বিজ্ঞানীরা ক্রমাগত সতর্ক করেছেন, সৌর ঝড়ের কারণে পৃথিবী বিপর্যয়ের মুখে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এমনকি ভূপৃষ্ঠের নির্ভরযোগ্য অবকাঠামোও ধ্বংস করে দেওয়ার সক্ষমতা আছে এর।
Published : 12 Dec 2023, 04:57 PM
সৌর ঝড়ের কারণে ঘটতে পারে ট্রেন দুর্ঘটনা --এমনই সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
সূর্যপৃষ্ঠে বিক্ষিপ্ত শক্তি থেকে তৈরি হওয়া এমন চৌম্বক আলোড়নে ভূপৃষ্ঠের যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গ্রিডসহ সকল ক্ষেত্রেই ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
বিজ্ঞানীরা ক্রমাগত সতর্ক করেছেন, সৌর ঝড়ের কারণে পৃথিবী বিপর্যয়ের মুখে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এমনকি ভূপৃষ্ঠের নির্ভরযোগ্য অবকাঠামোও ধ্বংস করে দেওয়ার সক্ষমতা আছে এর।
নতুন এক গবেষণা বলছে– এ ধরনের আবহাওয়া রেল সংকেতে কারিগরি ত্রুটি ঘটানোর জন্য যথেষ্ট, যার পরিনতি হতে পারে ট্রেন দুর্ঘটনা।
সৌর ঝড় থেকে তৈরি হওয়া ভূ-চুম্বকীয় তরঙ্গ কীভাবে বিপদের কারণ হতে পারে, তা জানতে এ গবেষণায় দুটি রেল রুট পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা। এর একটি রুট গিয়েছে যুক্তরাজ্যের প্রেস্টন শহর থেকে পশ্চিম উপকূলীয় ল্যাঙ্কাস্টার শহরে। আরেকটি স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহর থেকে গিয়েছে রাজধানী এডিনবার্গে।
উভয় রুটই রেল সংকেতের ওপর নির্ভরশীল। যুক্তরাজ্যে এমন ৫০ হাজারের বেশি রেল রুট আছে, যেগুলো বৈদ্যুতিক সার্কিটওয়ালা রেলওয়ে সংকেতের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত।
নতুন এ গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, মহাকাশ সংশ্লিষ্ট আবহাওয়ার কারণে এইসব সার্কিটের গতিপথ পরিবর্তিত হতে পারে। গবেষকদের অনুমান বলছে, কয়েক দশক পরপরই এমনটি ঘটার ঝুঁকি রয়েছে।
“আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, এমন আবহাওয়া রেল সংকেত উভয় দিকেই পরিবর্তন ঘটাতে পারে, যেখানে লাল রঙের সংকেত সবুজে অথবা সবুজ রঙের সংকেত লালে রূপান্তরের ঝুঁকি আছে। আর নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিলে, এ বিষয়ে কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” --বলেন ‘ল্যাঙ্কাস্টার ইউনিভার্সিটি’র পদার্থবিদ্যা বিভাগের ছাত্র ক্যামেরন প্যাটারসন।
“গবেষণায় আমরা এমন এক কম্পিউটার মডেল বানিয়েছি, যেখানে ট্র্যাক সিগনালিং ব্যবস্থার বিভিন্ন উপাদানের জন্য বাস্তবসম্মত স্পেসিফিকেশন ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষণায় আমরা খুঁজে পেয়েছি, ট্র্যাক সার্কিটে এ ধরনের ত্রুটি ঘটানোর মতো ঝুঁকিপূর্ণ আবহাওয়া যুক্তরাজ্যে কয়েক দশক পরপরই ঘটতে পারে।”
এর আগে প্যাটারসনের কাজ করা এক গবেষণায় উঠে আসে, সৌর ঝড় ‘এমন’ ত্রুটি ঘটাতে পারে, যেখানে ট্র্যাকের সংকেত সবুজ থেকে লাল হয়ে যায়।
তবে, নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, এ পরিস্থিতির বিপরীতও ঘটার ঝুঁকি আছে, যেখানে লাল রঙের সংকেত সবুজে পরিণত হয়। এ ছাড়া, এমনটি ঘটার ক্ষেত্রে তেমন শক্তিও খরচ হয় না, যা থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, তুলনামূলক কম ক্ষমতার সৌর ঝড়ে এমনটি ঘটার ঝুঁকি বেশি।
“আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের সৌর ঝড় বিরল হলেও, এতে রেল সিগনালিং ব্যবস্থায় গোলোযোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ফলে, যাত্রায় বিলম্ব এমনকি যাত্রীর নিরাপত্তার ওপরও বড় ঝুঁকি দেখা যাচ্ছে। আর এগুলোর বৈশিষ্ট্য থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, এ ধরনের উচ্চ বা নিম্নমাত্রার ঝড়ের জন্য পূর্ব পরিকল্পনা করা জটিল। তবে, বিষয়টি পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়াও সঠিক সমাধান নয়।”
১৮৫৯ সালে এমনই এক ভূচৌম্বকীয় ঝড় আঘাত হেনেছিল পৃথিবীতে, যা ‘ক্যারিংটন ইভেন্ট’ নামে পরিচিত। এটি এত বেশি শক্তিশালী ছিল যে, টেলিগ্রাফ সংকেত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য জায়গাতেও ব্যাঘাত ঘটেছিল।
আজকের দিনে এমন ঝড় পুনরায় ফিরে এলে, এর ক্ষতির মাত্রা আগের চেয়েও বেশি হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এর মধ্যে রয়েছে গবেষণা চালানো ট্রেন রুট দুটিতে বড় বিভ্রাট সৃষ্টির ঝুঁকিও।
তবে, সাম্প্রতিক সময় ঘাটলে, তুলনামূলক কম ক্ষমতার সৌর ঝড়ের বেশ কিছু উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায়। এর একটি হল ২০০৩ সালে সুইডেনের মালমো শহরে ঘটে যাওয়া সৌর ঝড়ের ঘটনা।
গবেষণাটির বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে ‘রং সাইড’ ফেইলিয়র্স কজড বাই জিওম্যাগনেটিকালি ইনডিউসড কারেন্টস ইন ইলেক্ট্রিফায়েড রেলওয়ে সিগনালিং সিস্টেমস ইন দ্য ইউকে’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে, যা প্রকাশ পেয়েছে বৈজ্ঞানিক জার্নাল ‘স্পেস ওয়েদার’-এ।