মেটাভার্স প্রকল্প উন্মোচনের সময়েই ফেইসবুক কাণ্ডারী জাকারবার্গ বলেছিলেন, ভবিষ্যত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অনেক নির্মাতা প্রয়োজন যারা নিজেদের সমর্থন করতে একে চাকরি হিসেবে নিতে পারবেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির এক মুখপাত্রের সাম্প্রতিক বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী এক বাস্তবতার।
Published : 14 Apr 2022, 03:37 PM
মেটার ভার্চুয়াল রিয়ালিটি প্ল্যাটফর্ম ‘হরাইজন ওয়ার্ল্ডস’-এ কনটেন্ট বেচে আয়ের কথা ভাবছিলেন যে নির্মাতারা, নতুন আপডেট তাদের জন্য দুঃসংবাদ। কনটেন্ট বিক্রির প্রতিটি লেনদেনের ৪৭.৫ শতাংশ কেটে রাখার পরিকল্পনা করেছে শীর্ষ সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি এক ব্লগ পোস্টে মেটা ঘোষণা দিয়েছে যে তারা ‘হরাইজন ওয়ার্ল্ডস’-এ কনটেন্ট নির্মাতাদের ভার্চুয়াল জগতটির ভেতরেই নানা ডিজিটাল সম্পদ নির্মাণ ও বিক্রির সুযোগ দেবে। ওই ঘোষণাকে কনটেন্ট নির্মাতারা ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবেই দেখছিলেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট টেকরেডার। ঘোষণায় মেটাভার্সকে কর্মসংস্থানের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠার আশা দেখালেও আর্থিক লেনদেনের বড় অংশ কেটে রাখার বিষয়টি সে সময় চেপে গিয়েছিল মেটা।
আর্থিক লেনদেনের সেই খুঁটিনাটি জানতেই মেটার এক মুখপাত্রের কাছে প্রশ্ন করেছিলেন বার্তাসংস্থা সিএনবিসি’র এক সংবাদকর্মী। উত্তরে ওই মুখপাত্র জানিয়েছেন প্রতিটি লেনদেনের ৪৭.৫ শতাংশ কেটে রাখবেন তার প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ‘মেটা কোয়েস্ট স্টোর’-এর মাধ্যমে হওয়া লেনদেনের ৩০ শতাংশ ‘হার্ডওয়্যার প্ল্যাটফর্ম ফি’ হিসেবে এবং বাকি ১৭.৫ শতাংশ মেটা কেটে রাখবে হরাইজন ওয়ার্ল্ডসের ফি হিসেবে।
মেটা মুথপাত্রের বক্তব্য প্রকাশ হওয়ার পর এ প্রসঙ্গে কনটেন্ট নির্মাতাদের প্রতিক্রিয়া খুব একটা ইতিবাচক নয় বলে জানিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট টেকরেডার। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে হরাইজন ওয়ার্ল্ডস চালু করেছে মেটা। প্ল্যাটফর্মটির আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিষেকের কথা থাকলেও সে বিষয়ে এখনও কোনো লক্ষণীয় অগ্রগতি হয়নি।
প্রযুক্তি শিল্পে ‘মেটাভার্স’ এখনও একটি তুলনামূলক নতুন ভাবনা। উদীয়মান খাতটিতে একই সঙ্গে শক্ত অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছে একাধিক সমসাময়িক প্রতিষ্ঠান। নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে আরও বেশি কনটেন্ট নির্মাতাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে প্ল্যাটফর্মগুলো।
এমন পরিস্থিতিতে হরাইজন ওয়ার্ল্ডসের এই উচ্চ ফি’র যৌক্তিকতা যাচাই করতে অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে তুলনা বিচার করে দেখছে সিএনবিসিসহ একাধিক বার্তাসংস্থা। বিশেষ করে ফেইসবুক কাণ্ডারী জাকারবার্গ একসময়ে অ্যাপলের ব্যবসায়িক কৌশল নিয়ে সমালোচনায় মুখর হওয়া অ্যাপ ডেভেলপারদের কাছ থেকে অ্যাপল যে ফি কেটে রাখে তার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে হরাইজন ওয়ার্ল্ডসের।
অ্যাপ স্টোরের জন্য নির্মিত অ্যাপের অভ্যন্তরীণ লেনদেন থেকে ৩০ শতাংশ অ্যাপল কেটে রাখায় অতীতের বিভিন্ন সময়ে আইফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির সমালোচনা করেছেন মার্ক জাকারবার্গ আর ফেইসবুকের শীর্ষ কর্মকর্তারা। গত বছরের নভেম্বরেই জাকারবার্গ বলেছিলেন, নিজের কাজ থেকে ডেভেলপারদের আয়ের পথ সহজ করে দেবে তার প্রতিষ্ঠান।
“মেটাভার্স নির্মাণের অংশ হিসেবে আমরা নির্মাতাদের নিজের কাজ থেকে আয়ের নতুন সুযোগ তৈরির ওপর মনোযোগ দিচ্ছি। অ্যাপল লেনদেন থেকে যে ৩০ শতাংশ কেটে রাখে তাতে এই লক্ষ্য অর্জন কঠিন। তাই আমরা আমাদের সাবস্ক্রিপশন পণ্যগুলো আপডেট করছি যেন নির্মাতারা আরও বেশি আয় করতে পারেন”-- বলেছিলেন জাকারবার্গ।
অন্যদিকে, গত বছরেই ডেভেলপারদের আয়ে নিজের ভাগ কমিয়ে এনেছে গুগল ও অ্যাপল। নিজস্ব প্লে স্টোর থেকে ডেভেলপারদের বার্ষিক আয়ের প্রথম ১০ লাখ থেকে ৩০ শতাংশের বদলে ১৫ শতাংশ কেটে রাখার ঘোষণা দিয়েছে গুগল।
আর অ্যাপল ঘোষণা দিয়েছে, যেসব ডেভেলপারদের বার্ষিক কামাই ১০ লাখ ডলারের নিচে তাদের আয় থেকে ফি হিসেবে ৩০ শতাংশ নয়, ১৫ শতাংশ কেটে রাখবে তারা।
গত বছরের ঘটনা প্রবাহ বিবেচনায় মেটা কেবল জাকারবার্গের বক্তব্যের উল্টো পথেই হাঁটছে না বরং পুরো শিল্প খাতের মানকেই অগ্রাহ্য করতে যাচ্ছে।
টেকরেডার বলছে, মেটাভার্সে সাফল্যের জন্য আরও বেশি আয় চাই মেটার, তাই নির্মাতার আয়ের ৪৭.৫ শতাংশ কাটতে চায় তারা। আয়ের প্রায় অর্ধেকই যদি ফি হিসেবে কেটে রাখা হয় তবে সেক্ষেত্রে ডেভেলপাররা হরাইজন ওয়ার্ল্ডসের জন্য কাজ করতে নিরুৎসাহিত হবেন বলে ধারণা করছে সাইটটি।
তবে, আন্তর্জাতিক বাজারে অভিষেকের সময় নির্মাতার আয় থেকে কেটে রাখা ভাগের আকার ছোট করে আনতে পারে মেটা– এমন ধারণা প্রকাশ করেছে সিএনবিসি।