কোনো বিশাল পরিবর্তনের মুখে “ভড়কে যাওয়াই স্বাভাবিক”। তবে তিনি যোগ করেন, “ইতিহাস দেখিয়েছে নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে আসা সংকটের সমাধানও সম্ভব।”
Published : 15 Jul 2023, 12:20 PM
এআই নিয়ে ভয় পাওয়ার মতো কথা বলছেন অনেকেই, তবে বিল গেটস সম্ভবত সেই লাইনে ভাবছেন না। তার চিন্তাভাবনা এআইয়ের প্রতিশ্রুতিশীল ভবিষ্যতের দিকেই।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা, মানুষের চাকরি চলে যাওয়ার মতো বড় বড় ঝুঁকির ক্ষেত্রগুলো নিয়ে একটি ব্লগপোস্টে নিজের চিন্তাভাবনা শেয়ার করেছেন মাইক্রোসফটের এই সহপ্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু তিনি জোর দিয়ে বলেছেন সেগুলোর “সবই সমাধানযোগ্য।”
“এই প্রথম যে নতুন কোনো উদ্ভাবনের সঙ্গে তৈরি হওয়া ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলাপ হচ্ছে, এমন নয়” বলেছেন গেটস।
“এ কাজগুলো আমরা এর আগেও করেছি।”
এর আগে বড় পরিবর্তন আনা উদ্ভাবনগুলোর সঙ্গে এআইকে মিলিয়ে গেটস বলেন, যখন মোটরগাড়ি এল তখন যাত্রীদের সিট বেল্ট বাঁধা, গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে রাখা বা বাধ্যতামূলক ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো বিভিন্ন নিরাপত্তা মানদণ্ডও তৈরি করতে হয়েছে।
গেটস বলেন, কোনো উদ্ভাবন শুরুতে “অনেক ঝামেলা” তৈরি করতে পারে কিন্তু শেষ পর্যন্ত “সমাজের কল্যাণেই লাগে”।
নিজেদের জনপ্রিয় পণ্যগুলোয় জেনারেটিভ এআই যুক্ত করে এআই জনপ্রিয় করায় নেতৃত্ব দিচ্ছে মাইক্রোসফট। বলা হচ্ছে, এটি মানুষকে আরও করিৎকার্মা ও সৃজনশীল হতে সাহায্য করবে। তবে, এই প্রযুক্তির হাত ধরেই খুব দ্রুত চূড়ান্ত ধ্বংস নেমে আসবে - এমন সতর্কতাও দিয়েছেন প্রযুক্তি সেক্টরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
মে মাসের শেষের দিকে মাইক্রোসফটের সিটিও কেভিন স্কট সহ কয়েক ডজন এআই গবেষক এবং কিছু তারকা এক বাক্যের একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। সেখানে লেখা ছিলো: “এআইয়ের কারণে সভ্যাতা বিলুপ্তির আশঙ্কাকে মহামারী এবং পারমাণবিক যুদ্ধের মতো বৈশ্বিক ঝুঁকির কাতারে স্থান দেওয়া উচিৎ।”
গেটস এর আগেও বলেছেন, এআই প্রলয় ডেকে আনবে এমন ভয় পাওয়া অনুচিত। এ বছরের শুরুতে ভিন্ন একটি ব্লগপোস্টে তিনি লেখেন, “কোনো যন্ত্রের পক্ষে কি মানুষকে শত্রু ভাবা সম্ভব? মানুষের স্বার্থ আর তার স্বার্থকে আলাদা ভাবা সম্ভব? কিংবা কোনো যন্ত্রের পক্ষে কি মানুষের উপকার করা বন্ধ করা সম্ভব? হয়তো, কিন্তু গত কয়েকমাস আগে যখন এআই প্রযুক্তি বিকশিত হয়নি, তখন এই সংকট যে মাত্রায় ছিল, এখনও তেমনই আছে।”
নতুন ব্লগপোস্টে গেটস বলেছেন, তার ভাবনায় এআইয়ের সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে ডিপফেইক এবং এআই ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে নির্বাচন এবং গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করা। গেটস লিখেছেন তিনি আশাবাদী যে এআই যেমন ডিপফেইক বানাতে পারে, ঠিক তেমনি ডিপফেইককে শনাক্তও করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, ডিপফেইকের ব্যবহার এবং সেগুলোকে শনাক্ত করার ব্যাপারে আইনকে স্পষ্ট হতে হবে - “যেন সবাই বুঝতে পারে যে, যেটা দেখছেন বা শুনছেন সেটা আসল নয়।”
হ্যাকারদল, এমনকি বিভিন্ন দেশের জন্য এআই ব্যবহার করে জনগণ ও সরকারের ওপর সাইবার আক্রমণ অনেক সহজ হয়ে গেছে বলে সতর্ক করেন তিনি।
পারমাণবিক শক্তির বেলায় যেমন ‘আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশন’ রয়েছে, তিনি এআইয়ের জন্যও সাইবার আক্রমণ রোধে একইরকম আন্তর্জাতিক সংস্থা তৈরিতে সরকারগুলোকে আহ্বান জানান।
গেটস আরও কিছু ঝুঁকির দিকে ইঙ্গিত করেন। সেগুলো হতে পারে মানুষের চাকরিচ্যুতি, ট্রেইনিং ডেটার ওপর ভিত্তি করে পক্ষপাতমূলক আচরণ এমনকি শিশুদের লেখা শেখার পদ্ধতিও হুমকির মুখে পড়তে পারে।
“যখন ১৯৭০ এবং ৮০’র দশকে ক্যালকুলেটর জনপ্রিয় হতে শুরু করলো তখন কিছু অংকের শিক্ষক বলেছেন, ছাত্রছাত্রীরা গণিতের সাধারণ বিষয়গুলো ভুলে যাবে। কিন্তু অন্যরা সেই নতুন প্রযুক্তিকে আলিঙ্গন করে গণিতের পেছনের চিন্তার দক্ষতায় জোর দেন।”
গেটস বলেছেন, কোনো বিশাল পরিবর্তনের মুখে “ভড়কে যাওয়াই স্বাভাবিক”। তবে তিনি যোগ করেন, “ইতিহাস দেখিয়েছে নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে আসা সংকটের সমাধানও সম্ভব।”
আমাদের জীবদ্দশায় সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ঘটানো উদ্ভাবন হতে যাচ্ছে এআই” তিনি বলেন, “এর সুফল এবং ঝুঁকি নিয়ে হওয়া সুস্থ গণ বিতর্ক নির্ভর করবে প্রযুক্তিটির ব্যাপারে সবার স্পষ্ট ধারণার ওপর।”