“এই দৈত্যকে আর চেরাগে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ নেই। এটি সারা বিশ্বে ক্রমশ ছাড়িয়ে পড়ছে,” বলছিলেন শুনানিতে অংশ নেওয়া সিনেটর কোরি বুকার।
Published : 17 May 2023, 08:30 PM
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির অপব্যবহার নির্বাচনের স্বচ্ছতা নষ্ট করতে পারে, তাই সতর্কতার সঙ্গে এই প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বলে মত দিয়েছেন স্যাম অল্টম্যান।
মঙ্গলবার এক সিনেট শুনানিতে অংশ নিয়ে চ্যাটজিপিটির নির্মাতা কোম্পানি ওপেনএআই এর সিইও স্যাম অল্টম্যান বলেন, “আমি এ নিয়ে শঙ্কিত” এবং তারমতে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ আইন ও নির্দেশনা প্রণয়ন করা উচিৎ।
বিভিন্ন কোম্পানি অজস্র অর্থ বিনিয়োগ করে গত কয়েকমাস মাস ধরে হরেক রকমের এআই প্রযুক্তি তৈরি করতে উঠেপড়ে লেগেছে। সমালোচকদের একটি অংশ সতর্ক করে বলেছেন, প্রযুক্তিটি পক্ষপাতমূলক আচরণ ও ভুল তথ্য ছড়িয়ে সামাজিক বিদ্বেষ বাড়াতে পারে, এমনকি মানবজাতিকেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে।
“এই দৈত্যকে আর চেরাগে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ নেই। এটি সারা বিশ্বে ক্রমশ ছাড়িয়ে পড়ছে।” – বলছিলেন শুনানিতে অংশ নেওয়া সিনেটর কোরি বুকার।
২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচন সন্নিকটে, এমন সময়ে এআই সৃষ্ট গুজবের ঝুঁকি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অপর সিনেটর মাইজি হিরোনো। “নির্বাচনের আগে ভাইরাল হয়েছে এমন একটি ভুয়া ছবি যেখানে দেখা যাচ্ছে, নিউ ইয়র্ক পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে।” এমন ভুয়া ছবি ক্ষতিকর কিনা, অল্টম্যানের কাছে জানতে চান তিনি।
জবাবে অল্টম্যান বলেন, প্রকাশ করার আগে কেউ একজনকে স্পষ্ট করে উল্লেখ করতে হবে ছবিটি সত্যিকারের নাকি এআই সৃষ্ট।
এআই প্রযুক্তিকে লাইসেন্সের আওতায় আনা উচিৎ কি না এমন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রথমবার কংগ্রেসের মুখোমুখি হওয়া অল্টম্যান বলেন কোনো এআই মডেল কারো বিশ্বাস ও মূল্যবোধকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই এমন সব মডেলকে লাইসেন্সের আওতায় আনা “কার্যকরী পদক্ষেপ” বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
এআই মডেলগুলোকে তৈরির জন্য কোম্পানিগুলোকে বাধ্যতামূলক ভাবে লাইসেন্স ও পরীক্ষণের আওতায় আনা উচিৎ– মার্কিন সরকারের প্রতি এমনটাই পরামর্শ এই শীর্ষ কর্মকর্তার।
কোনো ওয়েবসাইটে থাকা ডেটা এআই মডেলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা যাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অল্টম্যান বলেন কোম্পানিগুলোর ওয়েবসাইটের ডেটা ব্যবহারে তাদের মতমতের সুযোগ থাকা উচিৎ, তবে ইতোমধ্যে পাবলিক ডোমেইনে থাকা ডেটা ব্যবহার করা যুক্তিসংগত বলে মনে করেন চ্যাটজিপিটির এই শীর্ষকর্তা।
অল্টম্যান জানান, “কখনোই বিজ্ঞাপন নেবেন না” এমনটা বলছেন না তিনি, তবে গ্রাহক ফি ভিত্তিক মডেল তার বেশি পছন্দ।
এর আগে হোয়াইট হাউজে এক বৈঠকে কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির উপকারিতা, অপব্যবহার ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় সরকারের করণীয় প্রসঙ্গে অল্টম্যানসহ শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সিইও দের কাছে মতামত জানতে চাওয়া হয়।
এআই প্রযুক্তিকে লাইসেন্সের আওতায় আনতে সম্প্রতি ওপেনএআই এর একজন কর্মী ‘মার্কিন এআই লাইসেন্সিং সংস্থা’ গঠনের প্রস্তাব করেন। তার প্রস্তাবিত সংস্থাটির নাম ছিলো ওএসিস বা ‘অফিস ফর এআই সেইফটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি’ (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সুরক্ষা ও অবকাঠামো নিরাপত্তা কার্যালয়) বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে সংবাদসংস্থা রয়টার্স।
মাইক্রোসফট সমর্থিত ওপেনএআইর সিইও অল্টম্যান সুরক্ষিত এআই তৈরির জন্য বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা ও প্রণোদনার প্রস্তাব করেছেন।
এআই দ্বারা সামজিক ভারসাম্য নষ্টের ঝুঁকির প্রতি মনোযোগ দিতে মার্কিন কংগ্রসের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন আইবিএমের প্রাইভেসি ও বিশ্বস্ততা বিভাগের প্রধান ক্রিস্টিনা মন্টগোমারি।