এর লেখা সম্ভবত দার্শনিক ফিলোডেমাসের। খাদ্য সংকটের মতো প্রতিকূল সময়েও মানুষ কীভাবে আনন্দ পেতে পারে, লেখাটিতে সে সম্পর্কে নিজের ধারণা প্রকাশ করেছেন তিনি।
Published : 07 Feb 2024, 06:52 PM
দুই হাজার বছরের পুরনো এক স্ক্রোল পুড়ে গিয়েছিল ভিসুভিয়াসের অগ্নুৎপাতে। গোপন সেই হাতে লেখা বাণীর অর্থ উদ্ধারে এআই ব্যবহার করেছেন গবেষকরা।
পুড়ে যাওয়া পাণ্ডুলিপির অবশিষ্টাংশে গ্রিক দার্শনিক এপিকারাসের এমন কিছু গানের নিদর্শন মিলেছে, যা এপিকিউরিয়ান দর্শনশাস্ত্রে আগে কখনও দেখা যায়নি।
এপিকিউরানিজম দর্শনের অনুসারীরা ‘এপিকিউরিয়ান’ নামে পরিচিত। আর এ দর্শনের প্রতিষ্ঠা খ্রিস্টপূর্ব ৩০৭ অব্দে, যার মূল উদ্দীপক ছিল আনন্দ ও ‘হেডোনিজম’ (যেখানে ভোগসুখ বা আনন্দই শ্রেয়)।
পাণ্ডলিপিটির ডিজিটাল স্ক্যানিংয়ের পর একে একটি পিণ্ডের মতো দেখাচ্ছিল। আর এর বিভিন্ন লেখা বুঝতে ও অক্ষর শনাক্তে থ্রিডি ম্যাপিং ও এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন গবেষকরা।
গবেষকদের অনুমান বলছে, লেখাটি এসেছে দার্শনিক ফিলোডেমাসের কাছ থেকে। খাদ্য সংকটের মতো প্রতিকূল মূহুর্তেও মানুষ কীভাবে আনন্দ পেতে পারে, লেখাটিতে সে সম্পর্কে নিজের ধারণা প্রকাশ করেছেন তিনি।
ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ যুগান্তকারী অগ্রগতি নিয়ে কাজ করেছেন গবেষকত্রয়ী ‘ফ্রি ইউনিভার্সিটি বার্লিন’-এর অধ্যাপক ইউসেফ নাদের, ‘ইউনিভার্সিটি অফ নেব্রাস্কা-লিংকন’-এর অধ্যাপক লুক ফ্যারিটর এবং ‘সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি জুরিখ’-এর জুলিয়ান শিলিগার। আর এ কৌশল ব্যবহার করে এ পাঠ্যের বিস্তারিত রহস্য উন্মোচনের লক্ষ্য নিয়েছেন তারা।
পাণ্ডুলিপিটির প্রথম খোঁজ মেলে ১৮ শতকে, যখন এক কৃষক মাটির নিচে তলিয়ে যাওয়া প্রাচীন শহর ‘হারকিউলেনিয়াম’-এর ওপর কূপ খনন করার সময় একটি রোমান ভিলার খোঁজ পান।
সে সময় অগ্ন্যৎপাতের কারণে বিভিন্ন এমন পান্ডুলিপির বিশাল এক লাইব্রেরি বা পাঠাগারের ধ্বংসাবশেষ তাপের প্রভাবে ছাই হয়ে যায়। তবে, অসম্ভব ভঙ্গুর হলেও এগুলো এখনও অক্ষত আছে।
সেই প্রাচীন স্ক্রোলের রহস্য উন্মোচনে বেশিরভাগ প্রচেষ্টাই সফল হয়নি। কারণ, এর মধ্যে ছয়’শরও বেশি স্ক্রোল খুলে দেখার আগেই ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় সেগুলো আর পড়া সম্ভব হয়নি। আর এ পাঠ্যগুলো ডিকোড করা গেলে প্রাচীন সাহিত্যের দ্বিগুণের বেশি রহস্য উন্মোচনের সম্ভাবনা আছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
২০২৩ সালের মার্চে এই হারকিউলেনিয়াম এলাকা থেকে উদ্ধার করা স্ক্রোল ডিকোড করার লক্ষ্যে ৮৫ হাজার ডলার নগদ পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন গবেষকরা।
“এক বছরের যুগান্তকারী অগ্রগতি চালানোর পর এ পুরস্কার জুটেছে,” উল্লেখ রয়েছে ভিসুভিয়াস চ্যালেঞ্জ-এর ওয়েবসাইটে।
“প্রায় পৌনে তিনশ বছর পর ‘হারকিউলেনিয়াম প্যাপিরি’র প্রাচীন ধাঁধাটির সমাধান মিলেছে। তবে, এটা কেবল শুরু।”
পুরস্কারটির বিচারকদের একজন ছিলেন ‘ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটি’র ক্লাসিস্ট বব ফাউলার, যিনি এ কীর্তিকে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। “এর মাধ্যমে আরও কতো রহস্য যে উন্মোচিত হতে পারে, তা কেউই জানে না,” বৈজ্ঞানিক জার্নাল নেচার’কে বলেছেন তিনি।