‘ডিজিটাল মার্কেটস অ্যাক্ট’ বা ডিএমএ মেনে চলছে না এমন উদ্বেগের কারণে গত বছরের মার্চ থেকে ইউরোপীয় কমিশনের কঠোর সমালোচনার মুখে রয়েছে গুগল ও অ্যাপল।
Published : 20 Mar 2025, 03:17 PM
গুগলের বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘনের দুটি অভিযোগ এনেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ। অন্যদিকে অ্যাপলকে আইফোন ও আইপ্যাডের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সংযোগ তৈরিতে সহায়তার নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
ইউরোপের অ্যান্টিট্রাস্ট নিয়ন্ত্রকরা বিগ টেকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে বুধবার মার্কিন এই বড় দুই প্রযুক্তি কোম্পানির বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।
যেসব দেশ মার্কিন কোম্পানিকে জরিমানা করে তাদের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপ করার পক্ষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির পরও ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিযোগিতা পর্যবেক্ষক সংস্থা এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
‘ডিজিটাল মার্কেটস অ্যাক্ট’ বা ডিএমএ মেনে চলছে না এমন উদ্বেগের কারণে গত বছরের মার্চ থেকে ইউরোপীয় কমিশনের কঠোর সমালোচনার মুখে রয়েছে গুগল ও অ্যাপল উভয় কোম্পানিই। আইনটির লক্ষ্য হচ্ছে, কী করা যাবে ও কী করা যাবে না এমন তালিকার মাধ্যমে বিগ টেকের ক্ষমতার লাগাম টেনে ধরা।
অ্যাপ স্টোর গুগল প্লে-এর বাইরের অফার সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের জানাতে অ্যাপ ডেভেলপারদের বাধা দেয় কি না ও গুগল সার্চে গুগল ফ্লাইট-এর মতো এ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সার্চ পরিষেবাকে সমর্থন করছে কি না কোম্পানিটি– এমন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে গুগলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ইইউ।
আইফোন নির্মাতার বিরুদ্ধে ওই স্পেসিফিকেশন মামলা শুরুর ছয় মাস পর অ্যাপলকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য নিজেদের ইকোসিস্টেম খুলে দিতে দুটি আদেশ জারি করেছে কমিশন।
এক বিবৃতিতে ইইউ’র অ্যান্টিট্রাস্ট প্রধান টেরিজা রিবেরা বলেছেন, “গুগল সার্চ আর অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভোক্তাদের ব্যাপকহারে ব্যবহৃত কোম্পানির দুটি সেবার ক্ষেত্রে অ্যালফাবেট যেন ইইউর নিয়ম মেনে চলে তা নিশ্চিত করতেই” এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে সংস্থাটি।
ইইউ’র এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে গুগল বলেছে, ভোক্তা ও ব্যবসার ক্ষতিই বরং করছে ইইউ’র বিভিন্ন প্রতিযোগিতা নিয়ম।
গুগলের প্রতিযোগিতা বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক অলিভার বেথেল এক ব্লগ পোস্টে বলেছেন, “কমিশনের গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা কীভাবে নির্দিষ্ট ধরনের সার্চ ফলাফল দেখাব তাতে আরও পরিবর্তন আনতে হবে। এতে করে গ্রাহকরা যা খুঁজছেন তা তাদের খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে এবং ইউরোপীয় বিভিন্ন ব্যবসায় ট্রাফিকও কমে যাবে।”
তিনি আরও বলেছেন, অ্যান্ড্রয়েড ও প্লে পরিষেবার চলমান উন্নয়নে সহায়তা করতে কোম্পানিটি যৌক্তিক ফি নিতে না পারলে উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ করতে পারবে না তারা।
অ্যাপলের বিরুদ্ধে আনা ইইউ’র প্রথম আদেশে বলা হয়েছে, স্মার্টফোন, হেডফোন ও ভার্চুয়াল রিয়ালিটি হেডসেট নির্মাতাদের প্রযুক্তি ও মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমে প্রবেশাধিকার দিতে হবে অ্যাপলকে, যাতে তারা আইফোন ও আইপ্যাডের জন্য নির্বিঘ্নে পণ্য বানাতে পারে।
অ্যাপল বলেছে, ইইউর এমন আদেশ ব্যবহারকারীদের ক্ষতি করবে এবং তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাহায্য করবে।
এক ইমেইলে অ্যাপল বলেছে, “ইইউর আজকের সিদ্ধান্তগুলো আমাদেরকে জটিলতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। পাশাপাশি ইউরোপের ব্যবহারকারীদের জন্য উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে অ্যাপলের সক্ষমতার গতি কমিয়ে দিয়েছে ও আমাদের নতুন বিভিন্ন ফিচার বিনামূল্যে এমন কোম্পানিকে দিতে বাধ্য করেছে যাদের একই নিয়ম মেনে চলতে হয় না।
“এ বিষয়টি আমাদের পণ্য ও আমাদের ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের জন্য ভালো নয়। ব্যবহারকারীদের পক্ষ থেকে আমাদের উদ্বেগগুলো বুঝতে ইউরোপীয় কমিশনের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব আমরা।”
রয়টার্স লিখেছে, গত কয়েক দশক ধরে অ্যান্টিট্রাস্ট আইন লঙ্ঘনের জন্য গুগলকে আটশ ৭০ কোটি ডলারের বেশি জরিমানা করেছে ইইউ। এই ডিএমএ লঙ্ঘনের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলে বিশ্বজুড়ে কোম্পানিটির বার্ষিক বিক্রির ১০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানার মুখে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে গুগলের।
ইইউ’র বুধবারের এই আদেশ মানতে ব্যর্থ হলে তদন্ত ও সম্ভাব্য জরিমানার মুখে পড়তে হবে অ্যাপলকেও।