গবেষকদের দাবি, ভবিষ্যতে বিলুপ্তির মুখে রয়েছে এমন বিপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির জিনোম রেকর্ড করতে ব্যবহার করা যাবে এটি।
Published : 20 Sep 2024, 04:57 PM
একটি ক্রিস্টাল বা স্ফটিকে একজন মানুষের ডিএনএ’র সম্পূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ করেছেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, কোটি কোটি বছর পর মানুষ এই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেলেও আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে এই সংরক্ষণের ফলে।
৫ডি মেমরি ক্রিস্টালের ওপর ডিএনএ তথ্য সংরক্ষণ করতে লেজার ব্যবহার করেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউদাম্পটন’-এর ‘অপটোইলেকট্রনিকস রিসার্চ সেন্টার (ওআরসি)’-এর একদল গবেষক। তারা বলছেন, এর মাধ্যমে কোটি কোটি বছর ধরে টিকে থাকবে এসব ডিএনএ তথ্য।
অন্যান্য সংরক্ষণ পদ্ধতির তুলনায় এই ক্রিস্টাল পদ্ধতিটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয়ে যায় না বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ।
এক বিবৃতিতে এই ক্রিস্টালটিকে ফিউজড কোয়ার্টজ অর্থাৎ ‘পৃথিবীর সবচেয়ে রাসায়নিক ও তাপসহ উপাদান’ হিসেবে বর্ণনা করেছে ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউদাম্পটন’।
চরম তাপ ও তাপ এবং মহাজাগতিক বিকিরণ সহ্য করতে পারে এটি।
অধ্যাপক পিটার কাজানস্কির নেতৃত্বে ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউদাম্পটন’-এর গবেষণা দলটি মানব জিনোম সম্পর্কে তথ্য সংরক্ষণের জন্য ‘আল্ট্রা-ফাস্ট’ লেজার ব্যবহার করেছেন। এই ‘আল্ট্রা-ফাস্ট’ লেজারে লেখা তথ্য মানব কোষে পাওয়া ডিএনএ নির্দেশাবলীর পুরো সেটেরই প্রতিনিধিত্ব করে।
‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউদাম্পটন’-এর মুখপাত্র বলেছেন, “কেবল একটি ২ডি কাগজের টুকরা বা ম্যাগনেটিক টেপের পৃষ্ঠে ডিএনএ সংরক্ষণ করার বদলে এনকোডিংয়ের এই পদ্ধতিটি পুরো উপাদান জুড়ে লেখার জন্য দুটি অপটিক্যাল মাত্রা ও তিনটি স্থানিক স্থানাঙ্ক ব্যবহার করেছে। তাই এর নাম ৫ডি।”
গবেষকদের দাবি, ভবিষ্যতে বিলুপ্তির মুখে রয়েছে এমন বিপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির জিনোম রেকর্ড করতে ব্যবহার করা যাবে এটি।
তবে এখানে একটি ‘বোঝার বিষয়’ আছে
কেবল জেনেটিক তথ্য ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে মানুষ, উদ্ভিদ ও প্রাণী তৈরি করা বর্তমানে সম্ভব নয়।
অধ্যাপক কাজানস্কি বলেন, ৫ডি ক্রিস্টালের স্থায়িত্বের মানে হচ্ছে, এক্ষেত্রে যদি ডিএনএ-এর অগ্রগতি হয় তবেই তা থেকে তথ্য পাওয়া যাবে।
“আমরা অন্যদের কাজ থেকে এরইমধ্যে জানি, সাধারণ কোনো জীবের বিভিন্ন জেনেটিক উপাদানকে সংশ্লেষণ করা যেতে পারে এবং পরীক্ষাগারে রয়েছে এমন কোষকে ব্যবহার করা যেতে পারে একটি কার্যকর জ্যান্ত নমুনা তৈরিতে।”
“৫ডি মেমোরি ক্রিস্টাল অন্যান্য গবেষকদের জন্য জিনোমিক তথ্যের একটি স্থায়ী সংগ্রহশালা তৈরির সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়, যা থেকে উদ্ভিদ ও প্রাণীর মতো বিভিন্ন জটিল জীবকে ভবিষ্যতে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।”
এই ক্রিস্টালটিতে একটি ‘ভিজুয়াল কি’ আছে, যা এর মধ্যে কোন তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে ও কীভাবে এটি ভবিষ্যতের বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ প্রজাতি বা মেশিনের মাধ্যমে মানুষ তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে সে সম্পর্কে বিত্সারিত তুলে ধরবে।
এ ক্রিস্টালটিকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে ‘মেমোরি অফ ম্যানকাইন্ড’ আর্কাইভে, যেটি অস্ট্রিয়ার হলস্ট্যাট শহরের এক লবণের গুহার মধ্যে বিশেষ ধরনের টাইম ক্যাপসুল।
৩৬০ টেরাবাইট পর্যন্ত তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে এসব ৫ডি মেমরি ক্রিস্টাল। এমনকি ২০১৪ সালে সবচেয়ে টেকসই তথ্য সংরক্ষণ উপাদানের জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে উঠেছে এ পদ্ধতিটি।