কম্পিউটার তো দূরের কথা, স্মার্টফোনও ব্যবহার করতে পারেন না যিনি, তাকে ওই মামলায় জেলে থাকতে হয়েছে মাসের পর মাস। কারণ কী? কারণ হচ্ছে, অপকর্মে তার পরিচয়টি ব্যবহার করা হয়েছিল।
Published : 10 Jul 2023, 11:46 PM
সম্প্রতি বাংলাদেশের পাঁচ কোটি নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশ্লিষ্ট তথ্য ফাঁস হওয়ার খবর মিলেছে।
পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে নানা সংবাদ বেরোচ্ছে। প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন সব তথ্য।
এরইমধ্যে অনেকেরই প্রশ্ন– বেশ, আমার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা জন্মতারিখ অন্যরা জানলে কী সমস্যা? এটা কি ফেইসবুকের পাসওয়ার্ড অন্যরা জেনে ফেলার মতো ঝুঁকিপূর্ণ?
আসুন দেখে নেই, একজনের বা একসঙ্গে অনেকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের সঙ্গে কোন কোন ঝুঁকি জড়িয়ে আছে-
সামাজিক মাধ্যম: পরিচয় চুরির ফেরে পরলে কী বিপদ হয় জেনে নিতে পারেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রসরাজ দাসের কাছে।
তার নামে ফেইসবুক আইডি খুলে থেকে ধর্ম অবমাননাকর পোস্ট দেওয়া হয়। এর জেরে ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর নাসিরনগর উপজেলা সদরে হিন্দুদের ১৫টি মন্দির ও অর্ধশতাধিক ঘর-বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন
কম্পিউটার তো দূরের কথা, স্মার্টফোনও ব্যবহার করতে পারেন না যিনি, তাকে ওই মামলায় জেলে থাকতে হয়েছে মাসের পর মাস।
কারণ কী? কারণ হচ্ছে, অপকর্মে তার পরিচয়টি ব্যবহার করা হয়েছিল।
আর, কারও হাতে যদি আপনার নাম, জন্মতারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য থাকে, তবে পরিচয় নকলের কাজটি অনেক সহজ হয়ে যায়।
যেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র লাগে: বাংলাদেশে যে যে সেবা নেওয়ার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হয়, সেখানে কি কখনো সেই কার্ড স্ক্যান করতে হয়েছে? পরিচয়পত্রে যে তথ্যগুলো দেওয়া থাকে সেটি জানা থাকলে সহজেই অন্য কারো জাল পরিচয়পত্র তৈরি করা সম্ভব।
ব্লগার, অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক তার ফেইসবুক পোস্টে সেই শঙ্কার কথাটিই বললেন- “এসব ফেইক এনআইডি বিভিন্ন অপরাধে কাজে লাগবে। তারপর দায়দায়িত্ব এসে ঠেকবে আমাদের মতো নিরীহ জনসাধারণের কাঁধে।
এই এনআইডি দিয়ে হোটেলে রুম নিয়ে খুন করে পালিয়ে যাবে… পরে আসল এনআইডির মালিক পড়বে বিপদে!”
ফিশিং: বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে কারো ক্ষতি করাকে বলে ফিশিং। এটা অনেকটা টোপ দিয়ে মাছ ধরার মতো বিষয় বলেই একে ফিশিং বলা হয়। মোবাইল ব্যাংকিং এখন অসম্ভব জনপ্রিয়। সেইসঙ্গে বেড়েছে মোবাইল ব্যাংকিংনির্ভর জালিয়াতি। একজন গ্রাহকের নাম, মা-বাবার নাম, জন্ম তারিখ বা স্থায়ী ঠিকানার হদিস সবার জানা থাকার কথা নয়।
দুটি আলাপচারিতা মিলিয়ে দেখুন-
আলাপ ০১:
: হ্যালো। আমি বিকাশ/নগদ/রকেট অফিস থেকে বলছি। আপনার অ্যাকাউন্ট লকড হয়ে আছে। এখন আর লেনদেন করতে পারবেন না। এটা আনলক করতে হলে আপনার ফোনে একটি কোড যাবে, সেটি আমাকে বলতে হবে। বলার পর আমি আনলক করে দিচ্ছি।
আলাপ ০২:
: হ্যালো। আমি বিকাশ/নগদ/রকেট অফিস থেকে বলছি। আপনার নাম কি অমুক?
: জ্বি
: আপনার মা বা বাবার নাম কি এই?
: জ্বি
: আপনার জন্ম তারিখ কি এটা?
: জ্বি
: আপনার অ্যাকাউন্ট লকড হয়ে আছে। এখন আর লেনদেন করতে পারবেন না। এটা আনলক করতে হলে আপনার ফোনে একটি কোড যাবে, সেটি আমাকে বলতে হবে। বলার পর আমি আনলক করে দিচ্ছি।
এই দুই কথোপকথনের কোনটিতে একজন গ্রাহক বিশ্বাস করবেন যে, সেবাদাতা কোম্পানি থেকেই তার কাছে কল এসেছে?
সেবাদাতা কোম্পানি থেকে বারবার বলার পরও অনেকেই ভুলটি করেন। তথ্য ফাঁস হওয়ায় এর শঙ্কা আরও বাড়বে।
পরিচয় জালিয়াতিতে আর্থিক ক্ষতি কতটা?
২০২০ সালের তথ্য অনুসারে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই পরিচয় জালিয়াতির শিকার হয়েছেন প্রায় পাঁচ কোটি ব্যক্তি। আর আর্থিক হিসাবে এতে বেহাত হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি ডলারের বেশি।