর্যায়ে কারিগরি ত্রুটির কারণে উত্তর কোরিয়ার প্রথম দুটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। তবে, সফল উৎক্ষেপণ হওয়ার আগ পর্যন্ত এ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি।