প্রস্তাবে নতুন নীতিমালা, ‘ক্রিপ্টোকেন্দ্র’ হতে চায় হংকং

ক্রিপ্টো লেনদেনে চীনের ‘ক্র্যাকডাউনের’ পর নিজেদের নতুন ঘাঁটি হিসেবে সিঙ্গাপুর বা দুবাইয়ের মতো জায়গাগুলো বেছে নিচ্ছে তুলনামূলক সম্পদশালী কিছু কোম্পানি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2023, 11:05 AM
Updated : 21 Feb 2023, 11:05 AM

মার্কিন সরকারের বিভিন্ন কঠোর নীতিমালা ক্রিপ্টো শিল্পের ‘লাগাম টেনে ধরলেও’ অন্যান্য জায়গা এই খাতের নতুন ‘কেন্দ্র’ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।

গেল সোমবার, এই শিল্পের জন্য নতুন নীতিমালার প্রস্তাবনা দিয়েছে হংকং। ফলে, বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জে নির্দিষ্ট ‘বড় অংকের টোকেন’ লেনদেন করতে পারবেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট টেকক্রাঞ্চ। এর বিপরীতে, চীনের মধ্যে ক্রিপ্টো সংশ্লিষ্ট লেনদেন একেবারেই নিষিদ্ধ।

শহরটির ‘সিকিউরিটিস অ্যান্ড ফিউচার কমিশন’ অবশ্য এই বিষয়টি পরিষ্কার করেনি, তারা কোন কোন বড় অংকের টোকেন লেনদেনের অনুমোদন দেবে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির এক মুখপাত্র বলেন, এগুলো সম্ভবত বাজারমূল্যের হিসাবে শীর্ষ দুই ডিজিটাল টোকেন বিটকয়েন ও ইথার।

ক্রিপ্টো লেনদেনে চীনের ‘ক্র্যাকডাউনের’ পর থেকেই, দেশটির ‘ওয়েব৩’ ভিত্তিক স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো স্থানীয় বাজারের কার্যক্রম কমিয়ে বাইরের দেশগুলোতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে। এমনকি নিজেদের নতুন ঘাঁটি হিসেবে সিঙ্গাপুর বা দুবাইয়ের মতো জায়গাগুলো বেছে নিচ্ছে তুলনামূলক সম্পদশালী কিছু সংখ্যক কোম্পানি। তবে, দেশটির সাশ্রয়ী প্রযুক্তি মেধার একাংশ ধরতে, কোম্পানিগুলো চীনে নিজস্ব ডেভেলপারদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

হংকংয়ে ক্রিপ্টোমুদ্রার জন্য তুলনামূলক শিথিল নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা চালু হওয়ায় নির্বাসনে যাওয়া কোনো কোনো চীনা কোম্পানি হয়তো নিজ মাতৃভূমির কাছাকাছি ফিরে আসতে পারে বলে ধারণা প্রকাশ করেছে টেকক্রাঞ্চ।

বৈশ্বিক ক্রিপ্টো খাতকে ‘ধাক্কা দেওয়া’ বিভিন্ন কোম্পানির দেউলিয়াত্ব ঘোষণা ও ছাঁটাইয়ের মতো ঘটনাগুলো বিবেচনায় নিলে, স্বতন্ত্র বিনিয়োগকারীদেরকে অস্থিতিশীল এই কার্যক্রম থেকে দূরে রাখার এই কঠোর চীনা পদক্ষেপ এখন ‘দূরদর্শী’ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। তবে, এই ‘ক্রিপ্টো বাবল’ বিস্ফোরণের পরও ওয়েব৩’তে অর্থ ও প্রতিভার কাফেলা থেমে নেই।

বিশ্বের বাকি দেশগুলো যখন এমন ‘ব্লক’ তৈরিতে কাজ করছে, যেখানে কেউ কেউ এমনও যুক্তি দিচ্ছেন যে ইন্টারনেট নিজেই বিভিন্ন নতুন উদ্ভাবন এনে আলোড়ন সৃষ্টি করবে, সেখানে বেইজিংয়ের গ্যাট হয়ে বসে থাকা ‘কল্পনাতীত’ বলে মন্তব্য উঠে এসেছে টেকক্রাঞ্চের প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের নীতিনির্ধারকদের কাছে দেশটির একশ কোটি নেটিজেনের জন্য ব্লকচেইনের সম্ভাবনা পরীক্ষার ‘ল্যাবরেটরি’ হতে পারে ঐতিহাসিকভাবেই ‘আর্থিক হাব’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া হংকং।

হংকংয়ের প্রস্তাবে রয়েছে, শহরে পরিচালিত সকল কেন্দ্রীয় ভার্চুয়াল মুদ্রা বিনিময় বা ওই অঞ্চলে থাকা বিভিন্ন বিনিয়োগকারীকে বিপণন ভিত্তিক সেবা দিতে অবশ্যই শহরের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে।

এর জন্য প্রয়োজন এই খাতের বিভিন্ন মূল জায়গা পূরণ করা। এর উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, “সম্পদের নিরাপদ হেফাজত, নিজের ক্লায়েন্ট সম্পর্কে জানা, স্বার্থের দ্বন্দ্ব, সাইবার নিরাপত্তা, অ্যাকাউন্টিং ও অডিটিং, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আর্থিক ব্যবস্থা ও বাজারে অপব্যবহার প্রতিরোধের মতো বিষয়গুলো।” -- প্রস্তাবনার ঘোষণায় লিখেছে শহরটির কর্তৃপক্ষ।

“এ খাতে প্রবেশ করা বিভিন্ন ক্লায়েন্ট ও টোকেন জমা দেওয়ার বেলায় এর উপযোগিতার পাশাপাশি অন্যান্য মূল প্রস্তাবে টোকেন সংশ্লিষ্ট অধ্যাবসায়, পরিচালনা ও প্রকাশের মতো বিষয়গুলোও নিশ্চিত করতে হবে।”

সহজ ভাষায় বললে, শহরটিতে কার্যক্রম পরিচালনার বৈধ অনুমোদন পাওয়ার আগ পর্যন্ত কেন্দ্রিভূত ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জগুলোকে নিজেদের হংকং ভিত্তিক বিভিন্ন আইপি ঠিকানা নিষিদ্ধ করতে হবে।

এইসব নিয়ন্ত্রক প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পরামর্শ প্রদানের শেষ সময় ৩১ মার্চ। আর নতুন লাইসেন্সিং ব্যবস্থা কার্যকর হবে পয়লা জুন থেকে।