ভালো ব্র্যান্ডের তো? ফিচারগুলোই-বা কী? হাল ফ্যাশনের সঙ্গে চলবে তো? স্মার্টফোন কিনতে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়েই ভাবেন একজন সাধারণ ক্রেতা।
Published : 01 Apr 2014, 08:30 PM
তবে স্মার্টফোনটা যখন একজন রাষ্ট্রপ্রধান বা নেতার, তখন কিন্তু পাল্টে যায় পুরো দৃশ্যপট। একজন সাধারণ ব্যবহারকারীর মতোই দৈনন্দিন যোগাযোগ, মেইল আদান-প্রদান বা ডকুমেন্ট দেখতেই নিজের স্মার্টফোনটি কাজে লাগে তাদের।
কিন্তু সেই নিয়মিত ফোনকল, টেক্সট মেসেজ, মেইল আর ডকুমেন্টগুলোর সঙ্গে যখন সম্পর্কটা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার, তখন স্মার্টফোনটি জনপ্রিয় কোনো প্রতিষ্ঠানের তৈরি কি না, ফিচার কতগুলো আর ফ্যাশনেবল কি না-- প্রশ্নগুলো হয়ে দাঁড়ায় অবান্তর। কার্যকারিতা আর নিরাপত্তাই তখন মূল ইস্যু।
একজন সরকারপ্রধানের স্মার্টফোনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কেবল একটা পাসকোড হলেই চলে না। হ্যাকার আর প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ‘সাইবার অনুপ্রবেশ’ ঠেকানোটা হয়ে ওঠে সবচেয়ে জরুরি। (মনে পড়ে, জার্মান চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মের্কেলের মোবাইলে এনএসএর আড়িপাতার খবর?)
একজন রাষ্ট্রপ্রধানের স্মার্টফোনে প্রতিদ্বন্দ্বী বা বন্ধুরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা আড়ি পাতছে, ব্যাপারটা ভুক্তভোগী রাষ্ট্রপ্রধান এবং রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা-- উভয়ের জন্যই রীতিমতো লজ্জার বিষয়। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে কখনও চেষ্টার কমতি থাকে না রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর।
কড়া সিকিউরিটি ব্যবস্থার কারণে কর্পোরেট দুনিয়ার অনেকেরই পছন্দ ব্ল্যাকবেরির স্মার্টফোন। ব্যতিক্রম নন রাষ্ট্রপ্রধানরাও। বাণিজ্যিক দিক থেকে ব্যাপক লসের মুখে থাকলেও বারাক ওবামা থেকে শুরু করে নওয়াজ শরিফসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানেরই মধ্যে অনেকেরই শীর্ষ পছন্দ কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির তৈরি স্মার্টফোনগুলো। আবার আইফোন না হলেই চলে না বিশ্বনেতাদের কারও কারও। যদিও এডওয়ার্ড স্নোডেন এনএসএর নজরদারির নথি ফাঁস করার পর একরকম বাধ্য হয়েই স্মার্টফোন বদলাতে হয়েছে অনেককেই। পুরনো স্মার্টফোন পাল্টে কেউ ব্যবহার করছেন ‘আল্ট্রা সিকিওর্ড’ কোনো স্মার্টফোন, কেউবা ব্যবহার করছেন কাস্টমাইজ করে নিরাপত্তা বাড়ানো স্মার্টফোন। তারপরও ব্যক্তিগত কাজের জন্য পুরনো পছন্দের স্মার্টফোন ছাড়ছেন না অনেকেই।
‘আমি কোনোভাবেই আমার ব্ল্যাকবেরি ছাড়ছি না, আমার হাত থেকে এটা কেড়ে নিতে হবে ওদের।’-- বলেছিলেন খোদ ওবামা।
শেষপর্যন্ত নবনিযুক্ত রাষ্ট্রপতির কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছিল সিক্রেট সার্ভিস। সেই থেকে এখন পর্যন্ত উন্নত এনক্রিপশন প্রযুক্তির একটি ব্ল্যাকবেরি স্মার্টফোনই ব্যবহার করছেন ওবামা। পরিবার সদস্য আর হাতেগোনা খুব কাছের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার কাছেই আছে ওবামার ব্যক্তিগত ইমেইল অ্যাড্রেস। মাসতিনেক আগে অনেকটা মজা করেই ওবামা বলেছিলেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে আইফোন ব্যবহারের অনুমতি নেই আমার।
অন্যদিকে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভের অ্যাপলপ্রীতি এতটাই বেশি যে, বাজারে আসার আগেই অ্যাপলগুরু স্টিভ জবসের কাছ থেকে একটি আইফোন ৪ উপহার পেয়েছিলেন মেদভেদেভ।
ফ্রান্স: নিজের আইফোন ৫ ছাড়া নাকি এক মুহুর্তও চলে না ফ্রান্সের বর্তমান রাষ্ট্রপতি ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের। সারাক্ষণই নাকি আইফোন দিয়ে মেসেজ চালাচালি করতে থাকেন প্রেমিকার সঙ্গে। তবে আইফোনটি নাকি কেবল তার ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য। রাষ্ট্রীয় কাজের জন্য ব্যবহার করেন টিওরেম স্মার্টফোন।
বিশ্বনেতাদের উপর এনএসএর নজরদারির নথি এডওয়ার্ড স্নোডেন ফাঁস করার পর একরকম বাধ্য হয়েই অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের স্মার্টফোন আর ট্যাবলেট বাদ দিয়ে রাষ্ট্রীয় কাজে ‘আল্ট্রা সিকিউর্ড’ টিওরেম স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন ওঁলাদ এবং ফ্রান্সের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা।
তবে ফ্রান্সের আলোচিত সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে নাকি তেমন কোনো মাথাব্যথাই ছিল না। সাধারণ ব্ল্যাকবেরি ফোনই ছিল তার পছন্দের।
নর্থ কোরিয়া টেক ব্লগের লেখন মার্টিন উইলিয়ামসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চীনের তৈরি স্মার্টফোন উত্তর কোরিয়ায় বিক্রি করা স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সিল দিয়ে। দেশটির শীর্ষ নেতা কিম জং উন ঠিক কী স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, তা পরিষ্কার নয়। তবে ২০১৩ সালে এক মিটিংয়ে তোলা ছবি অনুযায়ী তার হাতের স্মার্টফোনটি দেখতে অনেকটাই ছিল তাইওয়ানিজ প্রতিষ্ঠান এইচটিসির তৈরি স্মার্টফোনগুলোর মতো।
চীন ছাড়াও অন্য দেশের তৈরি স্মার্টফোনও পাওয়া যায় উত্তর কোরিয়ায়। তবে মোটেই সস্তা নয় স্মার্টফোনগুলো। উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা আর ধনী পরিবারের সদস্যরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারলেও অনুমতি নেই দেশের বাইরে যোগাযোগ করার। দেশটিতে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের মোবাইল ব্যবহারের অনুমতি আছে, আছে দেশের বাইরে কল করার সুযোগও। তবে নিষেধাজ্ঞা আছে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগের উপর।