জনপ্রিয় এই ফ্রাঞ্চাইজের পরবর্তী সংস্করণ ‘অ্যাসাসিন’স ক্রিড মাইরেজ’ তৈরির লক্ষ্যে ফরাসি গেইম নির্মাতা ইউবিসফটের সঙ্গে কাজ করেছেন স্কটল্যান্ডের ‘এডিনবরা কলেজ অফ আর্ট’-এর জ্যেষ্ঠ প্রভাষক গ্লেয়ার অ্যান্ডারসন।
Published : 07 Jul 2023, 04:36 PM
জনপ্রিয় ভিডিও গেইম ‘অ্যাসাসিনস ক্রিড’-এ নবম শতাব্দীর প্রেক্ষাপট তৈরিতে সহায়তা করেছেন এক নারী শিল্প ইতিহাসবিদ বা আর্ট হিস্টরিয়ান। আর গেইমটি সম্পর্কে তিনি জেনেছেন নিজের সন্তানের কাছে।
জনপ্রিয় এই ফ্রাঞ্চাইজের পরবর্তী সংস্করণ ‘অ্যাসাসিন’স ক্রিড মাইরেজ’ তৈরির লক্ষ্যে ফরাসি গেইম নির্মাতা ইউবিসফটের সঙ্গে কাজ করেছেন স্কটল্যান্ডের ‘এডিনবরা কলেজ অফ আর্ট’-এর জ্যেষ্ঠ প্রভাষক গ্লেয়ার অ্যান্ডারসন।
ইউবিসফটের নিজেদের ইতিহাস দলের সঙ্গে মধ্যযুগীয় ইসলামিক ইতিহাস, শিল্প, স্থাপত্য, প্রত্নতত্ত্ব ও সভ্যতা বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন অ্যান্ডারসন। গেইমের নতুন ‘শিক্ষাবিষয়ক’ ফিচার ‘হিস্ট্রি অফ বাগদাদে’ও তার অবদান রয়েছে।
অ্যান্ডারসন নিজের গবেষণার কাজেই ঐতিহাসিক পরিবেশ ও স্থাপত্যের অভিজ্ঞতা তৈরির জন্য বিভিন্ন ভিডিও গেইমের ইঞ্জিন ব্যবহার শুরু করেন। আর সে কাজ করতে গিয়েই তার ২৪ বছর বয়সী সন্তান তাকে পরিচয় করিয়ে দেয় অ্যাসাসিনস ক্রিড গেইমের সঙ্গে।
মধ্যযুগের ইসলামিক শিল্প ও স্থাপত্য ইতিহাসে বিশেষ জ্ঞান রাখা অ্যান্ডারসন বলেন, “আমি নিজের কাজ সন্তানকে দেখাই। তখন ওর বয়স ছিল কেবল ১১। আর সে বলে, “আরে! তুমি এমন কাজে আগ্রহী থাকলে তোমার অ্যাসাসিন’স ক্রিড গেইমটি দেখা উচিৎ।”
“আমি গেইমটি দেখি ও এর মধ্যে থাকা মধ্যযুগীয় ইসলামিক স্থাপত্য ও শহুরে পরিবেশ দৃশ্যায়নের ধরন আমার পছন্দ হয়।”
“পরবর্তীতে আমি জানতে পারি গেইমের শিক্ষাগত দিক উন্নত করার লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন যাদুঘর ও শিক্ষাবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তখন আমি নিজেই যোগাযোগ করি ইউবিসফটের ‘হেড অফ ওয়ার্ড-বিল্ডিং’ ও ইতিহাসবিদ ম্যাক্সিম ডুরান্ডের সঙ্গে।”
আর এই কাজকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে এগিয়ে আসে ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবরার বাণিজ্যিক পরিষেবা বিভাগ ও এডিনবরা ইনোভেশন।
“আমার এই কাজের প্রভাব বেশ নাটকীয় ছিল। ইউবিসফটের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ফলে আমি নিজের কাজ ইউনিভার্সিটির বাইরে এনে তা সব বয়সী ভিডিও গেইমের খেলোয়ার আর দর্শকের সঙ্গে শেয়ার করতে পেরেছি।”
ইতিহাসের সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানোয় ইউবিসফটের প্রতিশ্রুতির প্রতি নিজের শ্রদ্ধার কথাও বললেন অ্যান্ডারসন।
অ্যাসাসিন’স ক্রিড মাইরেজ গেইমটি প্রকাশ পাবে ১২ অক্টোবর। আর এতে মধ্যযুগের আব্বাসীয় খেলাফতের রাজধানীতে গেইমটির মূল চরিত্র বাসিম ইবনে ইসহাকের শুরুর বছরগুলো তুলে ধরা হয়।
গেইমটির কাল্পনিক জগতে ৬৬টি ঐতিহাসিক স্থাপনা ঘুরে দেখতে পারবেন গেইমাররা। এদের প্রতিটিই একেক যুগের পোর্টাল হিসেবে কাজ করবে। আর এগুলো পাঁচটি ধাপে ভাগ করা। সেগুলো হল ‘আর্ট অ্যান্ড সায়েন্স’, ‘বিলিফস অ্যান্ড ডেইলি লাইফ’; ‘কোর্ট লাইফ’; ‘ইকোনমি’ ও ‘গভর্নমেন্ট’।
গেইমটির পেছনে কাজ করা চার বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টার একজন ৫০ বছর বয়সী অ্যান্ডারসন। আর গেইমের ‘হিস্ট্রি অফ বাগদাদ’ ফিচারের পেছনেও বেশ কিছু সংখ্যক যাদুঘরের অবদান আছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’।
নিজের কর্মজীবনে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুমানিক তিন থেকে চার হাজার শিক্ষার্থীকে খেলাফত আমলের স্থাপত্য, শিল্প ও ইতিহাস বিষয়ে পড়ানোর কথা বললেন তিনি।
“ইউবিসফটের অ্যাসাসিন’স ক্রিড ফ্রাঞ্চাইজ গোটা বিশ্বে কোটিরও বেশি গেইমারকে মধ্যযুগীয় ইসলামিক শিল্প ও স্থাপত্য ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। আর এর প্রভাবও অনেক চমৎকার।”
‘ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবরা’র অংশ ‘এডিনবরা কলেজ অফ আর্ট’। গেইমটির জন্য ইউনিভার্সিটির দুই স্নাতকোত্তর গবেষকের সঙ্গে কাজ করেছেন অ্যান্ডারসন। এ ছাড়া, যুক্তরাজ্যের সরকারি সংস্থা ‘ইকোনমিক অ্যান্ড সোশাল রিসার্চ কাউন্সিল’ ও অলাভজনক সংস্থা ‘বারাকাত ট্রাস্ট’-এর সমর্থনও ছিল তার কাজে।
ইউবিসফটের ‘হিউম্যানিটিস অ্যান্ড ইনস্পিরেশন’ বিভাগ প্রধান থিয়েরি নোয়েল বলেন, “গেইমারদের এমন আকর্ষণীয় ঐতিহাসিক সেটিং ও বিভিন্ন যুগ খোঁজার উপায় হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা সবসময়ই চালিয়েছে অ্যাসাসিন’স ক্রিড।”