“মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মেটাকে অবশ্যই আরও কাজ করার পাশাপাশি এমন ‘অলংকৃত’ হুমকি ব্যবহারের অনুমোদন দিতে হবে।”
Published : 11 Jan 2023, 12:07 PM
ফেইসবুকের মালিক কোম্পানি মেটার ওভারসাইট বোর্ড বলছে, ইরানের আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির বিরুদ্ধে আন্দোলনের সাধারণ স্লোগান দেওয়া এক পোস্ট সরিয়ে ভুল করেছে প্ল্যাটফর্মটি।
জুলাইতে মেটা মডারেটররা বলেন, প্ল্যাটফর্মটিতে ‘মার্গ বার খামেনি’ (‘খামেনির মৃত্যু’) বাক্যাংশের ব্যবহার তাদের নীতিমালা ভঙ্গ করেছে।
ওভারসাইট বোর্ড বলেছে, এই বাক্যাংশ ‘খামেনি হটাও’ বোঝাতে ব্যবহৃত হতো ও এতে কোনো ‘সহিংসতার ঝুঁকি’ নেই। পাশাপাশি, ‘তুলনামূলক ভালো উপায়ে রাজনৈতিক বক্তব্য সুরক্ষার’ জন্য বোর্ড কয়েকটি পরামর্শও দিয়েছে।
বিবিসি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেটার প্ল্যাটফর্মে কী ধরনের কনটেন্টের অনুমোদন দেওয়া উচিৎ, তা নিয়ে ওভারসাইট বোর্ড স্বাধীনভাবে কাজ করে। ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের বেলাতেও এটি প্রযোজ্য।
ইরানের প্রধান নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির বিরুদ্ধে দেশজুড়ে চলমান আন্দোলনের বিপরীতে সেপ্টেম্বর থেকে মেটার বিভিন্ন সামাজিক নেটওয়ার্কে প্রবেশাধিকার সীমিত করতে শুরু করে দেশটির নিয়ন্ত্রকরা। এর আগে দেশটির অসংখ্য নাগরিক বিভিন্ন সংবাদের জন্য এগুলোর ওপর নির্ভর করতেন।
এই চলমান অস্থিরতায় বিক্ষোভকারীদের ফারসি ভাষায় ‘মার্গ বার খামেনি’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে। এই আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে যখন দেশটির নীতি পুলিশ মাহশা আমিনি নামে এক নারীকে ‘ঠিকভাবে হিজাব না পরার’ অভিযোগে আটকের পর তার মৃত্যু ঘটে।
দেশটির কর্তৃপক্ষ এই আন্দোলনকে ‘দাঙ্গা’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর ‘প্রাণঘাতি বল’ প্রয়োগ করে এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। অলাভজনক সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্টস নিউজ এজেন্সি (এইচআরএএনএ)’র তথ্য অনুযায়ী, আন্দোলনে এখন পর্যন্ত অন্তত পাঁচশ ১৯ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন ও গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৯ হাজার তিনশ জন।
আন্দোলনকারী চার নেতাকে মৃত্যদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর আগে, জাতিসংঘ একে ‘জোরপূর্বক স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে অন্যায় বিচার’ বলে নিন্দা জানিয়েছে।
“ইরানের প্রেক্ষাপটে বোর্ড অনুসন্ধান করে খুঁজে পেয়েছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মেটাকে অবশ্যই আরও কাজ করার পাশাপাশি এমন ‘অলংকৃত’ হুমকি ব্যবহারের অনুমোদন দিতে হবে।” --বলেছে ফেইসবুকের ওভারসাইট বোর্ড।
“ইরান সরকার পদ্ধতিগতভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দমন করে। এর ফলে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো ভিন্নমত প্রকাশের মূল ফোরাম হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে, মেটা যেন ব্যবহারকারীদের কণ্ঠস্বর সমর্থন করে, সেটি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
ওভারসাইট বোর্ড আরও যোগ করে, গত জুলাইয়ে ইরানের ‘ন্যাশনাল ডে অফ হিজাব অ্যান্ড চ্যাসটিটি’র সময় সংঘটিত সরকার বিরোধী বিক্ষোভ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর পাশাপাশি মডারেটরদের ‘মার্গ বার খামেনি’ স্লোগান থাকা কনটেন্ট না সরানোর নির্দেশ দেওয়া উচিত ছিল মেটার।
“এই ঘটনায় যেমন দেখাচ্ছে, এটি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ার কারণে নারী অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে দেওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক বক্তব্য বন্ধ হয়ে যায়।”
‘ইরানের মতো দেশ, যেখানে ঐতিহাসিকভাবে বিস্তৃত বিভিন্ন আন্দোলন সহিংসতার মাধ্যমে দমন করা হয়, এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তুলনামূলক ভালো উপায়ে রাজনৈতিক বক্তব্য সুরক্ষায়’ কিছু পরামর্শ দেওয়ার কথা বলেছে বোর্ড।
পাশাপাশি, তারা মেটাকে সহিংস কনটেন্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়াদি নিজেদের নির্দেশিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে বলেছে। এর মধ্যে আছে, বিভিন্ন রাষ্ট্র প্রধানদের বিরুদ্ধে অলংকৃত হুমকির অনুমোদনের বিষয়টিও।
২০২২ সালে ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর কোনো কোনো দেশের ব্যবহারকারীদের মেটা সুযোগ দিয়েছিল ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুকামনা করে পোস্ট দেওয়ার। বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসায় অবশ্য এর দুইদিন পরই তারা ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিল।