আইফোন ও আইপ্যাডে শিশু যৌন হয়রানিমূলক ছবি শনাক্ত করতে পারবে এমন স্বয়ংক্রিয় টুল আনার ঘোষণা দিয়েছিল অ্যাপল। এখন প্রতিষ্ঠানটি বলছে, তাদের সে ঘোষণা “খুব বাজেভাবে ভজঘট” পাকিয়ে ফেলেছে।
Published : 14 Aug 2021, 03:28 PM
বড় পরিসরে ঘোষণাটিকে “ভুল বুঝা” হচ্ছে বলেও জানিয়েছে মার্কিন এ প্রযুক্তি জায়ান্ট। “আমরা ভাবছি এটি সবার জন্য যদি আরেকটু পরিষ্কারভাবে সামনে আসতো।” - ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের কাছে সম্প্রতি এমন মন্তব্যই করেছেন অ্যাপলের সফটওয়্যার প্রধান ক্রেইগ ফেডেরিঘি।
ঘটনার পর ফেডেরিঘির মনে হয়েছে, একই সময়ে দুটি ফিচার নিয়ে আসার কারণেই এ বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
মূল ঘটনা এ মাসের শুরুর দিকের। অগাস্টের পাঁচ তারিখে নতুন ছবি শনাক্ত সফটওয়্যার আনবে বলে জানায় অ্যাপল। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল, আইক্লাউড স্টোরেজে কোনো পরিচিত অবৈধ ছবি আপলোড হলে, ওই সফটওয়্যারটি তা শনাক্ত করে অ্যাপলকে জানিয়ে দেবে। খবর প্রকাশের পরপরই এ বিষয়ে সরব হয়ে উঠেন গোপনতা সমর্থকরা। তারা দাবি করেন, অ্যাপল নিজেদের সফটওয়্যারে নিরাপত্তা ‘ব্যাকডোর’ তৈরি করছে।
সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন হোয়াটসঅ্যাপ প্রধান উইল ক্যাথকার্ট এবং এপিক গেইমস প্রধান টিম সুইনি-ও। ক্যাথকার্ট বলেছিলেন, অ্যাপল “নজরদারি প্রক্রিয়া” নিয়ে আসছে। অন্যদিকে, সুইনি মন্তব্য করেছিলেন, “সরকারি স্পাইওয়্যার” ইনস্টল করছে অ্যাপল।
আদতে নতুন টুলগুলো কী?
শিশুদের সুরক্ষায় দুটি নতুন টুল আনার ঘোষণা দিয়েছিল অ্যাপল। এর একটি হলো ‘ছবি শনাক্তকরণ’, অন্যটি ‘মেসেজ ফিল্টারিং’। শুরুতে টুল দুটির আসার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রে।
অ্যাপল জানিয়েছিল, ছবি শনাক্তকরণ টুলটি পরিচিত শিশু যৌন হয়রানি উপাদান বা ‘চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউস ম্যাটিরিয়াল’ (সিএসএএম) শনাক্ত করতে পারবে। আইক্লাউড স্টোরেজে ছবি আপলোডের পর টুলটি সেখানে পরিচিত সিএসএএম উপাদান খুঁজবে।
‘ইউএস ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়েটেড চিলড্রেন’ (এনসিএমইসি) -এর এ ধরনের অবৈধ শিশু হয়রানিমূলক ছবির একটি ডেটাবেজ রয়েছে। ছবিগুলোকে ‘হ্যাশ’ বা ‘সংখ্যাসূচক কোড’ হিসেবে সংরক্ষণ করে তারা। এক কথায় বলা যায়, অবৈধ উপাদানগুলোর ডিজিটাল “আঙুলের ছাপ” রয়েছে এনসিএমইসি’র কাছে।
মানুষ সিএসএএম শেয়ার করছে কি না তা নিশ্চিত করতে ফেইসবুক, গুগল এবং মাইক্রোসফটের মতো ক্লাউড সেবাদাতারা বর্তমানে এ ধরনের ‘হ্যাশ’ বা ‘সংখ্যাসূচক কোড’ পরীক্ষা করে দেখে। অ্যাপলও ওই দলে যোগ দিতে চেয়েছিলো, কিন্তু কিছুটা ভিন্নভাবে। আইক্লাউডে আপলোড হওয়ার আগেই ব্যবহারকারীর আইফোন ও আইপ্যাডে কাজটি করতে চেয়েছিলো প্রতিষ্ঠানটি।
ফেডেরিঘি জানিয়েছেন, পর্নোগ্রাফি অনুসন্ধান বা কারো শিশু সন্তানের গোসলের ছবির মতো উপাদান খুঁজে দেখবে না আইফোন। তাদের সিস্টেমটি শুধু সুনির্দিষ্টভাবে পরিচিত শিশু যৌন হয়রানির ছবির “অবিকল আঙুলের ছাপ” মেলাতে সক্ষম।
যদি কোনো ব্যবহারকারী শিশু হয়রানির ওই ডিজিটাল ছাপের সঙ্গে মিলে যায় এরকম একাধিক ছবি আপলোডের চেষ্টা করেন, তাহলে তাদের অ্যাকাউন্ট ‘ফ্ল্যাগড’ হয়ে যাবে, যাতে অ্যাপল ওই সুনির্দিষ্ট ছবিগুলো পর্যালোচনা করে দেখতে পারে।
ফিচারটি সচল হওয়ার জন্য ব্যবহারকারীকে এরকম প্রায় ৩০টি ছবি আপলোড করতে হবে বলেও উল্লেখ করেছেন ফেডেরিঘি।
অ্যাপলের দ্বিতীয় সুরক্ষা টুলটি হলো মেসেজ ফিল্টারিং। এ ফিচারটি অনেকটা শিশুদের অ্যাকাউন্টের জন্য ‘প্যারেন্টাল কন্ট্রোল’ হিসেবে আসবে বলে জানিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। এটি সচল থাকলে সিস্টেম নিজে থেকেই আইমেসেজ অ্যাপে শিশুদেরকে পাঠানো ছবি বা শিশুদের পাওয়া ছবি খতিয়ে দেখবে।
যদি মেশিন লার্নিং সিস্টেমটি মনে করে কোনো ছবিতে নগ্নতা রয়েছে, তাহলে সেটি সে ছবিটিকে অস্পষ্ট করে দেবে এবং শিশুকে সে ব্যাপারে সতর্ক করবে। কোনো শিশু এরপরও ছবিটি দেখার চেষ্টা করছে কি না তা জানার জন্য অভিভাবকরাও সতর্ক অ্যালার্ট পাওয়ার অপশন চালু করে রাখতে পারবেন।
সমালোচনা
গোপনতা সমর্থকদের আপত্তির মূলে রয়েছে ভিন্ন একটি বিষয়। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, এ প্রযুক্তির পরিসর বাড়তে পারে এবং স্বৈরাচারী সরকাররা নিজ নিজ নাগরিকদের উপর নজরদারি চালাতে এটি ব্যবহার করতে পারে।
ফেডেরিঘি বলছেন, তাদের ঘোষণার পরপর চারিদিকে “শোরগোল” ছড়িয়ে পড়ে অ্যাপল ছবির জন্য আইফোন স্ক্যান করবে। “এটা কিন্তু হচ্ছে না।” – যোগ করেছেন তিনি।
“আমরা যা করছি সেটি নিয়ে আমরা অত্যন্ত ইতিবাচক এবং দৃঢ় অবস্থানে রয়েছি এবং আমরা দেখতে পাচ্ছি লোকজন এটিকে বড় পরিসরে ভুল বুঝছেন।” – বলেছেন ফেডেরিঘি।
এ বছরের শেষের দিকে আইওএস এবং আইপ্যাডওএস –এর নতুন সংস্করণে যোগ হওয়ার কথা রয়েছে টুল দুটির।