Published : 17 Dec 2023, 07:01 PM
ইউরোপের নির্বাচন নিয়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে মাইক্রোসফটের এআই চ্যাটবট বিং --এমনই দাবি গবেষকদের।
গবেষণাটি চালিয়েছে বার্লিনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘অ্যালগরিদমওয়াচ’, যেখানে তারা সুইজারল্যান্ড ও জার্মানির বাভারিয়া ও হেসে অঞ্চলে হওয়া নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করেছেন সম্প্রতি ‘কোপাইলট’ হিসেবে রিব্র্যান্ডিং করা বিং চ্যাটবটকে।
গবেষকরা অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেন, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট এক তৃতীয়াংশ প্রশ্নের জবাবেই তথ্যগত ভুল আছে। এমনকি কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থাও রাখা হয়নি এতে।
সংগঠনটি বলেছে, তারা বিং থেকে এ জবাবগুলো সংগ্রহ করেছেন এ বছরের অগাস্ট থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে। আর বিং চ্যাটবট উন্মোচনের পর নির্বাচনগুলো হওয়ায় তারা এ তিনটি অঞ্চল বেছে নিয়েছেন।
এ ছাড়া, গবেষকরা বিভিন্ন স্থানীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নেওয়ার পাশাপাশি জার্মান, ইংরেজি ও ফরাসি, এ তিন ভাষায় চ্যাটবটের জবাব তুলনা করেছেন।
এ পরীক্ষায় গবেষকরা চ্যাটবটটির কাছে বিভিন্ন প্রাথমিক তথ্য সম্পর্কে জানতে চান, যার মধ্যে রয়েছে নির্বাচনে কীভাবে ভোট দিতে হয়, কতজন প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন, ভোটার সংখ্যার মতো বিষয়াদি। সংবাদ প্রতিবেদনের ভিত্তিতেও কয়েকটি প্রম্পট ব্যবহার করা হয়েছে এতে।
পরবর্তীতে, সম্পূরক প্রশ্ন হিসেবে প্রার্থীদের অবস্থান ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করেন গবেষকরা। এর মধ্যে রয়েছে বাভারিয়ার ঘটনাও, যেখানে বিভিন্ন স্ক্যান্ডালের কারণে নির্বাচনী প্রচারণা ভেস্তে গিয়েছিল।
চ্যাটবটের জবাবগুলোকে তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করেছে অ্যালগরিদম ওয়াচ। এর একটি হল বিভিন্ন এমন জবাব, যেখানে বিভ্রান্তিকর ও অর্থহীন তথ্য ছিল। আর বাকি দুটি হল, এমন জবাব, যেখানে তথ্যের অসম্পূর্ণতার অজুহাত দিয়ে জবাব দিতে রাজি হয়নি চ্যাটবট ও এমন জবাব, যেগুলো পুরোপুরি নির্ভুল।
বিংয়ের বিভিন্ন ভুল জবাবের মধ্যে রয়েছে নির্বাচন নিয়ে ভুয়া বিষয়, নির্বাচনের ভুল তারিখ, ভুল ভোট সংখ্যা এমনকি কিছু ক্ষেত্রে এমন প্রার্থীদের নাম দেখানো, যারা নির্বাচনে অংশই নেননি। আর চ্যাটবটে এ ধরনের ভুল জবাব দেওয়ার প্রবণতা ৩১ শতাংশ।
“এমনকি চ্যাটবটটি যখন একক সূত্র থেকেও ভোটার সংখ্যা বের করেছে, তখনও প্রায়শই সংশ্লিষ্ট উৎসের চেয়ে ভিন্ন জবাব দেখা গেছে। এমনকি বিভিন্ন সূত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর র্যাংকিং একরকম দেখা গেলেও চ্যাটবট দেখিয়েছে অন্যভাবে।” --উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।
বিং/কোপাইলটের জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করেছে মাইক্রোসফট, যেখানে বিংয়ের ভুল, বিপজ্জনক ও অসৌজন্যমূলক জবাব ঠেকানোর বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। এআইবিষয়ক এমন বেশিরভাগ নির্দেশিকার ক্ষেত্রেই, কোম্পানির নীতিমালা লঙ্ঘনের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে থাকে চ্যাটবট। গবেষকদের পরীক্ষায় ৩৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই প্রশ্ন এড়িয়ে গেছে বিং। আর বাকি ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে নির্ভুল জবাব দিয়েছে চ্যাটবটটি।
অ্যালগরিদম ওয়াচ বলেছে, এ গবেষণা চালানোর সময় বিভিন্ন মতামত সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের ক্ষেত্রে কোম্পানির নীতিমালা অবলম্বন করেছে বিং। তবে, যুক্তিভিত্তিক প্রশ্নগুলোর বেলায় এমন ঘটেনি। কয়েকটি ক্ষেত্রে ‘দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগকেও’ সত্য হিসেবে উপস্থাপন করেছে চ্যাটবটটি।
এ ছাড়া, ইংরেজি বাদে অন্যান্য ভাষায় বিং খুবই বাজে পারফর্মেন্স দেখিয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
প্রযুক্তি সাইট ভার্জকে পাঠানো বিবৃতিতে মাইক্রোসফট বলেছে, নিজেদের কথোপকথনমূলক এআই প্ল্যাটফর্মগুলো উন্নত করার লক্ষ্যে, বিশেষ করে ২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনকে মাথায় রেখে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে কোম্পানিটি। এর মধ্যে রয়েছে কোপাইলটে তথ্যের জন্য বিশ্বাসযোগ্য সূত্রের ওপর মনযোগ দেওয়ার বিষয়টিও।
নির্বাচনে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার ক্ষেত্রে এআই ব্যবহারকে বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। নভেম্বরে মাইক্রোসফট বলেছিল, ডিপফেইক ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ভুল তথ্যের বিস্তার ঠেকাতে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহৃত এআইয়ের তৈরি কনটেন্ট সম্পর্কে তথ্য প্রকাশের লক্ষ্যে বিভিন্ন বিল উত্থাপন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা। এ ছাড়া, মার্কিন সংস্থা ‘ফেডারেল ইলেকশন কমিশন’ সম্ভবত এমন এআইভিত্তিক বিজ্ঞাপন দেখানোর সংখ্যায় লাগাম টানতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ভার্জ।