নিজের ডিভাইস নিজেই সারাইয়ের অধিকার পেতে যাচ্ছেন নিউ ইয়র্কের বাসিন্দারা। হার্ডওয়্যার নির্মাতাদের পণ্য মেরামত নিয়ে স্বেচ্ছাচারী আচরণের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আইনী লড়াইয়ে বড় জয়ের বার্তা দিচ্ছে মার্কিন অঙ্গরাজ্যটির সিনেটে পাশ হওয়া নতুন একটি বিল।
Published : 08 Jun 2022, 06:42 PM
নিউ ইয়র্কের সিনেটে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই পাশ হয়েছে পণ্য মেরামতের অধিকার নিয়ে নতুন বিলটি। প্রস্তাবিত নতুন আইনে ল্যাপটপ, স্মার্টফোনের মতো ডিভাইসের নির্মাতারা হার্ডওয়্যারের ত্রুটি নির্ধারণ এবং সারাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ক্রেতা এবং স্বাধীন পণ্য মেরামতকারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে বাধ্য থাকবে।
প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট আর্স টেকনিকা জানিয়েছে, এখন শুধু অপেক্ষা নিউ ইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুলের স্বাক্ষরের। গভর্নর স্বাক্ষর করলেই আনুষ্ঠানিকভাবে আইনে পরিণত হবে বিলটি। আর গভর্নরের কাছ থেকে কোনো আপত্তির আশঙ্কা করছে না প্রস্তাবিত আইনটির সমর্থক আইফিক্সইটের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো।
নতুন আইনের অধীনে পরবে না হোম অ্যাপ্লায়েন্স, কৃষি, চিকিৎসা ও নাগরিক নিরাপত্তা যোগাযোগে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ। তবে, ‘রাইট-টু-রিপেয়ার’ আইনের সমর্থকদের এই খাতগুলোর ওপরও নজর আছে বলে জানিয়েছে আর্স টেকনিকা।
নিউ ইয়র্কের পণ্য বিক্রি করে এমন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন পণ্য মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, সফটওয়্যার এবং আনুসাঙ্গিক যন্ত্রাংশ সরবরাহ করতে হবে স্বাধীন ও ব্যক্তিপর্যায়ের মেরামতকারীদের। ২০২৩ সাল নাগাদ নতুন আইনটি কার্যকর হওয়ার আশা করছে আইফিক্সইট।
আইফিক্সইট-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর দীর্ঘ লড়াইয়ের ফল এই বিজয়।
আর নয় ‘একচেটিয়া ব্যবসা’
প্রস্তাবিত আইনটির বক্তব্য ছিল, মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও যন্ত্রাংশের বিষয়গুলো গোপন রেখে ক্রেতাদের বিপাকে ফেলছে নির্মাতা কোম্পানিগুলো এবং এক্ষেত্রে ‘ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স নির্মাতাদের একচেটিয়া আচরণের’ বিপরীতে ক্রেতাদের নিরাপত্তা দেবে আইনটি।
নির্মাতারা তথ্য গোপন রাখায় ডিভাইস মেরামতের জন্য কেবল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হতো ক্রেতাদের। এই পরিস্থিতি নিয়ে আইফিক্সইটের প্রধান নির্বাহী কাইল উইন্স এক ব্লগ পোস্টে জানিয়েছেন, রাইট-টু-রিপেয়ার হিসেবে পরিচিত আইনটির অনুপস্থিতিতে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার ৫৯ শতাংশ সারাই দোকানের মালিক।
প্রস্তাবিত নতুন আইনটি এ প্রসঙ্গে বলছে, “নির্মাতার চেপে যাওয়া তথ্য বাদে আর কোনো কিছুই কারিগরি যোগ্যতার ভিত্তিতে তৃতীয় পক্ষীয় মেরামতকারীদের সম্পূর্ণ ডিজিটাল মেরামতের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্মাতারা ইচ্ছা করে ডিজিটাল পণ্য মেরামতের সুযোগ সীমিত করে রেখেছে।”
প্রস্তাবে নতুন আইনটি ন্যায়সঙ্গত বলে আখ্যা পেয়েছে ‘বাড়তি মেরামত খরচ, প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাজে অথবা একেবারেই অনুপস্থিত গ্রাহক সেবা এবং ইলেকট্রনিক পণ্যের স্বল্পজীবনকালের’ কারণে।
আর্স টেকনিকা জানিয়েছে, প্রস্তাবিত নতুন আইনটির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে ইলেকট্রনিক বর্জ্য বা ই-বর্জ্য নিয়ে চলতি বিতর্ক। এ প্রসঙ্গে নিউ ইয়র্কের আইনসভার সদস্য প্যাট্রিশিয়া ফাহি বলেন, নতুন আইনটি “নিউ ইয়র্কে প্রতি বছরে যে ছয় লাখ ৫৫ হাজার টন ই-বর্জ্য তৈরি হয় সেটি কমিয়ে আনতে সহযোগিতা করবে।”
প্রত্যাশা সুদূরপ্রসারী প্রভাবের
আইনটি কেবল নিউ ইয়র্কের জন্য হলেও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাবের আশা করছেন এর সমর্থকরা। এতে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ডিভাইস মেরামতের ম্যানুয়াল সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেবে বলে আশার কথা জানিয়েছেন আইফিক্সইটের প্রধান নির্বাহী।
বিভিন্ন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান (বিশেষ করে অ্যাপল) প্রায়শই ডিভাইসের যন্ত্রাংশ মাদারবোর্ড বা সিরিয়াল নম্বরের সঙ্গে সফটওয়্যারের মাধ্যমে লক করে রাখে। নিউ ইয়র্কের নতুন আইনটির প্রেক্ষাপটে এ প্রসঙ্গে আইফিক্সইট প্রধান কাইল উইন্স ব্লগে লিখেছেন, “নির্মাতাদের এখন যন্ত্রাংশ পেয়ারিং রিসেট করার টুল সবার জন্য উন্মুক্ত করার পথ খুঁজে নিতে হবে। এতে মেরামত শিল্প যেমন লাভবান হবে, তেমনি সংস্কার করা ইলেকট্রনিক পণ্যের নতুন শিল্প খাত নির্মাণের সুযোগ তৈরি হবে।”
“পুরনো ডিভাইস সারাইকারীদের অনেকেই পুরনো ডিভাইস থেকে যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করেন। ডিভাইসের যন্ত্রাংশ মাদারবোর্ডের সঙ্গে সফটওয়্যারের মাধ্যমে লক করা থাকলে যা অসম্ভব।”
এই দৃশ্যপট পুরোপুরি পাল্টে যাওয়ার আশা করছেন উইন্স।