চপারটি এখনও সচল। রোভারের সঙ্গেও এর যোগাযোগও আছে। তবে নিজের ওড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে উড়ুক্কু যানটি।
Published : 27 Jan 2024, 01:37 PM
টানা তিন বছর সফলভাবে কাজ করার পর মঙ্গল গ্রহের আকাশে শেষবারের মত উড়েছে নাসার ইনজেনুইটি হেলিকপ্টার।
এ মাসের শুরুতে আকাশযানটির ৭২তম উড্ডয়নে দেখা যায়, মঙ্গলের পৃষ্ঠে থাকা পারসিভারেন্স রোভারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে ইনজেনুইটি। পরে নাসা যানটির সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করলেও ১৮ জানুয়ারি ইনজেনুয়িটি মঙ্গলের পৃষ্ঠে অবতরণের সময় এর অন্তত একটি কার্বন ফাইবার রোটর ব্লেড ভেঙে গেছে।
চপারটি এখনও সচল। আর রোভারের সঙ্গেও এর যোগাযোগ রয়েছে। তবে নিজের ওড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে ইনজেনুয়িটি।
নাসার প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক বেশি সময় কাজ করেছে এ কপ্টার। ৩০ দিনে পাঁচটি পরীক্ষামূলক ফ্লাইট পরিচালনা করা ছিল নাসার প্রাথমিক লক্ষ্য। তবে তিন বছরের বেশি সময় সেবা দিয়ে গেছে যানটি। আর নিজের মূল লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১৪ গুণ বেশি দূরের পথ পাড়ি দিয়েছে ইনজেনুইটি। এমনকি টানা দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে মঙ্গলের আকাশে উড়তে দেখা গেছে এ উড়ুক্কু যানটি।
নাসা প্রধান বিল নেলসন এক বিবৃতিতে বলেন, “ভিন্ন কোনো গ্রহে প্রথম এয়ারক্রাফট হিসেবে ইনজেনুইটির ঐতিহাসিক যাত্রা সফলভাবে শেষ হল।”
তিনি বলেন, “যুগান্তকারী হেলিকপ্টারটি আমাদের কল্পনার চেয়েও বেশি উচ্চতায় উড়তে ও দূরের পথ পাড়ি দিতে পেরেছে, যা মঙ্গলে নাসার কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রেও কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে আমাদের সৌরজগতে এমন উন্নত ব্যবস্থার মাধ্যমে স্মার্ট উপায়ে ফ্লাইট পরিচালনার এবং মঙ্গল ও এর চেয়েও দূরের গ্রহে নিরাপদে মানুষ পাঠানোর পথও সুগম হয়েছে।”
ইনজেনুইটির প্রথম পাঁচটি ফ্লাইট পরিচালনার পর হেলিকপ্টারটি দিয়ে মঙ্গলে কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নাসা। এমনকি গ্রহটির পৃষ্ঠে থাকা পারসিভারেন্স রোভারের সঙ্গেও এর সংযোগ ঘটিয়েছিল মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি।
১৮ জানুয়ারী ইনজেনুইটি টিম একটি সংক্ষিপ্ত উল্লম্ব ফ্লাইটের পরিকল্পনা করে, যাতে হেলিকপ্টারটির সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা যায়। আর এর আগের ভ্রমণে হেলিকপ্টারটিকে জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়েছিল নাসা।
শেষ উড্ডয়নে সাড়ে চার সেকেন্ডের জন্য ৪০ ফুট উচ্চতায় উড়েছিল চপারটি। মঙ্গল পৃষ্ঠে অবতরণের সময় এর গতি ছিল প্রতি সেকেন্ডে তিন দশমিক তিন ফুট।মঙ্গলের মাটিতে নামতে যখন তিন ফুট পথ বাকি, তখন পারসিভারেন্সের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে ইনজেনুইটি।
চপারের রোটর ব্লেডে কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে দেখছে নাসা।
আপাতত ইনজেনুইটির অবস্থা দেখার মত পরিস্থিতিতে নেই পারসিভারেন্স। কারণ সেটি আছে চপার থেকে অনেক দূরে। তবে চপারটির নিজস্ব ক্যামেরাই রোটর ব্লেডের ছায়ার মাধ্যমে এর আঘাত চিহ্নিত করেছিল বলে উঠে এসেছে প্রযুক্তি সাইট এনগ্যাজেটের প্রতিবেদনে।
মঙ্গলের কঠিন ভূখণ্ড, ধুলোর ঝড়, এমনকি একটি শীতও সামলে নিয়েছিল ইনজেনুইটি। কঠিন পরিবেশ মোকাবেলার সময় এর একটি সেন্সর নষ্টও হয়ে গিয়েছিল।
এবার মঙ্গলের মাটিতে অচল বসে থাকা অবস্থায় চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হলে এবং সর্বশেষ তথ্য ও ছবিগুলো সংগ্রহ করা হয়ে গেলে হেলিকপ্টারটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করবে ইনজেনুইটি দল।
এনগ্যাজেট লিখেছে, বিশ্বের প্রথম এয়ারক্রাফট হিসেবে অন্য কোনো গ্রহে সফল ও নিয়ন্ত্রিত ফ্লাইট পরিচালনা করে ইতিহাস সৃষ্টির পর ইনজেনুইটির শেষ কাজ সম্ভবত মঙ্গলের পৃষ্ঠে বিশ্রাম নেওয়া।