ফ্ল্যাগশিপ মিশনে করুণ ব্যর্থতার কয়েক মাস পর বন্ধ হয়ে গেলো স্যার রিচার্ড ব্র্যানসনের রকেট কোম্পানি ভার্জিন ওয়ান।
স্যাটেলাইট কার্যক্রমকে স্থগিত করে বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে– এমন ঘোষণা দেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর এবার একেবারেই বন্ধ হয়ে গেলো কোম্পানিটি।
অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কোম্পানিটি তাদের রূপান্তরিত জেট ‘কসমিক গার্ল’ ও ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত সদর দপ্তরের বেশিরভাগসহ তাদের সম্পত্তি নিলামে তুলেছে বলে প্রতিবেদনে বলেছে বিবিসি।
জানুয়ারিতে কোম্পানিটি যুক্তরাজ্যে তাদের প্রথম স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপ করে। সে মিশনটিকে যুক্তরাজ্যের মহাকাশ যাত্রায় মাইলফলক হিসাবে দেখা হচ্ছিলো। সেটি মহাকাশে পৌঁছালেও কক্ষপথ থেকে ছিটকে পরে।
‘রোলিং স্টোন’ ব্যান্ডের ১৯৮১ সালের গানের লাইন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দেওয়া ‘স্টার্ট মি আপ’ শিরোনামের মিশনটি যুক্তরাজ্যকে মহাকাশ প্রতিযোগিতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উচ্চতায় নিয়ে যাবে, এমনটাই আশা করা করা হয়েছিলো।
যান্ত্রিক গোলযোগ রকেটটি স্যার রিচার্ডের মহাকাশ অভিলাসকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেয়। এর দুইমাস পর কোম্পানিটি বিপর্যয় ঠেকাতে তাদের সব কার্যক্রম কে স্থগিত করে প্রায় সব কর্মীকে ছাঁটাই করে দেয়।
ভার্জিন মালিকের জন্য সে ছিলো এক টালমাটাল সময়।
এই মাসের শুরুতে ব্র্যানসন সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন কোভিড মহামারীতে এয়ারলাইন ও পর্যটন ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে তার ব্যক্তিগত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দেড়শো কোটি পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
তারপরেও তিনি তার বিলিওনেয়ার খেতাব ধরে রাখতে সমর্থ হন, সানডে টাইমসের সর্বশেষ শীর্ষ ধনীর তালিকা অনুয়ায়ী তার অবশিষ্ট সম্পদের পরিমাণ দুইশো ৪০ কোটি পাউন্ড বা ৩২ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি।
স্টার্ট মি আপ মিশনের ব্যর্থতার পর ভার্জিন অরবিট নতুন বিনিয়োগ সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দেউলিয়া সুরক্ষা সুবিধার জন্য আবেদন করে।
কোম্পানিটির অন্যতম প্রতিযোগী ‘রকেট ল্যাব’ ভার্জিন অরবিটের ক্যালিফোর্নিয়ার সদর দপ্তরসহ বাদবাকি বেশিরভাগ সম্পদ কিনে ফেলেছে। রকেট উৎক্ষেপেণের উপযোগী করে রূপান্তর করা তাদের বোয়িং ৭৪৭ টিও বিক্রি করে দিয়েছে কোম্পানিটি। এখন পর্যন্ত তাদের সম্পদ বিক্রি করে অর্জিত অর্থের পরিমাণ তিন কোটি ৬৪ লাখ মার্কিন ডলার।
২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া কোম্পানিটির এখন পর্যন্ত মুনাফার পরিমাণ শূন্য।
কর্নওয়াল থেকে উৎক্ষেপিত রকেটটি যুক্তরাজ্যের মহাকাশ শিল্পকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবে, এমন আশায় বুক বেঁধে ছিলেন অনেকেই। কিছু যন্ত্রাংশের গোলযোগের দরুন সেই আশা তাসের ঘরের মতো উড়ে যায়ই সঙ্গে কোম্পানিটিও হয়ে যায় দেউলিয়া।
এই ঘটনায় ‘স্পেইসপোর্ট কর্নওয়াল’ নামের যুক্তরাজ্যের প্রথম বেসরকারি মহাকাশ উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন জাগে, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত ভার্জিন অরবিটই ছিলো তাদের গ্রাহক।
ভার্জিন অরবিটের ব্যর্থতা অন্যদের জন্যও মহাকাশ যাত্রার প্রতি সংশয় তৈরি করেছে। প্রতিবেদন বলছে আগামীতে এ ধরনের আরো ব্যর্থতা ঘটতে পারে, তা সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যের মহাকাশ উচ্চাভিলাষ তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার একজন মুখপাত্র বলেছেন, দেশটির মহাকাশ সেক্টর বছরে এক হাজার ৭৫০ কোটি পাউন্ড আয় করে এবং ৪৯ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের যোগান দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন ইউরোপজুড়ে ২০৩০ এর মধ্যে ছোট ছোট বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র তৈরিতে সহায়তা করতে একাধিক প্রকল্পে কাজ করে যাচ্ছে।